নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে প্রতিটি সিকিউরিটিজের ফ্লোর প্রাইস (দামের সর্বনিম্ন সীমা) বেঁধে দেওয়ার পর শেয়ারবাজারে মূল্য সূচকের টানা উত্থান প্রবণতা দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের গতি।
সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবার (২ আগস্ট) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ৭৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠান। এতে প্রধান মূল্য সূচক বেড়েছে প্রায় একশ পয়েন্ট। আর লেনদেন হয়েছে হাজার কোটি টাকার ওপরে। এর মাধ্যমে ডিএসইতে আড়াই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেনের ঘটনা ঘটেছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পাশাপাশি অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে সবকটি মূল্য সূচক।
এর আগে শেয়ারবাজারে টানা দরপতন দেখা দিলে গত বৃহস্পতিবার প্রতিটি সিকিউরিটিজের ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। ২৪ থেকে ২৮ এই পাঁচ কার্যদিবসের ক্লোজিং প্রাইসের গড় দাম করা হয় প্রতিটি সিকিউরিটিজের ফ্লোর প্রাইস। চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার থেকে কার্যকর হয় এই ফ্লোর প্রাইস।
ফ্লোর প্রাইসের কারণে দাম সমন্বয় করায় রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতেই সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়ে যায়। আর লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা। এতে টানা পতন থেকে বেরিয়ে একদিনেই ডিএসইর প্রধান সূচক বাড়ে ১৫৩ পয়েন্ট।
সোমবারও শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখীর দেখা মিলে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্য সূচক ৩০ পয়েন্ট বাড়ার পাশাপাশি লেনদেন বেড়ে ৯১২ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। একই সঙ্গে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখায় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান।
এ পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ৭ পয়েন্ট বেড়ে যায়। আর লেনদেনের আধাঘণ্টার মাথায় সূচকটি বাড়ে ১৯ পয়েন্ট। এরপর লেনদেনের সময় যত গড়িয়েছে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ততো বেড়েছে। সেই সঙ্গে বড় হয়েছে দাম বাড়ার তালিকা।
এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ২৯০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৬টির এবং ৫৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৮৫ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২৪৯ পয়েন্টে উঠে এসেছে।
প্রধান মূল্য সূচকের পাশাপাশি বড় উত্থান হয়েছে অপর দুই সূচকের। এর মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ৩০ পয়েন্ট বেড়ে দুই হাজার ২৩৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ১৫ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৩৬২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
মূল্য সূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ১৮৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৯২১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ২৬১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। লেনদেন শুধু আগের দিনের তুলনায় বাড়েনি, চলতি বছরের ১০ মে’র পর ডিএসইতে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে। ১০ মে ডিএসইতে এক হাজার ২৫৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়। এরপর ডিএসইতে আর সাড়ে এগারো’শ কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়নি।
এমন লেনদেন বাড়ার দিনে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ৯০ কোটি ২৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফরচুন সুজের ৮৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৫৫ কোটি ৩২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- সোনালী পেপার, মালেক স্পিনিং, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, কেডিএস এক্সসরিজ এবং শাহিনপুকুর সিরামিকস।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ২০৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ২৯৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৯৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৭টির এবং ৬৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।