পিতা ছিলেন বৃটিশ বিরোধী সশস্ত্র সংগ্রামের অগ্নিপুরুষ মাষ্টারদা সূর্যসেনের সরাসরি ছাত্র। জ্যোতির্ময় শিক্ষকের আপ্তবাক্যগুলির সেঁটে থাকার পিতৃমানস বেয়ে-বেয়ে বহমান এক মহৎমানুষের চলে যাওয়ার শূন্যতাখানি জুড়ে ফিরে-ফিরে আসে যে নির্মোহ তেজের সাথে সৎ-সাহসে গড়া এক দেশপ্রেমিকের বহুমাত্রিক বিভাবরী; রাতের এই নির্জন গভীরে নিদ্রাহীন সেখানেই আপনাকে দেখছিঃ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধূরী।
আমাদের ইতিহাসের সবচাইতে আলোকোজ্জ্বল দিনগুলি থেকে, কিংবা তারও আগে উড়ে-ঘুরে এসে আবারো যদি মুখোমুখি দাঁড়ায়- শেষপযর্ন্ত মৃত্যুর দোরগোড়ায়; সেখানের দৃশ্যমান সাড়ায় এতো-এতো নির্মানের মগ্নমুখর স্বপ্ন বাজপাখির মত উড়ে উড়ে বেড়িয়েছে যে, অবাক করা নানান ঘটনার জন্ম দিয়ে পঞ্চাশ বছর আগেই প্রকাশিত তিনি; যেন’বা এখনো শুনিঃ স্বপ্নবাজ এক লড়াকু যোদ্ধার পায়ে পায়ে’র পদধ্বনি।
সাহস আর সিদ্ধান্তের নানা বৃত্তান্তের পরতে-পরতে লন্ডন থেকে এফসিপিএস রেখে মুক্তিযুদ্ধে আসার কাল থেকে যেসব শিহরিত-সন্মোহিত ঘটনাগুলোর মাঝে তাঁর অবিচ্ছেদ্য আছে, সেগুলির সাথে আমাদের জাতীয় ইতিহাসের বিশেষ বিশেষ সময়ে বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমান থেকে তাজউদ্দীন আহমেদেরও আগে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী হয়ে জেনারেল ওসমানী-জিয়া-খালেদের সাথে-সাথে তর্কে-বিতর্কে নানাভাবে হলেও ইতিহাসের আলোকিত চরিত্রদের পিছু-পিছু, কিছু কিছু সময়ে আবার অনালোকিত কিংবা বিতর্কিতদের’ও ইচ্ছার পাশে (যেমনের একটিতে স্বৈরাচারী এরশাদের অষুধ নীতি প্রনয়নে) তাঁর নাম জনকল্যানের আলোচনায় আছে। সেইসাথে আবার জেনারেল জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে পাওয়া মন্ত্রীত্বের লোভনীয় প্রস্তাব প্রত্যাখানের কথাও শোনা আছে- মানুষের মুখে মুখে।
তাঁকে নিয়ে লেখা হয়েছে অসংখ্য; মিডিয়ার লাইভেও দেখা গেছে- সেইসব নিঃশঙ্ক! সহস্র সেইসবের বর্ণিল গাঁথায় প্রেরণার উজ্জ্বিবনী হয়ে বেঁচে থাকবেন-তিনি, বিদীর্ণতায় ভেঙ্গে পড়া মানুষের উঠে দাঁড়ানোর বাসনা হতে সামনে কিংবা আড়ালে সবসময়ে ছিলেন- যিনি। বিপন্ন-বাসিত সেইসব জীবনের মানস সরবর হয়ে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে প্রদীপ্ত জ্বলবেন- তিনি; বিজয়রাতের অসংখ্য প্রদীপের কম্পমান শিখার মতন নিভতে গিয়েও বারবার জ্বলে উঠবার এই অদম্য-অসামান্য-দরদী মানুষখানি।