রাজধানীর কল্যাণপুরের আলমগীর হোসেন গতকাল সকালে বাজারে যাচ্ছিলেন। তার স্ত্রী জাকিয়া তাকে যে বাজারের তালিকা ধরিয়ে দেন সেখানে নিত্যপণ্যের সঙ্গে মাঝারি আকারের মোমবাতির প্যাকেট অন্তর্ভুক্ত ছিল। আলমগীর স্ত্রীর কাছে মোমবাতির বিষয়ে জানতে চাইলে জাকিয়া বলেন, ‘সন্ধ্যার পর থেকে যেভাবে লোডশেডিং শুরু হয় তাতে রিচার্জেবেল লাইট দিয়ে শুধু হবে না, বাচ্চাদের পড়ালেখা ও রাতের খাবার শেষ হওয়া পর্যন্ত মোমবাতির দরকার হয়।’
বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় দেশব্যাপী শুরু হওয়া এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের কারণে দীর্ঘদিন পর আবারও বিদ্যুৎহীন থাকতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে। দিনে-রাতে বেশ কয়েক ঘণ্টার ঘন ঘন এই লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন। ভ্যাপসা গরম থেকে রেহাই পেতে এবং রাতের অন্ধকারে কাজ চালিয়ে যেতে নগরবাসী আবারও মোমবাতি, আইপিএস, জেনারেটর, রিচার্জেবল ফ্যান ও লাইটের ব্যবহার শুরু করছে। অনেক বছর ধরে এই পণ্যগুলো নিয়মিত ব্যবহার হতো না। তবে জুলাই মাসে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ে পণ্যগুলোর ব্যবহার আবার শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে গত ৪ অক্টোবরের গ্রিড বিপর্যয়ের পর লোডশেডিং পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। এই অবস্থায় পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে বিক্রি বেড়েছে মোমবাতির। আর ইলেকট্রনিক পণ্যের দোকানে রিচার্জেবল ফ্যান ও লাইটের চাহিদা এতই তুঙ্গে যে দোকানিরা ক্রেতার চাহিদা মেটাতে পারছেন না। এই অবস্থায় উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোও এসব পণ্যের দাম অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু উপায় না পেয়ে ঢাকাবাসী বাধ্য হয়েই বাড়তি দামে এসব পণ্য কিনছেন। মিরপুর ১০ নম্বর এলাকার মুদি দোকানি মো. টিটু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত তিন-মাস ধরে হঠাৎ করে মোমবাতির চাহিদা বেড়ে গেছে। এর আগে দোকানে মোমবাতি রাখতাম না। লোডশেডিং শুরু হওয়ার পর থেকে এখন দোকানে সর্বনিম্ন ৫ টাকা থেকে ১০০ টাকা দামের মোমবাতি বিক্রি করছি। আকার ভেদে প্রতিদিনই ৫০ থেকে ১০০ টাকা মোমবাতি বিক্রি হচ্ছে। মিরপুর ১২ নম্বরের মোল্লা মার্কেটের ইলেকট্রনিক পণ্যের দোকানে গতকাল কয়েকজন ক্রেতাকে রিচার্জেবল ফ্যান ও লাইটের দামাদামি করতে দেখা যায়। ক্রেতাদের একজন জাকির আহমেদ বলেন, গভীর রাতে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে বাচ্চারা কান্নাকাটি শুরু করে। লাইট না থাকলে ভয় পায়। ওদের কথা চিন্তা করে এই পণ্য কিনতে এসেছি। সচ্ছল মানুষ গরমে ভোগান্তি এড়াতে আইপিএস কিনছেন। রাজধানীর গুলিস্তান ও নবাবপুরের ইলেকট্রনিক পণ্যের ব্যবসায়ীরা জানান, আইপিএস ও চার্জার ফ্যানের বিক্রি গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। এমনকি দিনে তারা ৫০ থেকে ৬০টি চার্জার ফ্যান বিক্রি করছেন। সাধারণত বাজারে একটি চার্জার ফ্যান তিন থেকে সর্বোচ্চ ৭ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ব্যাটারির সক্ষমতা বিবেচনায় একটি আইপিএস ৮ থেকে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই মার্কেটের মাহাদি ইলেকট্রিকের আনোয়ার হোসেন মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের বেশি বিক্রি হচ্ছে চার্জার ফ্যান ও লাইট। গত দুই-তিন মাস ধরেই এগুলোর চাহিদা ভালো। এগুলোর দামও অনেকাংশে বেড়েছে। কোম্পানিভেদে যে ফ্যানের পাইকারি দাম ২ হাজার ৭০০ টাকা ছিল। এখন তা বেড়ে ৪ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া যে চার্জার লাইটের দাম ২০০ টাকা ছিল সেটি এখন ১০০ টাকা বেড়ে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা এতই বেশি যে আমরা কোম্পানি থেকে কাক্সিক্ষত পণ্য পাচ্ছি না। ধারণা করছি কোম্পানিগুলোর কাছে পণ্য থাকা সত্ত্বেও তারা সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। এতে বেশি মূল্যে পণ্য বিক্রির জন্য তারা বাজারে পণ্য ছাড়েনি।