ঠিক যেন তৃতীয় দিন বিকালে চা-বিরতির পরের সেশনের কিছুক্ষণের মঞ্চায়ন হলো আজ চতুর্থ দিন মধ্যাহ্নবিরতির পর। শুধু ভুক্তভোগী দলের নাম বদলে গেল, এই যা!
৬ উইকেটে ২৭২ রান নিয়ে কাল চা-বিরতিতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে ফিরে ৩৩ বল আর ১৫ রানের মধ্যেই অলআউট হয়ে যান লিটন-মিরাজরা। আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বল লাগল কম, রান হলো বেশি। উইকেটের সংখ্যা একই থাকল। ২৯ বলে ১৯ রানের মধ্যে শেষ ৪ উইকেট হারিয়ে ১১৭ রানে অলআউট ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে এক ইনিংসে এর চেয়ে কম রান ওয়েস্ট ইন্ডিজ করেছে মাত্র দুবার। মিরপুর টেস্টে তাই জয়ের জন্য বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়াল ২৩০ রান।
এই প্রতিবেদন লেখার সময়ে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নেমে গেছে। এরই মধ্যে বিনা উইকেটে ২৫ রান হয়েও গেছে। তামিম ইকবাল বেশ আক্রমণাত্মক শুরু করেছেন। ১৫ বলে ৩ চারে ১৮ রান হয়ে গেছে তাঁর। সৌম্য সরকার ৯ বলে ১ চারে ৫ রান করে অপরাজিত।
উইন্ডিজের শেষ চার উইকেট ভাগাভাগি করে নিয়েছেন তাইজুল ইসলাম ও নাঈম হাসান। তাইজুল ফিরিয়েছেন জশুয়া দা সিলভা ও আলজারি জোসেফকে। নাঈমের শিকার রাকিম কর্নওয়াল ও এনক্রুমা বোনার। ইনিংসে ৩৬ রানে ৪ উইকেট হলো তাইজুলের, ৩৪ রানে ৩ উইকেট নাঈমের। আজ সকালে উইন্ডিজকে ধসিয়ে দেওয়ার অভিযান যাঁর হাতে শুরু, সেই আবু জায়েদ ২ উইকেট নিয়েছেন ৩২ রানে। ১ উইকেট নিতে মিরাজের খরচ হয়েছে ১৫ রান।
দা সিলভা আর বোনার মধ্যাহ্নবিরতির সময়ও ছিলেন বাংলাদেশের মাথাব্যথার নাম। টেস্ট সিরিজজুড়ে দুজন বাংলাদেশকে ভুগিয়েছেন। আজ সকালের সেশনের শুরুতে ১৪ ওভারের মধ্যেই আবু জায়েদ ২ উইকেট ও তাইজুল ১ নিয়ে বাংলাদেশকে ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখালেও এ দুজন কিছুটা বাধ দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেটের স্রোতে। লাঞ্চ পর্যন্ত আর উইকেট পড়তে দেননি। বোনার ৩০ আর দা সিলভা ২০ রান নিয়ে মধ্যাহ্নবিরতিতে যান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দ্রুত গুঁড়িয়ে দিতে হলে বিরতি থেকে ফিরে এ দুজনকে, অথবা অন্তত একজনকে ফেরাতেই হবে বাংলাদেশের—সেটা বুঝতে ক্রিকেটের ‘আইনস্টাইন’ হওয়ার দরকার পড়ে না। তাইজুল নিশ্চিত করলেন, বাংলাদেশের চাওয়াটা পূরণ হচ্ছে।
বিরতির পর দ্বিতীয় ও নিজের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই দা সিলভাকে ফেরান তাইজুল। বাঁহাতি স্পিনারের বল তাঁর ব্যাটে লেগে কীভাবে স্লিপে সৌম্য সরকারের হাতে চলে গেল, তা যেন বুঝতেই পারলেন না দা সিলভা। বিরতির আগে যে ২০ রান করেছিলেন, সেটির সঙ্গে আর কোনো রান যোগ করার আগেই বিদায় নেন ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান।
অন্য পাশে বোনার ছিলেন, নতুন ব্যাটসম্যান আলজারি জোসেফও যে ব্যাটিংটা ভালোই পারেন, সেটি তো প্রথম ইনিংসেই দেখা গেছে। দুজন কিছুটা আক্রমণাত্মক হওয়ারই চেষ্টা করেছিলেন। হয়তো ক্রমেই স্পিনারদের আরও ভালো বন্ধু হতে থাকা ক্রিজে আর বেশিক্ষণ টেকা সম্ভব নয় ধরে নিয়ে দ্রুত যত সম্ভব রান তোলাতেই ছিল মনোযোগ। কিন্তু সফল হলো না সে চেষ্টা। এসেই ছক্কা মারলেও জোসেফ ৯ রান করেই ফিরলেন তাইজুলের বলে। আউটের ধরনটা অদ্ভুতুড়ে ছিল। বল তাঁর ব্যাটের বাইরের দিকে লেগে সিলি পয়েন্টে থাকা ফিল্ডারের গায়ে লেগে, সেখান থেকে ধরা পড়ে সিলি মিড অফে নাজমুলের হাতে।
তখনো বোনারের ওপর ভরসা ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের, আউট হওয়ার আগে যদি কিছু রান করে দিয়ে যেতে পারেন তিনি! কিন্তু নাঈমের বলে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে তিনি বোল্ড হলেন ৩৮ রানে। চার বল পর কর্নওয়ালকে ফিরিয়ে উইন্ডিজ ইনিংসের শেষ টেনে দেন নাঈমই।