করোনা ভাইরাসের টিকা গ্রহণ করবেন কি না তা নিয়ে অনেকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন। ক্যানসার, ডায়াবেটিস, কিডনি, নিউরোলজিক্যাল ও লিভারের রোগীরা টিকা নিলে সমস্যা হয় কি না সেই আতঙ্কে আছেন। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপসহ নানা রোগে আক্রান্তরা টিকা গ্রহণ নিয়ে অনুরূপ দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, কারো যদি অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকে, মুমূর্ষু রোগী বা খুব বেশি অ্যালার্জি আছে তারা ব্যতীত সবাই করোনার টিকা নিতে পারবেন। যত দ্রুত টিকা নেবেন তত দ্রুত সুরক্ষিত থাকবে নিজেসহ তার পরিবার ও প্রতিবেশীরা। এসব রোগী করোনায় আক্রান্ত হলে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। বেঁচে থাকলেও নানা জটিলাতায় ভোগেন। যা পরবর্তীকালে বেঁচে থাকাটাও যন্ত্রণাদায়ক। তাই তাদের টিকা নেওয়া জরুরি বলে বিশেষজ্ঞরা জানান।
এদিকে, ১৮ বছরের কম বয়সিদের ওপর এখনো ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়নি, তাই তাদের করোনার টিকা দেওয়া যাবে না। গর্ভবতী বা শিশুদের বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন—এমন মায়েদের ভ্যাকসিন আপাতত দেওয়া যাবে না। যাদের বয়স অন্তত ৪০ বছর হয়েছে, তারাও সোমবার থেকে করোনা ভাইরাসের টিকা নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন। এতো দিন ৫৫ বছরের বেশি বয়সি নাগরিক এবং সম্মুখসারিতে থাকা বিভিন্ন পেশাভিত্তিক শ্রেণি অথবা বিশেষ শ্রেণির নাগরিকরাই সুরক্ষা প্ল্যাটফরমের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে (www.surokkha.gov.bd) টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারছিলেন। টিকার জন্য নিবন্ধনের ঐ বয়সসীমা শিথিলের জন্য সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুশাসন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ১৮ বছরের নিচে, গর্ভবতী মা, দুগ্ধশিশু, যাদের বেশি অ্যালার্জি-অ্যামজা আছে ও মুমূর্ষু রোগীরা করোনার টিকা নিতে পারবেন না। বাকি সবাই টিকা নিতে পারবেন এবং টিকা নেওয়া তাদের জন্য জরুরি।
মুগদা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য জটিল ও মারাত্মক রোগে আক্রান্তরা ছাড়া সবাই করোনার টিকা নিতে পারবেন। কিডনি, ক্যানসার ও উচ্চ রক্তচাপ ও নিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রোগীরা করোনার টিকা নিতে পারবেন।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামালউদ্দিন বলেন, সব ধরনের হৃদরোগে আক্রান্তদের করোনার টিকা নেওয়া জরুরি। না নেওয়াটা ক্ষতিকর। কিডনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নিজাম উদ্দিন বলেন, কিডনি রোগীদের করোনার টিকা নিতে কোনো সমস্যা নেই।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম বলেন, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক ও প্যারালাইসের রোগীসহ যে কোনো নিউরো রোগীর করোনার টিকা নিতে কোনো সমস্যা নেই। টিকা নেওয়াটা জরুরি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) লিভার বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) বলেন, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত রোগীদের ৪০ থেকে ৪২ ভাগই মারা যান। তবে যে কোনো লিভারের রোগীর করোনার টিকা নিতে সমস্যা নেই। বরং টিকা নেওয়া জরুরি।
তিনি বলেন, এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের লিভার সিরোসিস কোভিড-১৯ ট্রাস্কফোর্সের একদল গবেষক বলেন, লিভারের রোগীদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার অনেক বেশি ঝুঁকি থাকে। তাই লিভার রোগীদের টিকা নেওয়া উচিত। তিনিও গবেষক দলের একজন সদস্য।