1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫১ পূর্বাহ্ন

মেসির বিশ্বকাপে আজ নামছে আর্জেন্টিনা

রিপোর্টার
  • আপডেট : মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর, ২০২২

ফের একবার স্বপ্নের বিশ্বকাপ জয়- যা আসব আসব করেও কেটে গেছে ৩৬টি বছর। একটিবার মেসির হাতে সোনালি ট্রফি- তাও পাশ কাটিয়ে গেছে একবার। এভাবেই আক্ষেপ আর অপেক্ষা যে প্রজন্মের সন্তাপ বাড়িয়েছে, এবার তাদের জন্যই মেসির শেষ আরাধনা। আজ নিজের জন্যও মেসির অন্যরকম এক বোধন, যে মহাযজ্ঞে তিনি খুঁজে এনেছেন ২৬টি নীল পদ্ম। ‘এখানে আমরা যে ২৬ জন, তাদের অনেকেরই প্রথম বিশ্বকাপ। তারা প্রত্যেকেই দারুণ খেলোয়াড়। তাদের বলেছি, দেখ পরের বিশ্বকাপে তুমি নাও থাকতে পার। হয়তো এটাই তোমার শেষ বিশ্বকাপ। আমারও এটাই শেষ। সবাইকে তাই এমন কিছু করতে হবে, যাতে করে তোমরা গর্ব করতে পার। তোমরাই এগিয়ে নিয়ে যাবে আর্জেন্টিনাকে।’ হেডফোনে স্প্যানিশের ইংলিশ ভার্সন শুনলেও প্রেস কনফারেন্সে মেসির মুখের হাসি বলে দিচ্ছিল এবার বেশ গুছিয়েই কাতারে এসেছেন। আর এভাবেই নিজের শেষ বিশ্বকাপের প্রথম শুরু আজ তাঁর সৌদি আরবের বিপক্ষে।
মেসিকে নিয়ে এখানে এতটাই মাতামাতি, কাতারে আসা মেসির দেশীয় সাংবাদিকদের অনেকেই ‘দেসপেদিদো লিউও…’ বলে পিটিসি দিচ্ছে। গুগল ট্রান্সলেটে শব্দ দুটি দিয়ে উদ্ধার করা গেল, তাঁরা আসলে এই বিশ্বকাপকে ‘ফেয়ারওয়েল লিও’ বলেই ধরে নিয়েছেন। ফুটবলবিশ্বও জানে, এটাই তাঁর সুযোগ ট্রফি স্পর্শ করার। শুধু জানে না কতটা ফিট, মানসিকভাবে কতটা চাঙ্গা আছেন এই ফুটবল জাদুকর। গতকাল অনুশীলনে সল্ফ্ভ্রমের দূরত্ব আর ভীতির সংকট কাটিয়ে যতটা কাছাকাছি পৌঁছানো গেছে, তাতে অন্তত এটা বলা যায়, লিওনেল মেসি তৈরি। তিনি প্রস্তুত বিসর্জনের বিশ্বকাপে বিজয়ের সুর তুলতে। প্রতিপক্ষ হিসেবে সৌদি আরব কতটা শক্তিশালী, তা নিয়ে আলোচনা করার খুব বেশি কিছু নেই। শুধু এটুকু জানালেই চলবে, র‌্যাঙ্কিংয়ে সৌদি আরব ৫১ আর আর্জেন্টিনা ১। এটা ঠিক, সৌদি আরব তাদের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ১৮টি ম্যাচের মধ্যে হেরেছে মাত্র একটিতে। তার পরও আজকের ম্যাচে একটি রেকর্ড নিয়ে বরং বেশি আলোচনা চলছে কাতারে। ২০১৯ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৩৬ ম্যাচে হারের মুখ দেখেনি আর্জেন্টিনা। মাঝে ব্রাজিলকে হারিয়ে কোপা আমেরিকা জিতেছে। ইতিহাস বলছে, ৩৭ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড রয়েছে শুধু ইতালির। আজ সৌদি আরবের সঙ্গে ড্র করলেই ইতালির সেই রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলবে আর্জেন্টিনা। ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা ৩৭ ম্যাচ অপরাজেয় ছিল ইতালি। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ব্রাজিলেরও ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড ছিল। তবে আজ সেসব রেকর্ড ভাঙার সুযোগ রয়েছে আর্জেন্টিনার।
মেসির নিজেরও একটি রেকর্ড হাতছানি দিচ্ছে কাতারে। ক্রিকেটের ভাষায় বললে, সেঞ্চুরির হাতছানি। ক্লাব আর জাতীয় দল মিলিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ৯৯৬ ম্যাচ খেলেছেন মেসি। বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের তিনটির সঙ্গে শেষ ষোলোর একটি খেলতে পারলেই সেঞ্চুরি করবেন। ভক্তদের ভয় তার আগে যেন ইনজুরির মতো খারাপ কিছু না ঘটে তাঁর সঙ্গে। আর এ ব্যাপারটি নিয়ে আর্জেন্টিনার অন্দরমহলেও বেশ সতর্কতা রয়েছে। কাতারের গরমে চোট আঘাতে ভয় রয়েছে তাঁদের। মেসিদের মূল চ্যালেঞ্জই হচ্ছে কাতারের গরম। এখানকার স্টেডিয়ামগুলোতে বসে খেলা কাভার করার অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, মাঠের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রগুলো মরুর হুলকা ঠেকিয়ে রাখতে বেশ কঠোর। তার পরও আজ মেসিদের ম্যাচ কাতার সময় দুপুর ২টায়। গতকাল বিকেল ৩টায় অনুশীলন করতে গিয়ে কপালে হাত দিয়ে সূর্যের রোদ ঠেকাতে দেখা গেছে ডি মারিয়াদের। আজও মাঠের একটা দিকে রোদ থাকবে। তবে কাতারে আসার আগে আবুধাবিতে ক’দিন এই কন্ডিশনেই থেকেছেন তাঁরা। ম্যাচ খেলেছেন আরব আমিরাতের বিপক্ষে। ৫ গোল দিয়েছিলেন আমিরাতকে। আজ গোলের ব্যবধান কত হবে, সেটা নিয়েই মিডিয়া সেন্টারে বিদেশি সাংবাদিকরা কুইজের মতো প্রশ্ন ছুড়ছিলেন। এশিয়ার দলগুলোর সঙ্গে লাতিন বা ইউরোপের পার্থক্যটা যে ঠিক কত, তা প্রথম দিন কাতার ও গতকাল বুঝেছে ইরান।
আর্জেন্টিনার মিডিয়ার কাছে আজকের ম্যাচের কৌতূহল বরং কোচ স্কালোনির শুরুর একাদশ নিয়ে। মেসির পাশে আক্রমণভাগে লাওতারো মার্টিনেজ থাকবেন নাকি অন্য কেউ? মিডফিল্ড সাজানো হবে কোন কৌশলে। কোচ কি ৪-৪-২ ফরমেশনই ঠিক করে রেখেছেন? যদি তাই হয়, তাহলে মাঝমাঠে ডি মারিয়ার সঙ্গে আর কে কে থাকবেন? পারদেস আর ডি পল নিশ্চিতভাবেই থাকছেন আর্জেন্টিনা কোচের প্রথম পছন্দের তালিকায়। তাহলে বাকিজন কে? ডিফেন্সে মলিনা, অ্যাকুনা, রোমেরোও থাকছেন। তাহলে বাকিজন কি মার্টিনেজ? আজকের ম্যাচে ঠিক এসব নিয়েই মিডিয়া সেন্টারের বিদেশি সাংবাদিকরা প্রিভিউয়ের প্লট তৈরি করেছেন। অনুশীলনে বরাদ্দ ১৫ মিনিটের সেশনে উপস্থিত থেকে কোনো ক্যামেরাই স্কালোনির কৌশল আন্দাজ করতে পারেনি। এদিন মেসির পর সংবাদ সম্মেলনে এসেও কৌশল নিয়ে মুখ খোলেননি স্কালোনি। শুধু জানিয়েছেন, তাঁর দলের প্রত্যেকেই ফিট রয়েছে বিশ্বকাপ মিশনে নিজেদের তুলে ধরার জন্য।
আসলে ছোট ছোট ব্যাপার মিডিয়ার সামনে কোনোভাবেই আসতে দিতে চান না কোচ। মেসি নিজেও তা চান না। এই যে দু’দিন অনুশীলনে ছিলেন না বলে মেসিকে নিয়ে যে গুঞ্জন, গতকালও কেন আসেননি? শুনতে হয়েছিল তাঁকে। এবার উত্তর দিয়েছেন তিনি। ‘দেখুন এবার বিশ্বকাপ হচ্ছে ক্লাব লিগের মধ্য পর্যায়ে। আমরা প্রত্যেকেই ক্লাব ফুটবল খেলে এখানে এসেছি। আগে জুন-জুলাইয়ে বিশ্বকাপের সময় আমরা কিছু সময় পেতাম বিশ্রাম নেওয়ার। এবার সেই সময় পাইনি। তাই বলতে পারেন ইনজুরি থেকে সতর্ক থাকার কারণে আমি নিজেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতে মনে হয়, আমাকে বেশ চাঙ্গা লাগছে? কি বলুন।’ স্বদেশিদের হাসিয়ে নিজেও হেসে নিলেন। জীবনের শিক্ষা থেকে শেষ একটি কথা বললেন, ঠিক দার্শনিকের মতো- ‘দেখুন, বয়স আপনাকে অনেক কিছু ভিন্নভাবে ভাবতে শেখায়। আগে যেসব ছোট জিনিস আপনি গুরুত্ব দেননি, সেটাই হয়তো এখন আপনার কাছে গুরুত্ব পায়। আমি এখন প্রতিটি ব্যাপারকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে পারি এবং সবকিছুই ভীষণভাবে উপভোগ করি।’
কিসের ইঙ্গিত দিলেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে সেই রহস্যের উদ্ঘাটন করতে লেগে যায় আর্জেন্টাইন মিডিয়া। কেউ বলেন, প্রত্যাশার চাপ নিয়ে আর ভেঙে পড়বেন না; কেউ বলেন, এবার মেসির বিশ্বকাপ খেলতে নামছে আর্জেন্টিনা। বিদায়ী উপহারটা তাঁকে দিতেই হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি