কাতার বিশ্বকাপের আগে টানা ৩৬ ম্যাচ জয়ে ফিফা বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফির অন্যতম দাবিদার ছিল আর্জেন্টিনা। তবুও মরুর বুকে লিওনেল মেসির দলের শুরু প্রথম ম্যাচে হার দিয়ে। সৌদি আরবের কাছে পরাজয়ে ফুটবল বিশ্বকাপের ২২তম আসরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায়ের শঙ্কায় পড়ে লে আলবিসেলেস্তেরা। নিজের শেষ বিশ্বকাপ খেলতে আসা মেসি এমন কঠিন অবস্থায় গোটা দলকে নিয়ে জ্বলে উঠলেন পরের ম্যাচেই। নিজে দুর্দান্ত এক গোল করে, আর সতীর্থকে দিয়ে আরেকটি গোল করিয়ে আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন।
তবে পোল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচে পেনাল্টি মিস করে দিলেন বর্তমান সময়ের সেরা তর্কসাপেক্ষে সর্বকালের সেরা কিংবদন্তি মেসি। যার ফলে প্রথম রাউন্ড থেকেই বিশ্বকাপ মিশন শেষ হওয়ার শঙ্কায় পড়েছিল আর্জেন্টিনা। তবে এলেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার ও হুলিয়ান আলভারেজের গোলে শেষ নাটকীয়তায় গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই নকআউটে জায়গা করে নিলো দুইবারের বিশ্বসেরা আকাশী নীল শিবিরের যোদ্ধারা।
বৃহস্পতিবার (০১ ডিসেম্বর) কাতারের রাজধানী দোহায় কন্টেইনার দিয়ে নির্মিত স্টেডিয়াম ৯৭৪’এ বাঁচামরার ম্যাচে শুরু থেকেই পোল্যান্ডের রক্ষণে একের পর এক আক্রমণ চালায় লিওনেল মেসি-ডি মারিয়ারা। তবে বারবার আক্রমণ করেও পোল্যান্ডের ডিফেন্ডারদের কাছে আটকে যাচ্ছিলেন আর্জেন্টিনা ফরোয়ার্ডরা। তবে ৩৮তম মিনিটে বিরাট এক সুযোগ আসে আর্জেন্টিনার সামনে। ডি-বক্সের ভিতরে বল বাঁধাতে গিয়ে মেসিকে আঘাত করে ফেলে দেন পোল্যান্ডের গোলরক্ষক। যার ফলে ভিএআর চেক করেন রেফারি। সব দেখেশুনে আর্জেন্টিনাকে পেনাল্টির সংকেত দেন।
তবে পোল্যান্ডের গোলরক্ষক সেজেসনির কাছে পরাস্ত হয়ে সহজ সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। সাতবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী পিএসজির এই তারকা। এদিন স্পট কিক থেকে গোল করতে ব্যর্থ হন। এতে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক মেসি যেন দলকেই বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে দিচ্ছিলেন। তার ডান দিকে নেওয়া শট ঠেকিয়ে দেন সেজেসনি। ফলে প্রথমার্ধের ৬৫ শতাংশ বল দখলে থেকেও গোলশূন্য বিরতিতে যায় দুই দল।
তবে বিরতি থেকে ফিরেই মেসির হতাশাকে আশার আলো দেখান অ্যালিস্টার। এই মিডফিল্ডারের গোলেই ৪৭তম মিনিটেই কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পেয়ে যায় আর্জেন্টিনা। ডানপ্রান্ত থেকে মোলিনার ক্রস থেকে আলতো পা ছুঁয়ে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি। যা কিনা আবার অ্যালিস্টারের দেশের জার্সিতেও অভিষেক গোল। এই গোলের সুবাদে গোটা স্টেডিয়ামে সমর্থকদের উল্লাসে মেতে ওঠে।
এদিন নিজে না পারলেও সতীর্থরা মিলে যেন মেসির হতাশাকে জয়ের রূপ দিতে বদ্ধ পরিকর ছিলেন। ফলে ৬৭ মিনিটে আবারও গোল করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ম্যানচেস্টার সিটির আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার আলভারেজ। পোলিশ রক্ষণে এনজো ফার্নান্দেজের বাড়ানো পাস দারুণ দক্ষতায় রিসিভ করে ভেতরে নিয়ে এক টাচে কোনাকুনিতে শট নেন আলভারেজ। তবে লাফিয়েও সে বল আটকাতে পারেননি সেজেসনি। তার নাগালের বাইরে দিয়ে বল চলে যায় জালে। এতে মেসির দলে জয়ের ভিতও তৈরি হয়।
তবুও আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডরা আরও আক্রমণ চালিয়েই যায়। এদিকে পোল্যান্ড আজ যেন নিজেদের খোলস থেকে বেরই হতে পারেননি। আর্জেন্টিনার গোলবারে কোনো আক্রমন চালাতেই পারেনি। তাই কোনো গোলের দেখাও পায়নি। এতে শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলের ব্যবধানে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে লিওলেন স্কালোনির আর্জেন্টিনা। আর নিজের শেষ বিশ্বকাপে এসে টানা ছয় ম্যাচে গোল করার পরে খালি হাতেই ম্যাচ শেষ করতে হলো মেসিকে।
এদিন আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ২২ ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়েছেন লিওনেল মেসি। যার ফলে বিদায়ী কিংবদন্তি ডিয়াগো ম্যারাডোনার ২১ ম্যাচের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেলেন তিনি। অবশ্য সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলা জার্মানির লুথার ম্যাথিউসকে (২৫টি) ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ এখনো রয়েছে তার সামনে। তবে এজন্য এখনও সাতবারের ব্যালন জয়ী এই তারকাকে ফাইনাল পর্যন্ত যেতে হবে। আর্জেন্টিনা কি পারবে পরবর্তী ধাপে এগিয়ে যেতে?
বিশ্বকাপের ‘সি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় শেষ ষোলোয় আগামী সোমবার (৩ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ১টায় এশিয়া অঞ্চল থেকে বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামবে সবশেষ ১৯৮৬ সালের চ্যাম্পিয়নরা। ফলে ১৮ ডিসেম্বর ফাইনালে শেষ বেলায় কিংবদন্তি মেসির হাতে শিরোপা দেখার আশা সমর্থকরা এখনও করতেই পারে।