বোর্ডে বেশি রান নেই। ভারতের লক্ষ্য মাত্র ১৪৫ রানের। এই ম্যাচ জিততে হলে অবিশ্বাস্য কিছুই করতে হবে বাংলাদেশের বোলারদের। সেটা কী সম্ভব?
তৃতীয় দিনের শেষ বিকেলে সাকিব আল হাসান, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলামরা যেভাবে বল ঘুরালেন; অবিশ্বাস্য এক জয়ের স্বপ্ন দেখতেই পারে টাইগাররা।
এরই মধ্যে সাজঘরে ফিরে গেছেন ভারতীয় অধিনায়ক লোকেশ রাহুল, শুভমান গিল, ব্যাটিং স্তম্ভ চেতেশ্বর পূজারা আর বিরাট কোহলি।
৩৭ রান তুলতে ৪ উইকেট হারানো ভারতের জন্য চতুর্থ দিনে লড়াই করে জয় ছিনিয়ে আনা মোটেই সহজ হবে না।
৪ উইকেটে ৪৫ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে ভারত। জিততে হলে আরও ১০০ রান করতে হবে তাদের। উইকেটে আছেন দুই নাইটওয়াচম্যান অক্ষর প্যাটেল (২৬) আর জয়দেব উনাদকাট (৩)। এরপর স্বীকৃত ব্যাটার বলতে কেবল রিশাভ পান্ত আর শ্রেয়াস আইয়ার। রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে ব্যাটার ধরলে আছেন আর তিনজন। বাংলাদেশ কী পারবে?
রান তাড়ায় নেমে শুরু থেকেই বাংলাদেশি বোলারদের তোপের মুখে পড়ে ভারত। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে সাকিব টার্নে পরাস্ত করেন ভারতীয় অধিনায়ক লোকেশ রাহুলকে (২)। ব্যাটে ছোঁয়া লেগে বল চলে যায় উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভসে।
এরপর আঘাত হানেন মেহেদি হাসান মিরাজ। তার ঘূর্ণি ডেলিভারি কিছুটা সামনে এসে ডিফেন্ড করতে চেয়েছিলেন চেতেশ্বর পূজারা। বল ধরে স্টাম্প ভেঙে দেন সোহান। ৬ রানে থামেন ভারতীয় ব্যাটিংয়ের অন্যতম স্তম্ভ।
প্রায় একইরকমভাবে মিরাজের ঘূর্ণিতে পরাস্ত হয়েছেন শুভমান গিল (৭)। এবারও স্টাম্প ভেঙেছেন সোহান। বিরাট কোহলি ছিলেন সবচেয়ে বড় বাধা। শেষ বিকেলে তার উইকেটটিও তুলে নিয়েছেন মিরাজ। কোহলি ডিফেন্ড করেছিলেন, ক্যাচ চলে যায় শর্ট লেগে মুমিনুলে কাছে। দারুণ এক ক্যাচে কোহলির (১) বিদায়ঘণ্টা বাজান মুমিনুল।
এর আগে ১৫৯ রানেই ৭ উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। শঙ্কা জেগেছিল দুইশর নিচে গুটিয়ে যাওয়ার। সেখান থেকে লোয়ার অর্ডারের তাসকিন আহমেদকে নিয়ে লড়াকু এক জুটি গড়েন লিটন দাস।
৭৬ বলে তাদের ৬০ রানের প্রতিরোধগড়া জুটিটি অবশেষে ভাঙেন মোহাম্মদ সিরাজ। দারুণ এক সুইংয়ে বোল্ড করেন লিটনকে। ৯৮ বলে ৭ বাউন্ডারিতে গড়া লিটনের ইনিংসটি ছিল ৭৩ রানের।
লিটন আউট হওয়ার পর আর বেশিদূর এগোয়নি বাংলাদেশের ইনিংস। শেষ ব্যাটার খালেদ আহমেদ রানআউট হয়েছেন ৪ করে। তাসকিন অপরাজিত ছিলেন ৩১ রানে।
৭০.২ ওভারে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস থেমেছে ২৩১ রানে। ফলে মিরপুর টেস্টে ভারতের সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়িয়েছে ১৪৫ রানের।
এই টেস্টে প্রথম ইনিংসেই ৮৭ রানে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় দিনের শেষ বিকেলে দৃঢ়তা দেখিয়েছিলেন দুই ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত আর জাকির হাসান। ৬ ওভারে বিনা উইকেটে ৭ রান তুলে দিন শেষ করেছিল বাংলাদেশ।
তবে তৃতীয় দিনের শুরুতেই বড় বিপদে পড়ে টাইগাররা। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে এলবিডব্লিউ হয়েছেন শান্ত (৫)। এরপর মোহাম্মদ সিরাজের দারুণ এক ডেলিভারি মুমিনুলের ব্যাট ছুঁয়ে চলে গেছে উইকেটরক্ষক রিশাভ পান্তের হাতে। মুমিনুলও করেন ৫।
সাকিব আল হাসান আরও একবার সেট হয়ে আউট হয়েছেন। ৩৬ বলে ১৩ করে উনাদকাটের বলে এক্সট্রা কভারে সহজ ক্যাচ দিয়েছেন বাংলাদেশ দলপতি।
মুশফিকুর রহিমও দলের হাল ধরতে পারেননি। ৯ রান করে এলবিডব্লিউ হয়েছেন অক্ষর প্যাটেলের স্পিনে। ৪ উইকেটে ৭১ রান নিয়ে তৃতীয় দিনের লাঞ্চ বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
দারুণ খেলছিলেন জাকির হাসান। টানা দ্বিতীয় টেস্টে পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংসও বেরিয়ে আসে তার ব্যাট থেকে। তবে ফিফটি পূরণ করার পরই যেন দায়িত্বটা ভুলে গেলেন বাঁহাতি এই ওপেনার। খেলে বসলেন অপরিণামদর্শী এক শট।
উমেশ যাদবের যে ডেলিভারিটি চাইলেই ছেড়ে দিতে পারতেন জাকির, সেটি বাতাসে ভাসিয়ে খেলে দিলেন বাউন্ডারির দিকে। ডিপ থার্ডম্যানে সহজ ক্যাচ নিলেন সিরাজ। ১৩৫ বলে জাকিরের ৫১ রানের ধৈর্যশীল ইনিংসে ছিল ৫টি বাউন্ডারির মার।
জাকির ফেরার পর দ্রুত আরেকটি উইকেট হারাতে পারতো বাংলাদেশ। ২০ রানে কপালগুণে বেঁচে গেছেন লিটন দাস। অক্ষর প্যাটেলের বলে স্লিপে ক্যাচ ফেলে দেন বিরাট কোহলি।
তবে বাঁচতে পারেননি মেহেদি হাসান মিরাজ (০)। অক্ষর প্যাটেলকে সুইপ খেলতে গিয়ে বলের লাইন মিস করেন, এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার।
আগের টেস্টে দুই ইনিংসে বিশের ঘরও ছুঁতে পারেননি। এবার প্রথম ইনিংসে মাত্র ৬ করে সাজঘরে ফেরেন। দ্বিতীয় ইনিংসে নুরুল হাসান সোহান যেন আর কিছুর ধার ধারলেন না। উইকেটে এসেই মারতে শুরু করলেন।
টি-টোয়েন্টি স্টাইলে খেলে অবশ্য খুব বেশিদূর এগোতে পারেনি টাইগার উইকেটরক্ষক। ২৯ বলে ২ চার আর ১ ছক্কায় ৩১ রান করে অক্ষর প্যাটেলের ঘূর্ণিতে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন তিনি।
লিটন দাসের সঙ্গে স্বীকৃত ব্যাটার বলতে ছিলেন কেবল সোহানই। তিনি আউট হওয়ার পর লোয়ার অর্ডার বেরিয়ে পড়েছে। তবে তাসকিনকে সঙ্গে নিয়ে এরপর লড়েছেন লিটন।
এর আগে রিশাভ পান্ত আর শ্রেয়াস আইয়ারের ১৬৫ রানের এক জুটিতে ভর করে ভারত প্রথম ইনিংসে থামে ৩১৪ রানে। পান্ত ৯৩ আর আইয়ার করেন ৮৭ রান। মুমিনুল হকের ৮৪ রানে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে করেছিল ২২৭।