গোলাগুলি, বোমা বিস্ফোরণ, সংঘাত, হতাহত, ভোট বর্জন, ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধা, এজেন্ট বের করে দেয়া, ইভিএম নষ্টে ভোট বন্ধ, প্রার্থী আটকসহ নানা অভিযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হলো চতুর্থ ধাপে ৩৪টি জেলার ৫৫টি পৌরসভার ভোটগ্রহণ।
রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে। ভোটগ্রহণ শেষে এখন চলছে গণনা।
এ ভোটে মেয়র পদে লড়েছেন ২১৭ জন, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ২ হাজার ৭০ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৬১৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ও ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হয়।
চতুর্থ ধাপে সাধারণ ওয়ার্ড ৫০১টি এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৬৭টি। ভোটকেন্দ্র ৭৯৩টি। আর মোট ভোটার ১৬ লাখ ৬৭ হাজার ২২৪ জন।
ভোট উপলক্ষ্যে শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেছেন, ‘আমরা পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি), জেলা প্রশাসক (ডিসি), রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা– সবাইকে একই মেসেজ দিয়েছি যে, আমাদের নির্বাচনে কোনো ধরনের যেন কিছু না ঘটে। কারণ নির্বাচন কমিশনের টার্গেটই হলো নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং বিশ্বাসযোগ্য হবে।’
ইসি সূত্র বলছে, এ নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের জন্য ৫০১ জন নির্বাহী ও ৫৫ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে ছিলেন। পুলিশের ১৬৭টি মোবাইল ও ৫৫টি স্ট্রাইকিং ফোর্স টিম, ১৬৭টি র্যাবের টিম, প্রত্যেক পৌরসভায় গড়ে দুই প্লাটুন বিজিবি ও উপকূলীয় এলাকায় প্রতি পৌরসভায় এক প্লাটুন কোস্টগার্ড মোতায়েন ছিল। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ ১২টি পৌরসভায় নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে অতিরিক্ত র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
চতুর্থ ধাপে নির্বাচনের জন্য ৫৬টি পৌরসভার তফসিল ঘোষণা করেছিল ইসি। পরে সোনাইমুড়ি ও ত্রিশাল পৌরসভা এ ধাপে যুক্ত হয়।
অন্যদিকে হাইকোর্টের আদেশে নাটোর পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত করা হয়। ফেনীর পরশুরাম পৌরসভায় সব পদে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ায় এখানে ভোটের প্রয়োজন হবে না। জয়পুরহাটের কালাই পৌরসভা নির্বাচন কার্যক্রম বন্ধের পর ফের তা চালু হয়। এছাড়া সহিংস ঘটনায় মাদারীপুরের কালকিনি পৌরসভার ভোট স্থগিত করে ইসি। এজন্য সব মিলিয়ে ৫৫টিতে ভোট হয়েছে আজ।
যেসব পৌরসভায় ভোট হয়েছে সেগুলো হলো:
ঠাকুরগাঁওয়ের ঠাকুরগাঁও (ইভিএম) ও রানীশংকাইল (ব্যালট); লালমনিরহাটের লালমনিরহাট (ইভিএম) ও পাটগ্রাম (ব্যালট); জয়পুরহাটের আক্কেলপুর (ইভিএম) ও কালাই (ব্যালট); চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ (ইভিএম); রাজশাহীর নওহাটা (ব্যালট), গোদাগাড়ী (ইভিএম), তানোর (ব্যালট) ও তাহেরপুর (ইভিএম); নাটোরের বড়াইগ্রাম (ব্যালট); চুয়াডাঙ্গার জীবননগর (ব্যালট) ও আলমডাঙ্গা (ইভিএম); যশোরের চৌগাছা (ইভিএম) ও বাঘারপাড়া (ব্যালট); বাগেরহাটের বাগেরহাট (ইভিএম); সাতক্ষীরার সদর (ইভিএম); পটুয়াখালীর কলাপাড়া (ইভিএম); বরিশালের মুলাদী (ইভিএম) ও বানারীপাড়া (ব্যালট); টাঙ্গাইলের গোপালপুর (ইভিএম) ও কালিহাতী (ব্যালট); জামালপুরের মেলান্দহ (ব্যালট); শেরপুরের সদর (ইভিএম) ও শ্রীবরদী (ব্যালট); ময়মনসিংহের ফুলপুর (ইভিএম) ও ত্রিশাল (ব্যালট); নেত্রকোনার সদর (ইভিএম); কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর (ইভিএম), হোসেনপুর (ব্যালট) ও করিমগঞ্জ (ব্যালট); মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম (ইভিএম); নরসিংদীর সদর (ব্যালট) ও মাধবদী (ইভিএম); রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ (ব্যালট) ও সদর (ইভিএম); ফরিদপুরের নগরকান্দা (ব্যালট); শরীয়তপুরের ডামুড্যা (ব্যালট); সিলেটের কানাইঘাট (ব্যালট); হবিগঞ্জের চুনারুঘাট (ইভিএম); ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া (ইভিএম); কুমিল্লার হোমনা (ইভিএম) ও দাউদকান্দি (ইভিএম); চাঁদপুরের কচুয়া (ইভিএম) ও ফরিদগঞ্জ (ব্যালট); নোয়াখালীর চাটখিল (ইভিএম); লক্ষ্মীপুরের রামগতি (ইভিএম); চট্টগ্রামের সাতকানিয়া (ব্যালট), পটিয়া (ইভিএম) ও চন্দনাইশ (ব্যালট); খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা (ব্যালট); রাঙ্গামাটি সদর (ইভিএম); বান্দরবন সদর (ইভিএম) এবং নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী (ব্যালট)।
প্রথম ধাপের তফসিলে ২৪ পৌরসভায় ইভিএমে ভোট হয় ২৮ ডিসেম্বর। ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপের ভোট হয়। তৃতীয় ধাপে ৬৩ পৌরসভায় ভোট হয় ৩০ জানুয়ারি। পঞ্চম ধাপের ভোট হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি।