৪৮ রানে ৩ উইকেট, ১১২ রানে ৪ উইকেট পড়ার পর দিনটা বাংলাদেশের বোলারদেরই ধরে নিয়েছিল প্রায় সবাই। কিন্তু চেতেশ্বর পুজারা ও স্রেয়াশ আয়ার মিলে পঞ্চম উইকেট জুটিতে ১৪৯ রানের বড় জুটি গড়ে বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছিলেন।
কিন্তু দিনের শেষ ভাগে এসে দ্রুত দুটি উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে আবার খেলায় ফেরান দুই স্পিনার তাইজুল ইসলাম এবং মেহেদী হাসান মিরাজ। ৯০ রান করা চেতেশ্বর পুজারাকে ফেরান তাইজুল এবং দিনের একেবারে শেষ বলে অক্ষর প্যাটেলকে এলবিডব্লিউতে শিকার করেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
ফলে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন ৬ উইকেট হারিয়ে ২৭৮ রান সংগ্রহ করেছে ভারত।
দিনের প্রথম ঘণ্টার শেষদিকে গিলকে ফেরান তাইজুল। ইনিংসের ১৪তম ওভারে দ্বিতীয় বল লেগ স্টাম্পে ফুল লেন্থে করেন তাইজুল। প্যাডল সুইপ করতে গিয়ে টপ এজ হয়ে যায় গিলের। প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো ইয়াসির আলি রাব্বি সহজ ক্যাচ নেন লেগ স্লিপ পজিশনে গিয়ে। ৩ চারে ৪০ বলে ২০ রান করেন গিল।
৪ ওভার পর আরেক উদ্বোধনী ব্যাটার ও অধিনায়ক লোকেশ রাহুলকে সাজঘরে ফেরান খালেদ আহমেদ। তার লেন্থ বল লাইনে না গিয়ে ব্যাট চালান রাহুল, ব্যাটে ইনসাইড এজ হয় বল আঘাত হানে স্টাম্পে। বোল্ড আউট হয়ে হতাশায় মাঠ ছাড়েন রাহুল। ৩ চারে ৫৪ বলে ২২ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি।
বাংলাদেশের জন্য বড় বাধা হতে পারতেন কোহলি। তাকেও ক্রিজে বেশিক্ষণ থাকতে দেননি তাইজুল ইসলাম। তার দারুণ এক ডেলেভারি কোহলির প্যাডে লাগলে আউট দেন আম্পায়ার। ভারতীয় ব্যাটার রিভিউ নিলেও বাঁচতে পারেননি। ৫ বলে ১ রান করেই ফিরতে হয় কোহলিকে।
এরপর হাল ধরেন চেতেশ্বর পুজারা ও ঋষভ পান্থ। নিজের স্বভাবসুলভ ব্যাটিং করতে থাকেন পন্থ। ৪ চার ও ১ ছক্কায় ২৬ বলে ২৯ রান করে যান লাঞ্চের বিরতিতে। দ্বিতীয় সেশনের দ্বিতীয় বলেই এবাদতের ওভারে পূজারা ক্যাচ দিয়েছিলেন উইকেটের পেছনে। কিন্তু নুরুল হাসান সোহান ধরতে পারেননি সেটি।
কিছুক্ষণ পর পান্থকে ফিরিয়ে স্বাগতিক শিবিরে স্বস্তি আনেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তার আর্ম বলে প্লেইড অন হয়ে সাজঘরে ফেরত যান পন্থ। ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৪৫ বলে ৪৬ রান করেন তিনি। ভাঙে পুজারার সঙ্গে তার ৬৪ রানের জুটি। দ্বিতীয় সেশনের বাকি সময় শ্রেয়াস আয়ারের সঙ্গে কাটিয়ে দেন পুজারা।
তৃতীয় সেশনে ছুটতে থাকেন তারা। এর মধ্যে মিরাজের করা ৭৬তম ওভারে জীবন পান শ্রেয়াস আয়ার। মিডউইকেটে দাঁড়িয়ে তার লোপ্পা ক্যাচ ছাড়েন এবাদত হোসেন। জীবন পেয়ে ছুটছেন আয়ার। প্রথম দিনশেষে তাকে আউট করতে পারেননি বাংলাদেশের বোলাররা।
এদিকে ইনিংসের ৮৪তম ওভারে ঘটে অদ্ভুত এক ঘটনা। কয়েক বল আগেই স্টাম্পের বেল বদলানো হয়। এবাদতের করা পঞ্চম বলে স্টাম্পে লেগেও ভাঙেনি উইকেট। বেল ও স্টাম্পের বাতি জ্বললেও আয়ার থাকেন অপরাজিত। তাকে ফেরাতে না পারলেও আরেক প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা পুজারাকে ঠিকই ফিরিয়েছে বাংলাদেশ।
দিনে বেশ কয়েকবারই পুজারাকে পরাস্ত করেছিলেন তাইজুল। কিন্তু পাচ্ছিলেন না কাঙ্ক্ষিত উইকেটের দেখা। ৮৫তম ওভারে এসে পূর্ণ হয় তার আকাঙ্ক্ষা। অফ স্টাম্পের বাইরে থেকে হালকা টার্ন করা বল আঘাত হানে স্টাম্পে। সেঞ্চুরির আক্ষেপ নিয়ে ১১ চারে ২০৩ বলে ৯০ রান করে ফিরতে হয় পূজারাকে। আয়ারের সঙ্গে ১৪৯ রানের জুটি ভাঙে।
এরপর আরও এক উইকেট নিয়ে দিনটি পুরোপুরি নিজেদের করে নেওয়ার সুযোগ ছিল বাংলাদেশের সামনে। তাইজুলের বলে অক্ষর প্যাটেলের ব্যাটে লেগে ক্যাচ ধরেন। আবেদন করলেও আম্পায়ার আউট দেননি। রিভিউ নিলে ফিরতে হতো ভারতীয় ব্যাটারকে। পরে কিছুটা কঠিন ক্যাচ ফেলেন সোহান। সারাদিনে সবমিলিয়ে তিনটি সুযোগ হারিয়েছেন এই উইকেটরক্ষক।
দিন পুরোপুরি বাংলাদেশের করার দায়িত্ব নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এই স্পিনার ২৬ বলে ১৩ রান করা অক্ষর প্যাডেলকে এলবিডব্লিউ করেন। ভারতীয় ব্যাটার রিভিউ নিলেও বাঁচতে পারেননি। তার আউটের পরই দিনের খেলার শেষ ঘোষণা করা হয়।
১৬৯ বলে ৮২ রান করে অপরাজিত আছেন আয়ার। বাংলাদেশের পক্ষে ৩০ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৮৪ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। ১৮ ওভারে ৭১ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন মিরাজ। ১২ ওভারে ১ উইকেট পেয়েছেন খালেদ আহমেদও।