মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেনের আমন্ত্রণেই যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে আলোচনায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুললেন ব্লিংকেন।মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ব্লিংকেন সেখানে প্রারম্ভিক বক্তব্যেই বাংলাদেশের নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলেছেন।
ব্লিংকেন বলেছেন, আমরা তাকিয়ে আছি, গোটা বিশ্ব তাকিয়ে আছে বাংলাদেশের নির্বাচনের দিকে। আমাদের প্রত্যাশা, বাংলাদেশ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করে ওই অঞ্চলে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সময় দুপুর একটা বেজে ৫০ মিনিটের দিকে এই বৈঠক শুরু হয়। বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষেই আব্দুল মোমেনকে ওয়াশিংটন সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ব্লিংকেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমেরিকা ও বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা করে চলেছে। আর্থিক সম্পর্ক, দুই দেশের মানুষের সম্পর্ক, পরিবেশ, স্বাস্থ্য, মানবাধিকার-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়েছে। বাংলাদেশ যেভাবে ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে তারও প্রশংসা করেছেন ব্লিংকেন।
তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরো গভীর করা হবে। সেই সঙ্গে মানবাধিকারের বিষয়টি নিয়েও সহযোগিতা করা হবে। তারপরই তিনি বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচনের প্রসঙ্গ তোলেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রাথমিক বক্তব্যের যে ভিডিও আপলোড করেছে, তার মধ্যে নির্বাচন নিয়ে মোমেনের কোনো কথা নেই। তিনি আমেরিকাকে ধন্যবাদ দিয়েছেন সবসময় বাংলাদেশের পাশে থাকার জন্য, সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার হওয়ার জন্য। সহযোগিতার ক্ষেত্র ভবিষ্যতে আরো বাড়বে বলে মোমেন জানিয়েছেন।
পরে সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেছেন, আমি বলেছি, অবশ্যই। এটা আমাদের উদ্দেশ্য। আমরাও একটি মডেল নির্বাচন চাই। এ ব্যাপারে আপনারাও আমাদের সাহায্য করেন, যাতে আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন করতে পারি।
মোমেন বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের অঙ্গীকার আছে। আমরা ছবিসহ আইডি তৈরি করেছি, যাতে ভুয়া ভোট না হয়। আমরা স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স করেছি। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন করেছি। এই কমিশন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করবে বলে আশা করছি।
তিনি বলেন, নির্বাচন একা একা হয় না। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন পর্যবেক্ষক চাই। তবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন শুধু সরকার করতে পারে না। সব বিরোধী দলকে এগিয়ে আসতে হবে। তাদেরও এই ব্যাপারে অঙ্গীকার করতে হবে। তাদের অংশগ্রহণ ছাড়া অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়।
মোমেন আরও বলেন, নির্বাচনের সময় মানুষ মারা যান। কিন্তু আমরা চাই না, একজন মানুষেরও মৃত্যু হয়। আমরা নির্বাচন নিয়ে একটা পরিবেশ তৈরি করছি। সকলকে এই ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি যেমন মার্কিন পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানিয়েছেন, তেমনই বলেছেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তারাই জিতবেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করলেও গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হাত দেয়নি। শুধু সরকারি বা বেসরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করলে শাস্তি দেয়া হয়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে কেউ জনজীবন বিঘ্নিত করতে পারে না। আমেরিকা কয়েকজনের বিষয়ে ন্যায়বিচারের কথা বলেছে। আমরা জানিয়েছি, অবশ্যই ন্যায়বিচার হবে।
এ সময় বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয়ার দাবিও তিনি জানিয়েছেন।