পেন্ডুলামের মতো দুলছিল ম্যাচটি। কখনো জয়ের পাল্লা পাকিস্তানের দিকে আবার কখনো ভারতের দিকে। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে উপস্থিত প্রায় লাখ দর্শক তখন দারুণ উৎকণ্ঠায়। শেষ পর্যন্ত শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচটি ভারতই জিতে নেয়।
শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৬ রান। কোহলি-বীরত্বে সেটাই তুলে নেয় ভারত, মহারণে শেষ হাসি হাসে চার উইকেটের ব্যবধানে।
১৬০ রানের লক্ষ্যে শুরুতে বিপদে পড়ে যায় ভারত। ঠিক সেই জায়গা থেকে ম্যাচ বের করে তারা বিজয়ের হাসি হেসেছে শেষ বলে।
রোমাঞ্চকর ম্যাচটা জমে উঠে শেষ ওভারে। ৬ বলে প্রয়োজন পড়ে ১৬ রান। প্রথম বলে হার্দিক পান্ডিয়া ক্যাচ তুলে ফেরায় ভারতের পক্ষে বাজি ধরার লোক হয়তো তখন খুঁজে পাওয়া যেত না। কারণ, তখনও ম্যাচটা পাকিস্তানের হাত থেকে ফসকে যায়নি। পরের বলে সিঙ্গেল ও তৃতীয় বলে ২ রান দেওয়া নওয়াজ ভুল করে বসেন চতুর্থ বলে। তার দেওয়া ফুলটস বলটি হয়ে যায় নো বল; আর কোহলি সেই সুযোগে সেটি সীমানার ওপাড়ে পাঠান অনায়াসেই! মোট সাত রান আসায় ম্যাচটা তখন আয়ত্ত্বেও চলে আসে ভারতের। অবশ্য এই নো বলের সিদ্ধান্ত নিয়ে পাকিস্তান শিবিরে কিছুটা উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। পরের বলে ওয়াইড দিয়ে ম্যাচটা আরও ভারতের দিকে ঠেলে দেন নওয়াজই। তখনও ফ্রি হিট অক্ষত থাকায় ওই ডেলিভারিতে কোহলিকে বোল্ড করেছিলেন নওয়াজ। কিন্তু ভুলে যান যে এই ডেলিভারিতে কেউ আউট নন। সেই সুযোগে ভারত ৩ রান তুলে নিয়ে জয়ের সব আয়োজন সম্পন্ন করে ফেলে। পরের বলে নওয়াজ দিনেশ কার্তিককে বোল্ড করলেও শেষ ডেলিভারিটি আবার ওয়াইড দিয়ে ম্যাচটা টাই করতে ভূমিকা ছিল পাকিস্তানি স্পিনারের। শেষ বলে এক রান নিয়ে ৬ উইকেট হারানো ভারত ম্যাচটা ঠিকই জিতে নিয়ে মাঠ ছেড়েছে।
টস জিত পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে ভারত শুরুর নিয়ন্ত্রণ নিতে পেরেছিল। পাওয়ার প্লের মাঝে তুলে নিতে পারে দুই ভয়ঙ্কর ওপেনার বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের উইকেট।
দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে আরশদ্বীপ সিংয়ের ফুলার লেংথের বলে এলবিডাব্লিউ পাকিস্তান অধিনায়ক (০)। চতুর্থ ওভারে তারই শর্টার লেংথের বলে তালুবন্দি হন রিজওয়ান (৪)। দুই নির্ভরযোগ্য ব্যাটারের বিদায়ে যারা মনে করেছিলেন লড়াই হয়তো এখানেই শেষ। তাদের জন্য ভিন্ন বার্তা বয়ে আনেন শান মাসুদ ও ইফতিখার আহমেদ। দুজনের ৭৬ রানের জুটি চ্যালেঞ্জিং স্কোরের ভিত গড়ে দিয়েছে শেষ পর্যন্ত।
ঝড়ো গতিতে খেলেছেন মূলত ইফতিখার। ৩৪ বলে ৫১ রান করেছেন দুটি চার ও ৪ ছক্কায়। এই জুটি থাকলে বিপদ বাড়ার সম্ভাবনাই ছিল। কিন্তু ইফতিখারকে ফিরিয়ে সেই সম্ভাবনার সমাপ্তি টেনেছেন মোহাম্মদ সামি। দারুণ এই জুটি ভেঙে ভারতীয় দল আবারও ম্যাচে ফেরার বার্তা দিয়েছিল। দ্রুত সময়ে শাদাব খান (৫), হায়দার আলী (২), মোহাম্মদ নওয়াজ (৯), আসিফ আলীকে (২) বিদায় দিয়ে ১৬.৪ ওভারে ১২০ রানে তুলে নেয় ৭ উইকেট। তার পরেও পাকিস্তানের রান চাকা থামানো যায়নি।
শান মাসুদ প্রান্ত আগলে ইনিংসটাকে সঠিক দিশা দিতে অবদান রেখেছেন। কঠিন চাপের সময়ে সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছেন শাহীন আফ্রিদি। ৮ বলে ১ চার ও ১ ছক্কায় ১৬ রান করেছেন। হারিস রউফও ১ ছক্কায় স্কোরটাকে চ্যালেঞ্জিং বানাতে ভূমিকা রেখেছেন। তাতে ৮ উইকেটে ১৫৯ রান করে পাকিস্তান দল। ৫২ রানে অপরাজিত মাসুদের ৪২ বলের ইনিংসে ছিল ৫টি চার।
হার্দিত পান্ডিয়া ৩০ রানে নেন ৩ উইকেট। ৩২ রানে তিনটি নেন আরশদ্বীপ সিংও। একটি করে উইকেট নে ভুবনেশ্বর কুমার ও মোহাম্মদ সামি।