করোনাভীতি আমাদের আগের চেয়ে অনেক বেশি স্বাস্থ্য-সচেতন করেছে। ইমিউনিটির গুরুত্ব মানুষ বুঝেছেন। কিন্তু ইমিউনিটিকে কেন্দ্র করে কিছু ভুল ধারণা আমাদের মধ্যে এসে পড়েছে। ইমিউনিটি বেশি হলে করোনা হবে না এই বিশ্বাস থেকে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ভিটামিন খেয়ে যাচ্ছেন।
সাধারণ মানুষ জানেন না, তার শরীরে কোন ভিটামিন কতটা প্রয়োজন। সেই কারণে অতিরিক্ত ভিটামিন সেবন অন্য সমস্যা তৈরি করছে, যা হয়তো তিনি এখন বুঝতে পারছেন না। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অযথা ভিটামিন নয়। চাইলে টেস্ট করিয়ে দেখে নিন, শরীরে ভিটামিনের মাত্রা। একটি উপাদান হয়তো আপনার শরীরের জন্য কাজে এল। কিন্তু বাকি উপাদানের অতিরিক্ত প্রবেশ সমস্যা তৈরি করতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তিনি রোগ বুঝে ওষুধ এবং সেটি কত দিন খাওয়া যাবে, তা বলে দেবেন।
গেল এক বছরে ভিটামিন সি, ডি এবং বাজারচলতি ইমিউনিটি বুস্টার ট্যাবলেট খেয়েছেন অনেকেই। কিন্তু একটা কথা আমরা ভুলে যাচ্ছি, কোনও ভিটামিনই একনাগাড়ে তিন মাসের বেশি খাওয়া উচিত নয়। কারও শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি তৈরি হলে একটা কোর্স করার পরে পরীক্ষা করে দেখে নিতে হয় ঘাটতি কতটা পূরণ হয়েছে।
ভিটামিনের রকমফের:
ভিটামিন দু’ধরনের— ফ্যাট সলিউবল এবং ওয়াটার সলিউবল ভিটামিন। দ্বিতীয় ভিটামিনটি অতিরিক্ত খেলে তেমন সমস্যা হয় না। কারণ অতিরিক্ত ভিটামিন প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। সমস্যা তৈরি করে ফ্যাট সলিউবল ভিটামিন। আমাদের শরীর থেকে ফ্যাট বেরোনোর কোনও প্রক্রিয়া নেই। তাই অতিরিক্ত ফ্যাট সলিউবল ভিটামিন শরীরের বিভিন্ন অংশে জমে গিয়ে অন্যান্য রোগ ডেকে আনে।
অতিরিক্তের কুফল:
শুধু করোনার সময় না অনেক নারীরাই সন্তানধারণ বা মেনোপজ়ের পরে শরীরে ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন হয়, এই ধারণা থেকে অনেকে ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম খেয়ে থাকেন। শরীরে ক্যালসিয়াম অ্যাবজ়র্ব করার কাজ করে ভিটামিন ডি। অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম রক্তে মিশতে না পেরে জমা হয়ে যায়। পরে হিতে বিপরীত হতে পারে। অতিরিক্ত ভিটামিন ডি শরীরের জন্য টক্সিক। রক্তে ক্যালসিয়াম থাকলেই যে সেটা হাড়ে পৌঁছবে, তা নয়। এজন্য ডিএমডি টেস্টের প্রয়োজন। ভিটামিন সি-এরও কুফল আছে। এতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে, যা কিডনির সমস্যা ডেকে আনতে পারে।
ভুল ধারণা :
ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্য আদা, কাঁচা হলুদ খেয়ে থাকেন অনেকে। আমাদের শরীরের জন্য ৫ গ্রাম আদা এবং ৩ গ্রাম হলুদের বেশি প্রয়োজন নেই, যা রোজকার রান্না থেকেই পেয়ে থাকি। আলাদা করে আদা-হলুদ না খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। অতিরিক্ত আদা বুক জ্বালা, অ্যাসিডের কারণ হতে পারে। হলুদে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস থাকে। কিন্তু হলুদের মধ্যে এমন উপাদান আছে, যা শরীরকে আয়রন অ্যাবজ়র্ব করতে বাধা দেয়। অনেকে সকালে গরম জলে পাতিলেবুর রস আর মধু মিশিয়ে খান। কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, মধু গরম পানিতে দ্রাব্য নয়। তাই ওই ভাবে খেলে কোন উপকার হয় না।
তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে শরীরের চাহিদা বুঝে ভিটামিন খেতে হবে। সাপ্লিমেন্টস না নিয়ে রোজকার খাবারের মধ্য দিয়ে ভিটামিনের চাহিদা মেটানোই সবচেয়ে ভাল উপায়।
সূত্র: আনন্দবাজার