এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে নেপাল ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সন্দিপ লামিচানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি ফরোয়ানা জারি করেছে দেশটির আদালত। গ্রেফতারি ফরোয়ানা জারির সঙ্গে সঙ্গে তাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধও ঘোষণা করেছে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব নেপাল (সিএএন)। আইনি বিষয়ে যেন কোনো প্রভাব বিস্তার না হয়, এ কারণেই লামিচানেকে নিষিদ্ধ করার কথা জানায় সিএএন।
লামিচানে এমন এক ক্রিকেটার, যিনি নেপালের হয়েও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিচিতি। নেপালের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আইপিএলে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। ছিলেন বিগ ব্যাশ ক্রিকেটেও। যে সময় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি ফরোয়ানা জারি করা হলো এবং সিএএন অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ করে, সে সময় তিনি খেলছিলেন ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল)।
বৃহস্পতিবারই জানা যায়, কাঠমান্ডুর পুলিশ স্টেশনে আগেই এক নাবালিকা লামিচানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন। এবার কাঠমান্ডুর আদালত তার নামে গ্রেফতারের ফরোয়ানা জারি করলো। বর্তমানে লামিচানে জ্যামাইকা তালাওয়াসের হয়ে সিপিএল খেলার উদ্দেশ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজে রয়েছে। জ্যামাইকা এর মধ্যে তিনটি ম্যাচ খেলে ফেললেও, তাকে মাঠে নামানো হয়নি।
জ্যামাইকা তালাওয়াহস এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, সন্দিপ লামিচানেকে তাড়া ছেড়ে দিয়েছে। খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছেড়ে তাকে দেশে ফিরে আসতে হবে।
কাঠমান্ডু পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২২ অগস্ট নেপাল ক্রিকেট দলের কেনিয়া সফরের আগে লামিচানে ওই কিশোরীকে ভক্তপুরে ঘুরতে যাওয়ার অনুরোধ করেন। কিশোরী রাজি হন। রাতে ওই কিশোরী মধ্য বানেশ্বরে নিজের হোস্টেলে ফিরে যেতে চাইলেও লামিচানে বাধা দেন।
হোস্টেল আটটার মধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হোটেলে লামিচানের সঙ্গে রাত কাটাতে বাধ্য হন ওই কিশোরী। প্রথমে তিনি আলাদা ঘরে থাকতে চান। সেটাও হতে দেননি লামিচানে। পরিবর্তে নিজের ঘরে ডেকে এনে ওই কিশোরীকে দু’বার ধর্ষণ করেন তিনি। কিশোরীর বাবা-মা অভিযোগ জানানোর পর পুলিশ তদন্ত করে এই তথ্য জানতে পেরেছে।
অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। বিভিন্ন রকম তথ্য সংগ্রহ করছে। হোটেলের টিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখছে। সম্পূর্ণ তথ্য সংগ্রহ না করে এ ব্যাপারে পুলিশ কিছু মন্তব্য করতে নারাজ।
তবে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেন লামিচানে। টুইটার এবং ইনস্টাগ্রামে দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমি নির্দোষ এবং নেপালের আইনের উপর আমার পুরো বিশ্বাস আছে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি সিপিএল থেকে বেরিয়ে যাব ও কয়েকদিনের মধ্যে নেপাল চলে যাব। আমি সব ভিত্তিহীন অভিযোগের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত। আশা করি নির্দোষের প্রতি বিচার হবে এবং সঠিক তদন্ত হবে। আশা করব আইন সবার জন্য সমান হবে।’
ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব নেপাল (সিএএন) -এর সেক্রেটারি প্রশান্ত ভিক্রম মল্ল বলেন, ‘লামিচানের ওপর বোর্ডের দেয়া এ নিষেধাজ্ঞা তদন্ত ও বিচার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।’
২০১৬ সালে নেপালের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক করা হয় লামিচানেকে। ২০১৮ সালে নেপালের জাতীয় দলে সুযোগ পান তিনি। সে বছরই আইপিএলে দিল্লি ক্যাপিটালস কিনে নেয় তাকে।
২০২১ সালে নেপালের জাতীয় দলের অধিনায়ক জ্ঞানেন্দ্র মল্লকে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়। সে জায়গায় দলের অধিনায়ক করা হয় লামিচানেকে।
আইপিএল ছাড়াও বিভিন্ন দেশে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগ খেলেছেন লামিছানে। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে বার্বাডোজ ট্রাইডেন্টস, জামাইকা তালাওয়াজ ও সেন্ট কিট্স অ্যান্ড নেভিস প্যাট্রিয়টস, বিগ ব্যাশে হোবার্ট হারিকেনস ও মেলবোর্ন স্টার্স, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে সিলেট সিক্সার্স, পাকিস্তান ক্রিকেট লিগে লাহোর কলন্দর্সের হয়ে খেলেছেন এই ডানহাতি স্পিনার।