যুক্তরাষ্ট্র-তুরস্কের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ছিল বুধবার (১৮ জানুয়ারি)। ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত সেই বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি উঠে এসেছে ইউক্রেন যুদ্ধ, রাশিয়ার সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক এবং ন্যাটোর প্রসঙ্গও। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রকে চুক্তি মোতাবেক ৪০টি এফ১৬ যুদ্ধবিমান দ্রুত পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু। একইসঙ্গে প্রচ্ছন্ন হুমকিও দিয়েছেন, যুদ্ধবিমান না দিলে তার প্রভাব দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পাশাপাশি ন্যাটোর ওপরেও পড়তে পারে।
মূলত তুরস্কের কাছে এফ১৬ যুদ্ধবিমান বিক্রি করতে বাইডেন প্রশাসন রাজি হলেও বাধা সৃষ্টি করেছেন আইনপ্রণেতারা। বিষয়টি নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসে একাধিকবার বিতর্ক হয়েছে এবং হচ্ছে। কিছু ডেমোক্র্যাট সদস্যের মতে, ন্যাটোয় তুরস্কের ভূমিকা ও রাশিয়া ইস্যুতে অবস্থান সঠিক নয়। এ কারণে তাদের ওই যুদ্ধবিমান দেওয়া উচিত হবে না।
তুরস্ক ন্যাটোর একমাত্র সদস্য যে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের অন্তর্ভুক্তির বিরুদ্ধে ভেটো দিয়েছে। কুর্দি আন্দোলনকারীদের সন্ত্রাসী বলে ঘোষণা করেছে আঙ্কারা। সুইডেন-ফিনল্যান্ডও তাদের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত না করলে তুরস্ক এ দুই দেশকে ন্যাটোয় যোগদানের অনুমতি দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। ন্যাটোয় নতুন সদস্য নিতে হলে পুরোনো সব সদস্যের অনুমোদন দরকার। এই নিয়মেরই ফায়দা নিতে চাচ্ছে তুরস্ক।
কিন্ত কুর্দিদের একটি গোষ্ঠী সিরিয়ায় আইএস-বিরোধী লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গী। ফলে ন্যাটোয় তুরস্কের এই অবস্থান ভালো চোখে দেখছে না ওয়াশিংটন।
তাছাড়া, রাশিয়া ইস্যুতে অনেকটা নমনীয় অবস্থান নিয়েছে তুরস্ক। তারা মস্কোর সঙ্গে আলোচনা ও মধ্যস্থতা করতে চায়। ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে পশ্চিমা দেশগুলো যেখানে রাশিয়াকে ব্যাপকভাবে বয়কট করছে, সেখানে উল্টো সম্পর্ক বাড়ানোর পথে হাঁটছে তুরস্ক। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠকও করেছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। এই বিষয়গুলো মোটেও ভালো চোখে দেখছে না যুক্তরাষ্ট্র।
এ অবস্থায় ওয়াশিংটনের বৈঠকে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি মোতাবেক যুদ্ধবিমান না দিলে তার প্রভাব কেবল দুই দেশের সম্পর্কের ওপরেই নয়, ন্যাটোতেও পড়বে।
২০২১ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নতুন ৪০টি এফ১৬ যুদ্ধবিমান এবং তুর্কি বিমানবাহিনীতে থাকা আরও ৭৯টি যুদ্ধবিমানের আধুনিকায়নের জন্য যন্ত্রাংশ চেয়েছিল তুরস্ক।
তুরস্কের চাপের মুখে দুই হাজার কোটি ডলারের সেসব যুদ্ধবিমান ও যন্ত্রাংশ বিক্রিতে মার্কিন প্রশাসন সম্মতি দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু এটিকে আঙ্কারার ওপর পাল্টা চাপ তৈরির কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছে ওয়াশিংটন। তারা বলেছে, ন্যাটোর নতুন দুই সদস্যের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আপত্তি তুলে নিতে হবে তুরস্ককে। তাহলেই এই চুক্তিতে অগ্রসর হবে।
তবে এতে রাজি নয় তুরস্ক। তুর্কি পররাষ্ট্রন্ত্রী অনেকটা হুমকির সুরেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে বলেছেন, বাইডেন প্রশাসনের উচিত হবে না কিছু সিনেটরের আপত্তির কারণে চুক্তিটি বাতিল করা এবং কংগ্রেসকে জানানো উচিত, ফিনল্যান্ড-সুইডেনের ন্যাটোয় অন্তর্ভুক্তির সঙ্গে এই যুদ্ধবিমান বিক্রির কোনো সম্পর্ক নেই।
তুরস্ক ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ন্যাটোর সদস্য এবং জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম সামরিক বাহিনী তাদের।