দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সদ্য সমাপ্ত সংলাপ থেকে প্রাপ্ত সুপারিশ পর্যালোচনা করে শিগগিরই একটি কৌশলপত্র প্রস্তুত করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আর এই কৌশলপত্র নিয়ে বিশেষ সংলাপে বসবে সংস্থাটি।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন মহলের কাছ থেকে পাওয়া প্রস্তাবগুলো নিয়ে তারা পর্যালোচনা শুরু করে দিয়েছেন। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই খসড়াটি চূড়ান্ত করা হবে। এরপর ফের গণমাধ্যম, শিক্ষাবিদ, বিশেষজ্ঞ জন ও দলগুলোকে ডাকা হবে। এক্ষেত্রে ডাকা হবে প্রথম সংলাপে সাড়া না দেওয়া বিএনপিকেও।
বিশেষ সংলাপটি অনুষ্ঠিত হবে দিনব্যাপী। সেখানে সবাই একমঞ্চেই থাকবে। এক্ষেত্রে প্রত্যেক গ্রুপ থেকে চার-পাঁচ জন করে অংশ নেবে। সংলাপে কৌশলপত্রটি উপস্থাপন করে অংশীজনের কাছ থেকে মতামত নেওয়া হবে। এরপর সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত কৌশলপত্র প্রণয়ন করবে নির্বাচন কমিশন।
তিন ধরনের সুপারিশ এসেছে:
সাবেক এই ইসি সচিব বলেন, সংলাপ থেকে আসা প্রস্তাবে তথ্য ঘাটতি (ইনফরমেশন গ্যাপ) আছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে কিছু বলা যাবে না। আমরা সব রেকর্ড রেখেছি। এখন পর্যালোচনা করছি। তিন ধরনের সুপারিশ করেছে। কিছু কিছু সুপারিশ আছে সংবিধান ও আইনের মধ্য থেকে করতে হবে। কিছু কিছু সুপারিশ আইনের পরিবর্তন নিয়ে। আর কিছু কিছু আছে ইসির এখতিয়ারের মধ্যে নয়। সেটা নিয়ে কিভাবে কী করবো, তা যখন আলাপ-আলোচনা করবো তখন সিদ্ধান্ত নেবো। তখন হয়তো আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবগুলো পাঠিয়ে দেবো। তবে এখনো আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি।
তিনি বলেন, বিষয়টা হলো যে নির্বাচন কিন্তু বেশ দূরে। অনেক পরিবর্তন হয়তো আসবে। আগামী বছরের অক্টোবর, নভেম্বরের দিকে নির্বাচনের পরিবেশ কেমন হবে তখন বোঝা যাবে। মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করা, একটু পরিচিত হওয়া, মন খোলে যেন আলোচনা করতে পারে, এজন্য আমরা খোলামেলা ভাবে প্রাথমিক আলোচনা করেছি।
‘আগের কমিশন আগে রোডম্যাপ করে আলোচনা করেছেন। আমরা আলোচনা করে রোডম্যাপ করবো। ’ বলেন কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের এ কমিশনার।
মো. আলমগীর বলেন, এমন কিছু সুপারিশ করেছে, যে কারিগরিভাবে পরিবর্তন আনা। সেটা হয়তো আমরা করতে পারবো না। একজন বলেছেন অনলাইনে ভোট নেওয়ার জন্য। এটা তো এখনই পারবো না। অর্থনৈতিক দিক থেকে পারবো কি-না, এসব আলোচনা করতে করতে যেটা বাস্তব, সেটা হয়তো আমরা নেবো। অন্যগুলো হয়তো বাদ রাখতে হবে। আপনি হয়তো খুব ভালো পরামর্শ দিয়েছেন, সেটা হয়তো এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। যেগুলো সম্ভব সেগুলো হয়তো আমরা নেবো। পরবর্তীতে আবার সংলাপ হবে। এই রোডম্যা্প করার পরে আপনাদের সঙ্গে আবার আসবে বিশেষ আলোচনা। সেই রাউন্ড কিন্তু আমাদের সামনে রয়েছে। সেই রাউন্ডে আসবে যে আপনারা এইটা করতে বলেছিলেন, আমরা তো করতে চাচ্ছি। কিন্তু এগুলোতে এই চ্যালেঞ্জ আছে, এখন বলেন আমরা কী করবো। কীভাবে এই চ্যালেঞ্চ মোকাবেলা করবো।
তিনি বলেন, তখন হয়তো পাঁচটা গ্রুপ একসঙ্গে বসে আলোচনা হবে। প্রত্যেক গ্রুপ থেকে হয়তো কয়েকজন করে আসবে। এক্ষেত্রে যেই দাবিগুলো খুব বেশি, সেগুলো নিয়ে হয়তো আলোচনা হবে। এবারের মতো বিভিন্ন মহলের সঙ্গে পৃথক পৃথক নয়। দিনব্যাপী আলোচনা হয়তো হবে।
বিএনপিকে আবার অবশ্যই ডাকবো। আমাদের কাছে সবার গুরুত্ব সমান। কেউ ছোট না, কেউ বড় না। যখনই প্রয়োজন হবে ডাকব। শুধু তাই নয়, যখন কোনো দল আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে চাইবে আমরা বসবো।
বিএনপির নির্বাচনে না আসার ঘোষণা নিয়ে সঙ্কটকে রাজনৈতিক সঙ্কট হিসেবেই দেখছে ইসি। এবং এ সঙ্কট মোকাবেলা রাজনৈতিকভাবেই করতে হবে। আর নির্বাচনকালীন সরকার নিয়েও তারা কোনো মন্তব্য করবেন না বলে জানান এ নির্বাচন কমিশনার।
তিনি বলেন, বিশেষ সংলাপে আমাদের কৌশলপত্রে উদ্দেশ্যে, লক্ষ্য, সুবিধা-অসুবিধা, অর্থ সংক্রান্ত বিষয়, লোকবল, চ্যালেঞ্জ ইত্যাদি থাকবে। যে চ্যালেঞ্জগুলো আছে, সেগুলো কিভাবে মোকাবেলা করতে পারি, তা নিয়েই আলোচনা হবে।
মিডিয়ার সাপোর্ট চাইবে ইসি:
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে নির্বাচন কমিশনার আলমগীর বলেন, আমাদের মিডিয়ার সাপোর্টও লাগবে। আপনারা হয়তো সব চাওয়া পূরণ করতে পারবেন না। আমরা যদি ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্রে কভারেজ চাই, আপনারা হয়তো দিতে পারবেন না। তো এইসব নিয়েই বিশেষ সংলাপে আলোচনা হবে।
খসড়াটা নিয়ে শেয়ার করবো যে দেখেন, কোনো সাজেশন আছে কি-না। লজিক্যালি যদি বলতে পারেন এটা বাদ দিতে হবে। আমরা বাদ দেবো।
ক্যান্টনমেন্ট খালি করে ফেললেও সব কেন্দ্রে সেনা হবে না:
সংলাপে সেনা বাহিনীর বিপক্ষে কেউ বলে নি উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনার আলমগীর বলেন, …যেমন একটা রানৈতিক দলের একজন প্রস্তাব দিল সবকেন্দ্রে সেনা বাহিনী দেওয়ার জন্য। তখন আমি উনাকে একটা পাল্টা প্রশ্ন করেছিলাম, যে সব কেন্দ্রে দিতে গেলে আপনি কি জানেন যে ৪০ হাজার কেন্দ্র আছে। তো ৪০ হাজার কেন্দ্রে যদি আমরা যদি সেনা দিতে চাই কত আর্মি দরকার? আমাদের তো এতো অফিসার এবং আর্মি নাই। তখন আমরা কী করবো? তখন ক্যান্টমেন্ট খালি করে দিলেও, নৌ-বাহিনী, বিমান বাহিনী দিলেও তো হবে না। তখন তিনি বললেন, যে না না, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে দেবেন। ঝূকিপূর্ণ কেন্দ্রে দিলেও তো হিসেব করতে হবে। কত লাগবে …এগুলো তো বললে হবে না তো ভাই। একটা জিনিস তো হিসেব-নিকেষ করা লাগবে।
গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করে। এক্ষেত্রে গত ১৩ মার্চ দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী, ২২ মার্চ নাগরিক সমাজ, ৬ এপ্রিল প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক/সিনিয়র সাংবাদিক, ১৮ এপ্রিল ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রধান নির্বাহী/প্রধান বার্তা সম্পাদক/সিনিয়র সাংবাদিক, ৯ জুন নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধি এবং ১২ জুন নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মতবিনিময় করে ইসি। এরপর গত ১৭ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করে সংস্থাটি। এতে ২৮টি দল অংশ নিলেও বিএনপিসহ ৮ টি দল অংশ নেয়নি। দু’টি দল পরবর্তীতে সময় চেয়েছে।
এছাড়া প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ইভিএম যাচাই করার জন্য গত ২৫ মে, এবং রাজনৈতিক দলগুলো সঙ্গে ১৯, ২১ ও ২৮ জুন তিন দফায় বৈঠক করে ইসি। সে সময়ও বিএনপিসহ ১১টি দল সাড়া দেয়নি। এদের সঙ্গে আলোচনায় পাওয়া প্রস্তাবগুলো নিয়েই এবার কৌশলপত্র পত্র প্রণয়ন করছে নির্বাচন আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষটি।