1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০০ অপরাহ্ন

ডলারসংকটেও ৩৪০ শতাংশ মুনাফা সিটি ব্যাংকের

রিপোর্টার
  • আপডেট : সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২

দেশে চলমান ডলারসংকটের মধ্যেও আগ্রাসীভাবে মুনাফা করেছে দেশের বেশ কিছু ব্যাংক। এর মধ্যে ৩৪০ শতাংশ মুনাফা করেছে বেসরকারি খাতের দি সিটি ব্যাংক। সুযোগ থাকলেও ডলার বাজারে না ছেড়ে কৃত্রিমভাবে দর বাড়ানোর অভিযোগ রয়েছে এই ব্যাংকের বিরুদ্ধে। এলসি খুলতে ডলারপ্রতি ক্ষেত্র বিশেষে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত লাভ করেছে। তারা ডলার সংরক্ষণের তথ্যও গোপন করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) নির্দেশ ছাড়া কোনো সিদ্ধান্তই নেওয়া যায় না। তাই সংকটকে পুঁজি করে ডলারে অস্বাভাবিক মুনাফা করে বাজার অস্থিতিশীল করায় গত ১৭ আগস্ট সিটি ব্যাংকসহ আরো ছয় ব্যাংকের এমডিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ডলার কারসাজি করে অতিরিক্ত মুনাফা করার প্রমাণ মেলায় এমডিদের কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। প্রতিটি ব্যাংক পরিদর্শন করা হবে। যদি প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, কোন ব্যাংক কী পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা সংরক্ষণ করতে পারবে, তার একটি সীমা (এনওপি—নেট ওপেন পজিশন) নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। আগে ব্যাংকের রেগুলেটরি ক্যাপিটালের ২০ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি মুদ্রা সংরক্ষণ করার সুযোগ ছিল। ডলার বাজারের অস্থিরতা কমাতে গত ১৫ জুলাই তা কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এ সীমার বেশি ডলার হাতে থাকলে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা অন্য কোনো ব্যাংকের কাছে বিক্রি করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে ব্যাংকগুলোর। কিন্তু বেশিরভাগ ব্যাংক প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার মজুদ করেছে। সংকট সৃষ্টি করে সেই ডলার চড়া দামে আবার বিক্রিও করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভাষায়, ডলার লেনদেন থেকে ‘আগ্রাসীভাবে’ মুনাফা অর্জনের মাধ্যমে ডলারসংকট তীব্র করে মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন থেকে সর্বোচ্চ মুনাফা করা ব্যাংকের মধ্যে সিটি ব্যাংক ৩৪০ শতাংশ বা ১৭৬ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। গত বছরের একই সময়ে ব্যাংকটির এই খাতে মুনাফার পরিমাণ ছিল ৪০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, সম্প্রতি ডলারের দাম ১২০ টাকা পর্যন্ত বাড়লে ১২টি ব্যাংক এই সুযোগ কাজে লাগায়। এ কারণে গত ক্যালেন্ডার বছরের একই সময়ের তুলনায় ব্যাংকগুলো এক হাজার ৪২৭ কোটি টাকা বেশি মুনাফা করেছে, যা আগের বছরে ছিল মাত্র ৪৬৫ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে দি সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাসরুর আরেফিন জানান, ‘চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ডলার কেনাবেচায় মুনাফা ছিল ১৫০ কোটি টাকা, যা ৭ আগস্ট পর্যন্ত ১৪৩ কোটি টাকায় নেমেছিল। ’

বাংলাদেশ ব্যাংকের শোকজের বিষয়ে জানতে চাইলে মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘অস্থির মুদ্রাবাজার পরিস্থিতির কারণে আমাদের নিরুপায় হয়েই বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হয়েছিল। আন্ত ব্যাংক মার্কেট বন্ধ থাকায় ব্যাংকের আমদানি ব্যয় শোধ করার জন্য এসব করেছিলাম। এটা আমাদের অনিচ্ছাকৃত ভুল ছিল, তাই বাংলাদেশ ব্যাংককে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখতে বলেছি। ’

অনুসন্ধানে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনে মুনাফায় প্রবৃদ্ধি ছিল খুবই কম। এই সময়েই মূলত ডলার মজুদ করেছে ব্যাংকগুলো। ডলারের তীব্র সংকট শুরু মে মাস থেকে। ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাংকগুলোর বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ব্যাংক যে দরে ডলার কিনবে, বিক্রি করবে সর্বোচ্চ এক টাকা বেশি দরে। তবে কোনো ব্যাংক তা মানেনি। বরং ডলারের বাজার আরো অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে।

শুরুতে ডলারসংকটের অজুহাতে এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খুলতে অস্বীকৃতি জানায় বেশিরভাগ ব্যাংক। ওই সময় আন্তঃ ব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দর ছিল ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা। ওই সময় ঋণপত্র (এলসি) খুলতে ব্যাংকগুলো বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ডলারপ্রতি ৯০ থেকে ৯৫ টাকা পর্যন্ত আদায় করে। আর মাঝারি ও ছোট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আদায় করেছে ৯৮ টাকা পর্যন্ত। এলসি খুলতে এসব ব্যাংক ডলারপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত লাভ করেছে। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার সংরক্ষণ করে বেশি দামে বিক্রি করার সরাসরি নেতৃত্ব দিয়েছেন ব্যাংকগুলোর ট্রেজারি বিভাগের প্রধানরা।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, ডলারে অস্বাভাবিক মুনাফার তালিকায় থাকা অন্য ব্যাংককেও তদারকির আওতায় আনা হচ্ছে। এরই মধ্যে এসব ব্যাংকের কাছে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের তথ্য চাওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ডলার বিক্রির অতিরিক্ত মুনাফা ব্যাংকগুলো তাদের আয় খাতে নিতে পারবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

দি সিটি ব্যাংক আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে ১৯৮৩ সালের ২৭ মার্চ। ব্যাংকটি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে নিবন্ধিত।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি