ক্রিকেটে বিতর্কিত নিয়মগুলোর মধ্যে অন্যতম ম্যানকাডিং আউট। বোলার বোলিং অ্যাকশন শেষ করার আগেই নন স্ট্রাইকার যদি পপিং ক্রিজ ছেড়ে যান, তাহলে স্ট্যাম্প ভেঙে দিয়ে তাকে রানআউট করা হলে সেটিকে ম্যানকাডিং বলা হয়। ভারতের সাবেক ক্রিকেটার ভিনু ম্যানকাডের নামানুসারে এই নাম দেওয়া হয়েছে।
এতোদিন ধরে এ আউটকে খেলার স্পিরিটের পরিপন্থী হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এমনকি ক্রিকেটের নিয়মে এটিকে অনৈতিক হিসেবেও উল্লেখ করা রয়েছে। তবে এই অবস্থান থেকে সরে এসেছে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি। এখন থেকে ম্যানকাড আউটও সাধারণ রানআউটের মতোই গণ্য হবে।
মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে এ পরিবর্তনের কথা জানিয়েছে আইসিসি। পাশাপাশি ক্রিকেটের নিয়মে আরও একগাদা পরিবর্তন আনা হয়েছে। যা আগামী ১ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে। সৌরভ গাঙ্গুলির নেতৃত্বাধীন আইসিসির ক্রিকেট কমিটির সুপারিশকর্মে এসব নিয়ম চালু করা হচ্ছে।
এক অক্টোবর থেকে যেসব নতুন নিয়ম কার্যকর হচ্ছে
ক্যাচ আউটে ব্যাটারের অবস্থান
এতোদিন ধরে চলমান নিয়মে ক্যাচ আউটের বেলায় বলটি ফিল্ডারের হাতে বন্দী হওয়ার আগে দুই ব্যাটার যদি নিজেদের ক্রস করে ফেলেন, তাহলে নতুন ব্যাটার ননস্ট্রাইক প্রান্তে খেলা শুরু করেন। তবে এখন থেকে নতুন নিয়মে আর এটি হবে না। নতুন ব্যাটার সবসময় আউট হওয়া ব্যাটারের প্রান্তেই ব্যাটিং শুরু করবে।
ক্রিকেট বলে লালার ব্যবহারে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা
করোনাকালীন সময়ে সংক্রমণ রোধে ক্রিকেট বলে লালার ব্যবহার নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল আইসিসি। কোনো দল এ ভুল একবার করলে তাদের সতর্ক করে দেওয়া হতো। দ্বিতীয়বার করলে বোলার ও অধিনায়ককে দেওয়া হতো শাস্তি। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও লালার ব্যবহার স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।
ব্যাটিং শুরুর জন্য কমলো সময়
এখন থেকে ওয়ানডে ও টেস্টে কোনো ব্যাটার আউট হওয়ার পর দুই মিনিটের মধ্যে নতুন ব্যাটারকে প্রথম বল খেলার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। আগের নিয়মে ওয়ানডে ও টেস্টে ব্যাটাররা এক্ষেত্রে তিন মিনিট সময় পেতেন। অন্যদিকে টি-টোয়েন্টিতে আগের মতোই তিন মিনিট বহাল থাকছে।
পিচ ব্যবহারের ব্যাটারের অধিকার
যেকোনো ডেলিভারি মোকাবিলা করার জন্য ব্যাটারের ব্যাট অথবা শরীরের যেকোনো অংশ পিচের ভেতরেই থাকতে হবে। অন্যথায় এটি ডেড বল হিসেবে গণ্য হবে। একইভাবে বোলারের কোনো ডেলিভারি যদি ব্যাটারকে পিচের বাইরে নিয়ে যায় তাহলে সেটি নো বল ডাকা হবে।
ফিল্ডিং দলের অনৈতিক জায়গা পরিবর্তন
কোনো বোলার তার রানআপ শুরু করে দেওয়ার পর ফিল্ডিং দল তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে পারবে না। এখন থেকে এটি ধরা পড়লে ফিল্ডিং দলকে পাঁচ রান পেনাল্টি দেওয়া হবে, পাশাপাশি সেই ডেলিভারিটি ডেড বল ঘোষণা করা হবে।
নন স্ট্রাইকারকে ম্যানকাডিং আউটের বৈধতা
এতোদিন ধরে ম্যানকাডিং আউটকে স্পিরিট পরিপন্থী বিবেচনা করা হতো। এমনকি ক্রিকেটের নিয়মে এটিকে অনৈতিক হিসেবেও উল্লেখ করা রয়েছে। তবে এই অবস্থান থেকে সরে এসেছে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি। এখন থেকে ম্যানকাড আউটও সাধারণ রানআউটের মতোই গণ্য হবে।
স্ট্রাইকারকে রানআউটের চেষ্টা বাতিল
এতোদিন ধরে চলা নিয়মে কোনো বোলার যদি বোলিং করার সময় পপিং ক্রিজে ঢোকার আগেই দেখেন স্ট্রাইকিং প্রান্তের ব্যাটার ডাউন দ্য উইকেটে চলে এসেছে, তাহলে বল না করে থ্রো করে ব্যাটারকে রানআউট করতে পারে। নতুন নিয়মে এই চেষ্টা করা যাবে না। এটি করা হলে ডেলিভারিটি ডেড বল ঘোষণা করা হবে।
হাইব্রিড পিচ ব্যবহারের অনুমোদন
এখন থেকে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর সম্মতির ভিত্তিতে যেকোনো ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচে হাইব্রিড পিচ ব্যবহার করা যাবে। এতোদিন ধরে শুধুমাত্র নারীদের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে হাইব্রিড পিচ ব্যবহারের অনুমতি ছিলো। কোনো টুর্নামেন্টের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পিচের ব্যবহার অভিন্ন রাখতে এখন থেকে সব ম্যাচেই এটি ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, হাইব্রিড পিচ বলতে বোঝায় কৃত্রিম পিচ। এসব পিচ সাধারণত প্রাকৃতিক ঘাস ও সিনথেটিক ফাইবারের সমন্বয়ে বানানো হয়। হাইব্রিড পিচে আগে থেকেই ঠিক করে নেওয়া হয় এটি স্পিন/পেস/ব্যাটিং সহায়ক হবে কি না। তাই এ পিচের ব্যবহার কিছুটা হলেও ব্যাটারদের স্বস্তি দেবে।
ম্যাচ চলাকালে পেনাল্টি শুরু ওয়ানডেতেও
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে স্লো ওভার রেটের পেনাল্টি ম্যাচের মধ্যেই দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ইনিংস শেষ করতে না পারলে বৃত্তের বাইরে একজন কম ফিল্ডার নিয়ে খেলতে হয় ফিল্ডিং দলকে। চলতি বিশ্বকাপ সুপার লিগ শেষে ওয়ানডে ক্রিকেটেও এটি শুরু করা হবে।
এসব নিয়মের সুপারিশ করা আইসিসি ক্রিকেট কমিটির সদস্যরা হলেন চেয়ারম্যান সৌরভ গাঙ্গুলি, পর্যবেক্ষক রমিজ রাজা, সাবেক খেলোয়াড় হিসেবে মাহেলা জয়াবর্ধনে ও রজার হার্পার, বর্তমান খেলোয়াড়দের প্রতিনিধি হিসেবে ড্যানিয়েল ভেট্টোরি ও ভিভিএস লক্ষ্মণ, কোচদের প্রতিনিধি হিসেবে গ্যারি স্টিড, আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধি হিসেবে জয় শাহ, আম্পায়াদের প্রতিনিধি হিসেবে জো উইলসন, সহযোগী দেশগুলোর প্রতিনিধি হিসেবে কাইল কোয়েৎজার, মিডিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে শন পল, সাবেক কর্মকর্তা হিসেবে জিওর অ্যালার্ডাইস, কমিটির সেক্রেটারি ক্লাইভ হিচক ও পরিসংখ্যানবিদ ডেভিড কেনডিক্স।