দুই টেবিল টপার সিলেট স্ট্রাইকার্স ও ফরচুন বরিশালের লড়াই। তার চেয়েও বড় কথা একদিকে মাশরাফি বিন মর্তুজা। আরেকদিকে সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশের ক্রিকেটের দুই বড় বিজ্ঞাপন। এমনিতে বিপিএলে দর্শকের খুব বেশি চাপ থাকে না। দুই দলের প্রথম ম্যাচেও সংখ্যাটা বলার মতো ছিল না। তবে এদিন ম্যাচ শুরুর আগে থেকে দর্শকের ঢল নামে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের দিকে।
ম্যাচের সময় যত গড়িয়েছে গ্যালারি পূর্ণ থেকে পূর্ণতর হয়েছে। দর্শক উপভোগ্য এক ম্যাচই হয়েছে। অনিশ্চয়তার দোলনা একবার বরিশালের দিকে তো একবার সিলেটের দিকে দুলতে দুলতে যার শেষ হাসি মাশরাফির। আগে ব্যাটিং করে সিলেটের ১৭৩ রানকে মিরপুরের উইকেটের বড়ই বলতে হবে। যেটা তাড়া করতে নেমে বরিশালের শুরুটা নড়বড়ে হয়েছে। ইমাদ ওয়াসিমের প্রথম ওভার থেকে আসে ২ রান। পরের ওভারে মাশরাফির প্রথম বলে আউট হতে পারতেন ইব্রাহিম জাদরান। এক্সট্রা বাউন্সের কাছে পরাস্ত হয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে সহজ ক্যাচ দেন। হাতে জমাতে পারেননি জাকির হাসান। ক্যাচ মিসের পরের তিন ওভারে চারটি ছক্কা মারেন সাইফ হাসান। এর তিনটি মাশরাফিকে। একটি মোহাম্মদ আমিরকে।
ক্যাচ মিসে জীবন পেয়েছেন সাইফও। বিপিএল অভিষেকের প্রথম বলেই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের পেসার তানজিম হাসান সাকিবকে উইকেট বঞ্চিত করেন তৌহিদ হৃদয়। বলা বাহুল্য হৃদয়ও সেই দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। তবে প্রথম উইকেটের জন্য বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি সাকিবকে। ওই ওভারের পঞ্চম বলে উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান সাইফের ১৯ বলে ৩১ রানের ঝড় থামান।
জাদরানকে নিয়ে বরিশালকে পথ হারাতে দেননি সাকিব। দুজনের জুটি থেকে আসে ৬১ রান। ১ রানে জীবন পাওয়া জাদরানকে বোল্ড করে সিলেটকে ম্যাচে ফেরান রেজাউর রহমান রাজা। একই ওভারের শেষ বলে সাকিবের স্টাম্পও ছত্রখান করেন এই তরুণ পেসার। তবে মাশরাফিকে টানা তিন ছক্কায় বরিশালকে ম্যাচে রাখেন করিম জানাত। সেই ম্যাচ পরের ওভারে ১ রান দিয়ে পাল্লা আবার সিলেটের দিকে হেলান মোহাম্মদ আমির।
তরুণ সাকিবের ১৮ তম ওভারে থেকে ইফতিখার আহমেদ ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ মিলে নিলেন ১৮ রান। শেষ ২ ওভারে দরকার ছিল ২৩ রান। শেষ ওভারে যেটা নেমে আসে ১৫ রানে। রাজার ওভারে এই হিসেব বরিশাল মেলাতে পারেনি। শেষ দুই বলে মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র ছক্কা-চার মেরেও জয় থেকে বরিশালের দূরত্ব থাকল ২ রান দূরে।
এই জয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তাঁর অপরাজিত ৮৯ রানের ইনিংসটা যে শেষ পর্যন্ত বৃথা যায়নি। ঢাকার প্রথম পর্বে রানের মধ্যেই ছিলেন। চট্টগ্রামে সেটা ওঠা-নামার ওপর ছিল। ঢাকায় ফিরেই রানের দেখা পেলেন শান্ত। একপর্যায়ে ১৫ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারানো সিলেট। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম, পঞ্চম ও শেষ বলে সিলেটের টপ অর্ডার নাড়িয়ে দেন মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র। তাঁর শিকার জাকির হাসান শূন্য, চোট কাটিয়ে ফেরা তৌহিদ হৃদয় ৪ ও মুশফিকুর রহিম শূন্য।
সিলেট বড় রানের ভিত পায় মূলত শান্ত ও টম মুরসের চতুর্থ উইকেট ৮১ রানের জুটিতে। আজই বিপিএলে অভিষেক হয়েছে ইংলিশ ব্যাটার মুরসের। অভিষেক স্মরণীয় করে রাখেন দলের বিপদের মুহূর্তে ৩০ বলে ৪০ রানের ইনিংসে। এই ভিতে দাঁড়িয়ে সিলেট ১৭০ ছাড়িয়ে যেতে পেরেছে শান্ত ও থিসারা পেরেরার ৬৮ রানের জুটিতে। এই রানটাই জয়ের জন্য যথেষ্ট করে তোলেন সিলেটের বোলাররা।