ব্রাজিলের কংগ্রেস, প্রেসিডেন্ট প্যালেস এবং সুপ্রিম কোর্টে হামলার ঘটনায় দেশটির সেনাপ্রধানকে বরখাস্ত করেছেন ব্রাজিলিয়ান প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা।
লাতিন আমেরিকার এই দেশটির রাজধানীতে দাঙ্গার দুই সপ্তাহ পর সেনাপ্রধানকে বরখাস্তের এই ঘটনা ঘটল। রোববার (২২ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীতে ব্রাসিলিয়াতে দাঙ্গার দুই সপ্তাহ পর ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা দেশটির সেনাপ্রধানকে বরখাস্ত করেছেন। বরখাস্তকৃত ওই সেনাপ্রধানের নাম জেনারেল জুলিও সিজার ডি আররুদা। সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর মেয়াদ শেষ হওয়ার ঠিক আগে গত ৩০ ডিসেম্বর থেকে সেনাপ্রধানের ভূমিকায় ছিলেন জেনারেল জুলিও।
প্রেসিডেন্ট লুলা বলেছেন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের যোগসাজশ করেছিল বলে তিনি সন্দেহ করেন। এছাড়া দাঙ্গার পর তিনি সাম্প্রতিক দিনগুলোতে কয়েক ডজন সামরিক কর্মকর্তাকে বরখাস্তও করেছেন।
সংবাদমাধ্যম বলছে, জাইর বলসোনারো গত বছরের অক্টোবরের নির্বাচনে পরাজয়ের পর বারবারই সেই ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকার করেছেন। চলতি মাসের শুরুতে দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটির নতুন সরকারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার পরিবর্তে দেশত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান তিনি। বলসোনারো সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র।
এরপর ক্ষমতার লড়াই ঘিরে গত ৮ জানুয়ারি যেন বিক্ষোভের আগুনে বিস্ফোরিত হয় ব্রাজিল। আর এতেই সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর সমর্থকরা হামলা চালায় দেশটির কংগ্রেস, প্রেসিডেন্ট প্যালেস ও সুপ্রিম কোর্টে।
চরম ডানপন্থি এই সমর্থকরা রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে একের পর এক জায়গায় হামলা চালায়। বিরোধী দলের এই হামলার তীব্র সমালোচনা করে একে ‘ফ্যাসিস্ট’ হামলা বলে আখ্যা দেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা।
সংবাদমাধ্যম বলছে, গত ৮ জানুয়ারি ব্রাজিলের কংগ্রেস, সুপ্রিম কোর্টের সদর দপ্তর ও প্রেসিডেন্ট প্যালেসে হামলার ঘটনা ফের একবার ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতীক ক্যাপিটলে হামলার কথাই মনে করিয়ে দিলো। যুক্তরাষ্ট্রের সেই ঘটনায় জড়িত ছিল ট্রাম্পের সমর্থকরা।
ব্রাসিলিয়ায় সেদিনের সেই সহিংসতায় বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন এবং দাঙ্গাবাজরা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ, কংগ্রেস এবং সুপ্রিম কোর্টে ভাংচুর করে। সেদিন প্রায় ২ হাজার জনকে আটক করা হলেও ব্রাজিলের ফেডারেল পুলিশ জানায় প্রায় ১২০০ জনকে গ্রেপ্তার রাখা হয়েছে।
ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট এই ঘটনায় তদন্ত করছে এবং জাইর বলসোনারোকেও তদন্তে অন্তর্ভুক্ত করেছে। প্রসিকিউটররা বলেছেন, কট্টর-ডানপন্থি সাবেক এই প্রেসিডেন্ট গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একটি ভিডিও পোস্ট করার মাধ্যমে দাঙ্গায় উস্কানি দিয়ে থাকতে পারেন।
অবশ্য বলসোনারো তার সমর্থকদের এই দাঙ্গার সঙ্গে জড়িত থাকার বা এর দায় নিতে অস্বীকার করেছেন। পরে দাঙ্গার নিন্দাও করেছেন তিনি। যদিও গত বছরের অক্টোবরের নির্বাচনের পরাজয় এখনও স্বীকার করেননি বলসোনারো।
এদিকে জেনারেল আররুদাকে বরখাস্তের পর ব্রাজিলের নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল টমাস রিবেইরো পাইভা দায়িত্ব নিচ্ছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। তিনি ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার ঘনিষ্ঠ সামরিক কমান্ডার। তিনি চলতি সপ্তাহের শুরুতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতে সৈন্যদের আহ্বান জানিয়ে বক্তৃতা করেছিলেন।