‘রাজনৈতিক দলগুলোর ভারসাম্য না থাকলে পুলিশ-মিলিটারি দিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্যভাবে উঠিয়ে আনা সম্ভব হবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
‘রাজপথে শক্তি দেখিয়ে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক নির্বাচন হবে না’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।’সিইসি বলেন, ‘সরকারের আন্তরিক সদিচ্ছা ভিত্তিক সহায়তা যদি না থাকে তাহলে নির্বাচনটাকে একটা কাঙ্খিত মাত্রায় সফল করা হয়তো সম্ভব হবে না।’
বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সিইসি এসব কথা বলেন।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘কয়েকদিন আগেও বড় দলের তিনজন সিনিয়র নেতা বলেছেন, আমি নাম বলব না, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ডায়লগ অপরিহার্য। নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যদি কিছু মতৈক্য না থাকে তাহলে নির্বাচন কমিশন সুন্দর নির্বাচন দিতে পারবে না। দলগুলোর অবশ্যই সহায়তা লাগবে। সমঝোতাই সৃষ্টি করে দিতে পারে সুন্দর নির্বাচন আয়োজনের অনুকূল পরিবেশ। একই সঙ্গে স্বচ্ছ পদ্ধতি হলেই নির্বাচনটা গ্রহণযোগ্য হবে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ফের ডায়াগলের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেই। তবে ডায়ালগ যত করা যায় ভালো। যেমন একটা বড় রাজনৈতিক দল কয়েকদিন আগেও বলেছেন ডায়ালগের বিষয়ে।’
আইন সংস্কারে মন্ত্রণালয়ের সাড়া না পাওয়ার বিষয়ে সিইসি বলেন, ‘এখনো সাড়া আসেনি তবে সাড়া আসবে না সেটা বলছি না। আমরা পাঠিয়েছি, আমার বিশ্বাস সরকার সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন। আমরা মনে করি আমরা যৌক্তিক বিষয়টাই পাঠিয়েছি, আমার মনে হয় না সরকার সেটা অগ্রাহ্য করবেন। আমরা আরও কিছু দিন দেখি। তারপর সরকারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব।’
‘সরকারের একটা ভিন্ন সত্তা আছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সরকারের যে মিনিস্ট্রিগুলো এবং ডিপার্টমেন্টগুলো আছে, যাদের আমাদেরকে সহায়তা করতে হবে, তাদের দিক থেকে যদি আন্তরিক সদিচ্ছা ভিত্তিক সহায়তা না থাকে তাহলে নির্বাচনটাকে একটা কাঙ্খিত মাত্রায় সফল করা হয়তো সম্ভব হবে না। তাদের সহযোগিতা থাকলে নির্বাচনটা অধিক সুন্দর ও সফল হবে। এজন্যই রাজনৈতিক নেতারা ডায়ালগের প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন।’
দলগুলোর মধ্যে ডায়ালগ হচ্ছে না উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘আমরা দেখছি দলগুলোর মধ্যে ডায়ালগ হচ্ছে না। এটা হওয়া খুব প্রয়োজন। রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে আমরা আমাদের আবশ্যক সহায়তা প্রত্যাশা করি।’
সিইসি বলেন, ‘আমাদের এই বক্তব্যগুলো যদি গণমাধ্যমের মাধ্যমে তাদের (রাজনৈতিক দল) কাছে যায়, তাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আছে তারাও একটু চিন্তা করবেন।’
‘রাজপথে শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে সুন্দর নির্বাচন হবে এটা বিশ্বাস করি না’ এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এখন সব দলই বলতে চাচ্ছে, রাজপথে দেখা হবে, রাজপথে শক্তি পরীক্ষা হবে। সিইসি হিসেবে আমি বলব রাজপথে শক্তি প্রদর্শন করে রাজপথে শক্তি দেখিয়ে সত্যিকারের যে গণতান্ত্রিক নির্বাচন সেটা হবে না।’
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে সিইসি বলেন, ‘আপনাদেরকে নির্বাচনে আসতে হবে। নির্বাচনের মাঠে নীতি, বিধি অনুসারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। আমি যেটার ওপর জোর দেব, সেটা হচ্ছে নির্বাচনে কার্যকর প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়া গণতান্ত্রিক নির্বাচন সম্ভব নয়। কারণ পুলিশ দিয়ে কিন্তু আমি ব্যালেন্স তৈরি করব না। ব্যালেন্স তৈরি হবে কিন্তু দলগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে প্রতিটি কেন্দ্রে ব্যালেন্স তৈরি করবে। তারা যদি ভারসাম্য তৈরি না করেন তাহলে পুলিশ, মিলিটারি দিয়ে সব সময় নির্বাচনটাকে সুষ্ঠু এবং বিশ্বাসযোগ্যভাবে, আস্থাভাজনভাবে উঠিয়ে আনা সম্ভব হবে না।’
নেপালের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সিইসি বলেন, ‘তাদের ওখানে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা আছে। এছাড়া তারা খোলা জায়গায় ব্যালটে সিল মারার ব্যবস্থা রেখেছে। ওরাও আমাদের আগে গোপন কক্ষেই করতো। কিন্তু আমি জিজ্ঞাসা করায় জানাল যে অধিক স্বচ্ছতার জন্য, অবিশ্বাস দূর করার জন্য তারা এই ব্যবস্থা এনেছে।’