টানা দরপতনের প্রেক্ষিতে প্রতিটি সিকিউরিটিজের ফ্লোর প্রাইস (দাম কমার সর্বনিম্ন সীমা) বেঁধে দেওয়ার পর রোববার (৩১ জুলাই) শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হয়েছে। একদিনেই প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে ১৫৩ পয়েন্ট। আর বাজার মূলধন বেড়েছে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার ওপরে।
এর আগে, ঈদের পর শেয়ারবাজারে টানা দরপতন দেখা দিলে বড় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বৈঠক করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ওই বৈঠকে বড় বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে বাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর আশ্বাস দেওয়া হয়।
কিন্তু তাতেও দরপতন বন্ধ না হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার ফ্লোর প্রাইস চালুর সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। শেষ পাঁচ কার্যদিবসের ক্লোজিং প্রাইসের গড় দাম প্রতিটি সিকিউরিটিজের ফ্লোর প্রাইস হিসেবে বেঁধে দেওয়া হয়। এই ফ্লোর প্রাইস কার্যকর হয়েছে আজ (রোববার) থেকে।
ফ্লোর প্রাইসের কারণে প্রতিটি সিকিউরিটিজের দাম সমন্বয় করায় আজ শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার আগেই সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়ে যায়। ফলে লেনদেন শুরুর আগেই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বাড়ে ৩৬ পয়েন্ট।
আর লেনদেন শুরু হতেই একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার পালে আরও হাওয়া লাগে। এতে লেনদেনের ১৫ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ১০০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। সময়ের সঙ্গে দাম বাড়ার প্রবণতা বাড়তে থাকায় সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতাও বাড়তে থাকে।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ৩৬২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে সাতটির এবং ১৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৫৩ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ১৩৩ পয়েন্টে উঠে এসেছে।
প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি বড় উত্থান হয়েছে অপর দুই সূচকেরও। এর মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ৪৮ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৯৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৩১ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৩৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার কারণে একদিনেই ডিএসইর বাজার মূলধন ১০ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা বেড়ে গেছে। বাজার মূলধন বাড়ায় অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সিকিউরিটিজের দাম সম্মেলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়ে গেছে। অবশ্য এর আগে টানা পতনে মাত্র ১৩ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলদন ২৬ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা কমে যায়।
মূল্যসূচকের বড় উত্থান হওয়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৫৬৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৪৪১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ১২৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ২৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা কেডিএস এক্সসরিজের ২০ কোটি ৭৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ১৯ কোটি ৪২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে মতিন স্পিনিং।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ওরিয়ন ইনফিউশন, ইনট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন, ফরচুন সুজ, স্কয়ার টেক্সটাইল, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সোনালী পেপার এবং শাইনপুকুর সিরামিকস।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৩৭৯ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৮৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৬৭টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে চারটির এবং ১২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।