1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:১৯ অপরাহ্ন

ঢাকা দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রারের দুর্নীতি, কে এই উমেদার লিয়াকত?

বিশেষ প্রতিবেদন
  • আপডেট : মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
  • ১১৯৫ বার দেখা হয়েছে

ঝালকাঠীর রাজাপুরের বাসিন্দা উমেদার লিয়াকত। বংশ পরম্পরায় চুরি, ডাকাতি ছিলো তাদের পেশা। ডাকাতি ছাড়াও ধর্ষণ, গুম, খুনের মতো ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক জিডি ও ৫-৬ টা মামলা রয়েছে। তার পরিবার এলাকায় আতঙ্ক বলে প্রতীয়মান রয়েছে।
এ বিষয়ে এলাকার ভুক্তভোগী হাসিনা জাতীয় অর্থনীতির ইনভেস্টিগেশন টিমকে মোবাইল ফোনে জানান, “উমেদার লিয়াকত আমার দূর সম্পর্কের আত্মীয়। দীর্ঘদিন যাবত আমি তাদের দ্বারা নির্যাতিত। আমি এ বিষয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে বিচারও চেয়েছি। কোনো প্রতিকার পাইনি। তারা ডাকাত, খুনী। তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পান এলাকার লোকজন। স্যার, আপনাদের কাছে আমি বিচার চাই। আমাকে নির্যাতন করছে, আমার পরিবারকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আজ আমি রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছি। আপনারা বিচার করবেন।”
এদিকে উমেদার লিয়াকত সরকারি রাজস্ব আত্মসাৎসহ চুরি-ডাকাতি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তার সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে- ঝালকাঠী রাজাপুর উপজেলার চর বাকরি মৌজায় লিয়াকতের নিজ নামে ১৪ লাখ টাকা মূল্যে ৭ শতাংশ ক্রয় করেন। যার দলিল নম্বর- ১৫৫৮ তারিখ ১৯/০৭/২০১৮। ১৪ লাখ টাকা মূল্য দেখালেও ওই জমির বর্তমান বাজার মূল্য অর্ধকোটি টাকা। ঢাকা জেলায় কেরাণীগঞ্জ থানায় বসুন্ধরা রিভার ভিউতে লিয়াকতের স্ত্রী রুমা আক্তারের নামে রয়েছে একটি আলিশান ফ্ল্যাট। যার আনুমানিক মূল্য ৫০ লাখ টাকা। ঢাকার খিলগাঁওয়ে ৬০ লাখ টাকা মূল্যের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে লিয়াকতের নামে। ঝালকাঠী রাজাপুর থানা সদরে পুরনো কাঁচাবাজার সংলগ্ন এলাকায় ভাই ভাই বস্ত্রালয় নামে তার বাবা ও ভাইদের কাপড়ের দোকান রয়েছে। উক্ত দোকানে ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন উমেদার লিয়াকত। ঝালকাঠী জেলার এলজিইডি অফিসের কাছে একটি প্লট রয়েছে লিয়াকতের নামে। রাজাপুর উপজেলায় জগাইর হাট গ্রামে নিজ মৌজায় নামে-বেনামে জমি ক্রয় করেছেন। কেরাণীগঞ্জ, ঝালকাঠী, রাজাপুর বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে অ্যাকাউন্ট খুলে রেখেছেন লাখ লাখ টাকা। এছাড়াও উমেদার লিয়াকতের বিভিন্ন সম্পত্তি রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উমেদার লিয়াকত সাব-রেজিস্ট্রারের খুবই ঘনিষ্ট জন। ফাইল ঠেকিয়ে অর্থ আদায়সহ লিয়াকতের মাধ্যমেই সাব-রেজিস্ট্রার অনৈতিক ঘুষ বাণিজ্য করেন। স¤প্রতি বিভিন্ন অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হন উমেদার লিয়াকত।
লিয়াকতের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের জন্য গোপনে বিভিন্ন দপ্তরে তদবির করেন। এদিকে পল্লবী ৮/বি ১/১ ফ্ল্যাটের বাসিন্দা মুন্সী সাজ্জাদ হোসেন আইজিআরের কাছে এক আবেদনে উল্লেখ করেছেন, কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে গত ৫ ডিসেম্বর ২০১৯ সালে করা দলিল নং ১০০৪২ এবং ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ করা ১৩৫৬ নম্বর দলিল দুটোই ভুয়া। তিনি ওই দুটি দলিল বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। ভুক্তভোগী আরো উল্লেখ করেন দক্ষিণ কেরানিগঞ্জ থানার আইস্তা মৌজার ১৫৪৮ অযুতাংশ ভূমির ওপর নির্মিত ১০ তলা ভবনের তৃতীয় তলার ৬৫০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটি তিনি ক্রয় করেন ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর দলিল নং ৭৬২১। এছাড়াও ১৪ শতাংশ ভিটি ভূমি দলিল নং ৭৬৬৬ দলিল তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ক্রয় করেন।
ওই সম্পত্তির বিপরীতে তিনি একটি ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন। মর্গেজ হিসেবে তার সম্পত্তির সকল কাগজপত্র নির্দিষ্ট ব্যাংকে গচ্ছিত রয়েছে। অথচ একটি চক্র সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রারের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক করে ওই সম্পত্তির পৃথক দু’টি দলিল করে নিয়েছে। সম্পত্তির যাতে কোনো ধরনের দলিল হতে না পারে এ জন্য তিনি লিখিতভাবে আগেই সাব-রেজিস্ট্রার মৃত্যুঞ্জয় শিকারীকে অবহিত করেছিলেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তিনি আইজিআরের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করে বিস্তারিত অবহিত করেন।
এ বিষয়ে মুন্সী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আইজিআর ৭ দিনের মধ্যে বিষয়টি সমাধানের জন্য সাব-রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দেন। এরপর সাব-রেজিস্ট্রার আমাকে ফোন করে নিজের দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চান। একই সাথে কিভাবে সমাধান করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করতে বলেন। নিজের সম্পত্তির ভূয়া দলিলের কারণে ভুক্তভোগী আজ দিশেহারা। আশ্চর্যের বিষয় হলোÑ গত ১ জানুয়ারি সৃজন করা ১৬ নম্বর দলিলটি নিয়ে নানা রকম অভিযোগ রয়েছে, ওই দলিলে উল্লেখ করা দাগে সমপরিমান জমি নেই। নেই খাজনা পরিশোধও।
মিথ্যার ওপরে তৈরি করা কাগজের ফটোকপি দিয়ে দলিলটি করা হয় বলে জানিয়েছেন সেখানকার কয়েকজন দলিল লেখক। এরকম অন্ততঃ বেশ কিছু ভুয়া দলিল করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মৃত্যুঞ্জয় শিকারী ও তার সহচর উমেদার লিয়াকত। শিকারীর সকল অনৈতিক কাজের সহযোগী হিসেব স্বীকৃত লিয়াকতের বরখাস্ত প্রসঙ্গে মৃত্যুঞ্জয় বলেন, আসলে ছেলেটা চক্রান্তের শিকার। ওর ফ্যামিলি ভালো। বাবা তিন বারের ইউপি সদস্য ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন। ওর নিয়োগ স্থগিত চিঠি প্রত্যাহারের চেষ্টা করা হয়েছিলো। কিন্তু ওর ভাগ্য ভালো না। উপরের নির্দেশে ওকে একেবারেই আসতে নিষেধ করে দিয়েছি। এদিকে গুরুতর অভিযোগ দিয়েছেন তার সহকারি নারী কর্মচারিও।
এদিকে মৃত্যুঞ্জয় শিকারী এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে নানান, অভিযোগ, দুর্নীতি, রাজস্ব ফাঁকির সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সংবাদকর্মীরা ইনভেস্টিগেশনে গেলে তার বাহিনী দ্বারা হুমকি-ধামকি দেন। এবং চতুর মৃত্যুঞ্জয় শিকারী সুকৌশলে রিপোর্ট না করার জন্য অনুরোধও করেন। গণমাধ্যম কর্মীদের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টাও করেন।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি