শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতি ছিল শোষিতের গণতন্ত্রের পক্ষে। স্বাধীন বাংলাদেশ সাম্রাজ্যবাদী ও পরাজিত শক্তি মেনে নিতে পারেনি তাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল।
অনুষ্ঠানে পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম, বাংলাদেশ অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিলের দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. গোলাম শাহি আলম এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং সংশ্লিষ্টরা অংশ নেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির বিপরীত ধারা সামরিক স্বৈরাচার, অপরাজনীতি, ধর্মকে ক্ষুদ্র ও হীনস্বার্থে ব্যবহার করার রাজনীতি। রাজনীতি একটি ইতিবাচক বিষয়। কিন্তু রাজনীতির এই ভিন্ন ধারায় আদর্শিক কিছু খুঁজে পাওয়া যায়নি। আওয়ামী লীগ যে আদর্শের রাজনীতি করে, তা উদার মানবতাবাদী, অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি, সেই রাজনীতির বিরোধিতা করা ভিন্ন ধারার রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। অর্থাৎ পুরোটাই নেতিবাচক। একটি আদর্শের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান। তাদের নিজস্ব কোনও আদর্শিক অবস্থান খুঁজে পাওয়া যায় না। তারা নিজেদের আদর্শকে সামনে আনছেন না।
কারণ মানুষ হত্যা করা ষড়যন্ত্র করা, আগ্নিসন্ত্রাস করা এগুলো কোনও আদর্শ হতে পারে না, এগুলো রাজনীতির উপাদান হতে পারে না। বঙ্গবন্ধু এই অপরাজনীতির বিপক্ষে দাঁড়িয়ে মানুষের অধিকারের পক্ষে, অসাম্প্রদায়িক গণতন্ত্রের পক্ষে রাজনীতি করেছেন। সর্বভারতীয় রাজনীতিতে কিংবদন্তি নেতাদের বঙ্গবন্ধু দেখেছেন। সেই পরিবেশের মধ্য থেকে টুঙ্গিপাড়ার খোকা আমাদের জাতির জন্য আলোকবর্তিকা হয়ে এসেছেন। দেশভাগের ঠিক আগে আগে তার রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং শরত বোস, তাদের একটি প্রস্তাব ছিল— স্বাধীন যুক্ত বাংলার, সেটি হয়নি। ’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘যখন পাকিস্তান তৈরি হলো, পাকিস্তান কাঠামোর মধ্যে বাঙালির অধিকার কখনই বাস্তবায়িত হবে না, এটি বঙ্গবন্ধু একেবারে গোড়াতেই বুঝেছিলেন। বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্রের চিন্তা গোড়া থেকেই তার মনের মধ্যে ছিল। বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্রের চেহারা কেমন হবে সেটির রূপরেখা আমরা বঙ্গবন্ধুর মধ্যে দেখতে পাই। ’
দীপু মনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে সাড়ে তিন বছরের মাথায় হত্যা করা হলো। কেনো হত্যা করা হলো? কেউ বলেন, কতিপয় বিপথগামী সেনা সদস্য, শুধুমাত্র কি বিপথগামী সেনা সদস্য? যারা বলেন, হয় তারা না বুঝে বলেন, তা না হলে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বলেন। আসল কুশীলবদের আড়াল করার জন্য বলেন। তখন বিশ্ব দুইভাগে বিভক্ত ছিল। বঙ্গবন্ধু নিজেই বলেছিলেন, বিশ্ব আজ দুইভাগে বিভক্ত। একদিকে শোষক আরেকদিকে শোষিত।
বঙ্গবন্ধু শোষিতের গণতন্ত্রের পক্ষে ছিলেন। তিনি শোষিতের গণতন্ত্রের কথা বলেছিলেন। তিনি সেই সময়ের সাম্রাজ্যবাদীদের শক্তির সমস্ত প্রচেষ্টাকে নষ্ট করে দিয়ে বাঙালিকে দিয়ে সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলেন। সেটি সাম্রাজ্যবাদীরা মেনে নিতে পারেননি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যদি তার শোষিতের গণতন্ত্র সাফল্যের জায়গায় পৌঁছে যায়, তাহলে সাম্রাজ্যবাদীদের নাক কাটা যায়, তাদের পরাজয় হয়, সেটি তারা মেনে নিতে পারেনি। তখন যেভাবে বিভিন্ন দেশে জাতীয়তাবাদী নেতাদের হত্যা বা ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল। নেতাদের হত্যা করে সামরিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল এবং সেইসব দেশের সম্পদগুলো প্রায় চিরদিনের মতোই বহুজাতিক কোম্পানির হাতে চলে গিয়েছিল।
তা থেকেই আমরা বুঝতে পারি কেনও বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল। প্রথমত তারা চেয়েছিল প্রতিশোধ নিতে, দুই বাংলাদেশের ওপর তাদের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে। এখানে সাম্রাজ্যবাদের ষড়যন্ত্র, পাকিস্তানের পরাজিত অপশক্তির ষড়যন্ত্র আর তাদের দোসর বাঙালির চেহারায়, বাঙালির নামে, বাঙালির পরিচয়ে কিন্তু তা মনে প্রাণে পাকিস্তানি, তাদের ষড়যন্ত্র ছিল।