★ ধানমন্ডিতে আলিশান ফ্ল্যাট, যার আনুমানিক মূল্য ৬ কোটি টাকা
★ ঠিকাদারের কাছ থেকে উপঢৌকন বাবদ পৌনে এক কোটি টাকার বিলাসবহুল গাড়ি গ্রহণ
★ দেশ-বিদেশে নামে বেনামে শত শত কোটি টাকার অর্থ সম্পদের অভিযোগ
★ নাহীন রেজার বিরুদ্ধে দুইবার বিভাগীয় তদন্তে তিনি দোষী সব্যস্ত হন এবং তিরষ্কার দণ্ডে দণ্ডিত হন।
★ ৫টির অধিক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হতে প্রাপ্ত অর্থে হঠাৎ আঙুল ফুলে কলাগাছ
★ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জিম্মি করে উপঢৌকন হিসেবে গাড়ি নেয়ার অভিযোগ
★ অভিযোগ তদন্ত করবে দুদক
★ সওজ প্রধান প্রকৌশলীর অভিযোগ তদন্তের আশ্বাস
★ প্রতিবেদন প্রকাশের পূর্বে বক্তব্য চাওয়ায় লোক মারফত প্রতিবেদককে হুমকি
★ প্রতিবেদককে হুমকির নিন্দা জানিয়েছে জাতীয় প্রেসক্লাব, বিএসপি, ক্র্যাব, ডিআরইউ, ডিজ্যাব ও ডিজেএফ সহ অন্যান্য সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ
★ হুমকির বিরুদ্ধে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর নিন্দা
মুস্তাকিম নিবিড়: উন্নয়নের মহাসড়কে এখন বাংলাদেশ, আর তা নিশ্চিত করে চলছে সড়ক জনপদ অধিদপ্তর (সওজ)। সম্প্রতি সময়ে এর বিভিন্ন মেগা প্রজেক্ট এবং নান্দনিক সেতু নির্মাণ করে পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর (সওজ)। উন্নত দেশগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে তৈরি করছে নানান স্থাপনা, মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, একদিনে ১০০ সেতু উদ্বোধন গোটা বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে নতুন সড়ক নির্মাণ, প্রতিটি জেলায় চারলেন থেকে আটলেন এর মহাসড়ক নির্মাণ, ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সহ নানান জনকল্যাণকর স্থাপনা গড়ে তুলছে বাংলাদেশ সরকারের সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর, যার কারণে দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী প্রশংসার জোয়ারে ভাসছে সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর। যার দরুণ দেশের অর্থনৈতিক চাকার গতি আরো বেড়ে চলছে। সরকারের এই অসাধারণ অসামান্য উন্নয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরে ঘাপটি মেরে বসে আছে কিছু দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা-কর্মচারী। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন দুর্নীতি, ঘুষ গ্রহণ, ঠিকাদারদের জিম্মি করে উপঢৌকন গ্রহণসহ দেশ-বিদেশে নিজ নামে-বেনামে আত্মীয়-স্বজনের নামে শত শত কোটি টাকা অনিয়মের হাতিয়ে নিয়েছেন এবং পাচার করেছে পার্শ্ববর্তী দেশসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে। যা বর্তমান উন্নয়নের সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে এবং এসকল অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাদের সাথে গোপন আঁতাত রয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র এবং দণ্ডিত আসামি তারেক রহমান এবং বেগম জিয়ার দল বিএনপির বিভিন্ন নেতাকর্মীর সাথে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতাধীন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর দেশব্যাপী বিশাল ভূমিকা পালন করলেও কিছুসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সীমাহীন দুর্নীতির কারণে উন্নয়নের গতি কখনও কখনও থমকে যায়। এমনই একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার নাম দেওয়ান আবুল কাশেম মোহাম্মদ নাহীন রেজা। বর্তমানে তিনি সওজের মুন্সিগঞ্জ ডিভিশন অফিসে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, অনিয়ম, ঘুষ-দুর্নীতি ও কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে নিজ আত্মীয়-স্বজনসহ নামে-বেনামে বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক বনে গেছেন তিনি। সরেজমিন অনুসন্ধানে তার কিছু সম্পদের সন্ধান মিলেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডিতে তার রয়েছে ১৮০০ স্কয়ার ফিটের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট (ঠিকানা: ফ্ল্যাট: এ-৫, বাসা: ৪৪, সড়ক: ১৩/এ)। যার বাজার মূল্য কয়েক কোটি টাকা। উল্লেখিত বাসার নিচে একটি টয়োটা ইয়ারিশ ক্রস ব্র্যান্ডের গাড়িরও সন্ধান পাওয়া গেছে। গাড়ি নং: ঢাকা মেট্রো ঘ-২১-৯০৮৮। যার বাজার মূল্য প্রায় এক কোটি টাকা। অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, উল্লেখিত নম্বরের গাড়িটি গোপাল চন্দ্র সরকার নামের এক ব্যক্তির নামে রেজিস্ট্রেশন করা হলেও সেখানে দেওয়ান আবুল কাশেম মোহাম্মদ নাহীন রেজার দাপ্তরিক মোবাইল নম্বর (০১৭৩০৭৮২৬১৩) দেওয়া রয়েছে। গাড়িটি রেজিস্ট্রেশনের তারিখ: ০৪-০৯-২০২২ ইং। তার প্রতিষ্ঠানের নাম: সাগর ইনফো বিল্ডার্স লিমিটেড। অভিযোগ রয়েছে, গোপাল চন্দ্র সরকার নামক ঐ ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন উপায়ে সওজের বেশকিছু টেন্ডার পাইয়ে দিয়ে কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছেন দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী দেওয়ান আবুল কাশেম মোহাম্মদ নাহীন রেজা। বিলাসবহুল গাড়িটি নাহীন রেজাকে দিয়েছে গোপাল চন্দ্র সরকার, বিলাসবহুল গাড়ি লেনদেনের ক্ষেত্রে গোপাল চন্দ্র সরকারের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড রয়েছে। যদিও গোপাল সরকার বলেন, কাজ পাওয়ার আশায় নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধে এসব দুর্নীতি করতে তাকে বাধ্য করেছে প্রকৌশলী নাহীন রেজা। কারণ, টাকা না দিলে নাকি কাজ ও কাজের বিল আটকে রাখেন নাহীন রেজা সিন্ডিকেট।
তথ্যসূত্রে জানা গেছে, ডি.এ.কে.এম নাহীন রেজা ঠিকাদার গোপাল চন্দ্র সরকারের মাধ্যমে শত শত কোটি বিদেশে পাচার করেছেন। যদিও গোপাল চন্দ্র সরকার এ বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। শুধু তাই নয়, দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী ডি.এ.কে.এম নাহীন রেজার সঙ্গে দেশ ও রাষ্ট্রবিরোধী সংগঠনের সঙ্গে গভীর সম্পৃক্ততা রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে, যার অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। প্রকৌশলী নাহীন রেজার সাথে এক সমযের দুর্নীতির বরপুত্র মিঃ ১৫ ℅ খ্যাত বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক এর সাথে গভীর সম্পর্কের অভিযোগ উঠেছে। যদিও এ ব্যাপারে কোন প্রমাণ না থাকায় অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে অনুসন্ধান চলছে। দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী দেওয়ান আবুল কাশেম মোহাম্মদ নাহীন রেজার বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ এটাই প্রথম নয়। এর আগেও তার বিরুদ্ধে একাধিকবার বিভাগীয় মামলা হয়েছিল। ১৩/২০১৫ নং বিভাগীয় মামলায় তিনি দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় গত ১১ মে ২০১৫ ইং তারিখের ৩৫.০০.০০০০.০২৮.২৭.০১২.১৫-১৩৮ নং স্মারক মূলে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করা হয়। পরবর্তীতে ০৪/২০১৬ নং বিভাগীয় মামলায় তিনি দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় গত ১২ এপ্রিল ২০১৭ ইং তারিখের ৩৫.০০.০০০০.০২৮.২৭.০০৮.১৬-১২৪ নং স্মারক মূলে তাকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা, ১৯৮৫ এর বিধি ৪(২)(এ) মোতাবেক লঘু দণ্ড হিসেবে তিরস্কার দণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। পরপর দুইবার অনিয়ম-দুর্নীতির বেড়াজাল ছিড়ে মুক্ত হওয়ায় দুর্নীতিতে মত্ত হয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী দেওয়ান আবুল কাশেম মোহাম্মদ নাহীন রেজা। পদ-পদবী ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে নিজ পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিয়ে সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের বরাদ্দ থেকে মোটা অংকের কমিশন আদায় করেন ঠিকাদারদের কাছ থেকে। এভাবে তিনি বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক বনে যান। দুর্নীতিবাজ ও স্বেচ্ছাচারী এ কর্মচারীর ক্ষমতার হাত অনেক লম্বা। তাই তিনি ধরাকে সরা জ্ঞান মনে করেন। তার ভয়ে নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ কেউ করতে সাহস পায় না। সবাই তাকে সমীহ করে চলেন। বোদ্দা মহলের মতে, দেওয়ান আবুল কাশেম মোহাম্মদ নাহীন রেজার মতো দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলে অন্যান্য দুর্নীতিবাজ কর্মচারিও সতর্ক হয়ে যাবেন। এতে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সুনাম বৃদ্ধি পাবে বলে সচেতন মহলের অভিমত।
অভিযোগের বিষয়ে ডিএকেএম নাহীন রেজার বক্তব্য জানতে তার মুঠোফোনে কল দিলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পরপরই তিনি সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করেন।
গত ২ এপ্রিল প্রতিবেদকের রাস্তায় চলমান মটর সাইকেলের দুপাশে দুটি মটর সাইকেলে দুজন হেলমেট পরিহিত আরোহী প্রতিবেদককে সংবাদ না প্রকাশ করতে হুমকি দিয়ে বলেন, “রেজা সাবের বিরুদ্ধে নিউজ করলে বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাব এবং মামলা দিব”।
প্রতিবেদককে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় ফুসে উঠেছে সাংবাদিক অঙ্গনের বিভিন্ন সংগঠনের সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। হুমকির প্রতিবাদ এবং নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এবং প্রেস কাউন্সিল সদস্য এমজি কিবরিয়া চৌধুরী, প্রেসক্লাবের সাংবাদিক নেতা জিএম মাসুদ ঢালী ও মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ, ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সহ-সভাপতি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরাফাত দাড়িয়া, ওল্ড ঢাকা সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো. মতিউর রহমান, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক সোসাইটি এবং বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফাউন্ডেশন এর নেতৃবৃন্দসহ অন্যান্য পেশাদার সাংবাদিকগণ।
প্রতিবেদককে সংবাদ না প্রকাশ করা হুমকি দেয়ায় নিন্দা জানিয়েছে হিউম্যানিস্ট সোসাইটি এবং হিউমান এইড ইন্টারন্যাশনাল নামক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা।
নিন্দা জানিয়েছে সেন্ট্রাল লিগ্যাল এইড এর সাধারন সম্পাদক, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এ্যাডভোকেট জনাব রাসেল মল্লিক।
দেওয়ান আবুল কাশেম মোহাম্মদ নাহীন রেজার দুর্নীতির সম্পর্কে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. ইসহাক দৈনিক জাতীয় অর্থনীতিকে বলেন, এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তপূর্বক অভিযোগের সত্যতা পেলে আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং অচিরেই তদন্ত কমিটি গঠন করব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতিবিরোধী জিরো টলারেন্স নীতিতে আমি বিশ্বাস করি।
দুর্নীতি দমন কমিশন সূত্র জানায়, সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবুল কাশেম মোহাম্মদ নাহীন রেজার বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযোগের বিষয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। দুর্নীতি করে কেউই পার পাবে না।
বিগত দিনগুলোতে সড়ক ও জনপদ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব এ,বি,এম আমীনুল্লাহ নুরী’র দুর্নীতিবিরোধী কঠোর অবস্থানে স্বস্তি ফিরেছে সওজ ও জনপদ অধিদপ্তরে। তাই আশা করা যাচ্ছে, অচিরেই বিভাগীয় তদন্তের সম্মুখীন হবে দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা দেওয়ান আবুল কাশেম মোহাম্মদ নাহীন রেজা।