বিষয়: সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) মুন্সিগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জনাব দেওয়ান আবুল কাশেম মোহাম্মদ নাহীন রেজা-এর বিরুদ্ধে পত্রিকায় প্রকাশিত অভিযোগের বিষয়ে জবাব প্রসঙ্গে।
সূত্র স্মারক: ৩৫.০০.০০০০.০৫০.১৪.০২১.১৯.৯৬, তারিখ: ১২/০৪/২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
মহোদয়,
যথাবিহিত সম্মান প্রদর্শনপূর্বক আপনার সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, গত ০৩/০৪/২০২৩ তারিখ ‘দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি’ পত্রিকায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) মুন্সিগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জনাব দেওয়ান আবুল কাশেম মোহাম্মদ নাহীন রেজা-এর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি, ঘুষ ও কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনসহ বিদেশে অর্থ পাচার সংক্রান্ত অভিযোগের আলোকে একটি তথ্যবহুল সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখিত বিষয়ে আমার বক্তব্য নিম্নরূপ:
মহোদয়,
আলোচ্য প্রতিবেদনটি কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানপূর্বক পরিবেশন করা হয়েছে। সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, জনাব দেওয়ান আবুল কাশেম মোহাম্মদ নাহীন রেজা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) মুন্সিগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কর্তব্যরত রয়েছেন। তার বর্তমান ঠিকানা: ফ্ল্যাট: এ-৫, বাসা: ৪৪, সড়ক: ১৩/এ, ধানমন্ডি, ঢাকা-তে গিয়ে জানা গেছে, সেখানে জনাব ডিএকেএম নাহীন রেজার ১৮০০ স্কয়ার ফুটের একটি আলীশান ফ্ল্যাট রয়েছে (বাড়ির ছবি সংযুক্ত)। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ০৬ (ছয়) কোটি টাকা। উল্লেখিত ঠিকানার বাসার নিচতলায় পার্কিংয়ে একটি টয়োটা ইয়ারিশ ক্রস ব্র্যান্ডের গাড়িরও সন্ধান পাওয়া গেছে (ছবি সংযুক্ত)। গাড়ি নং: ঢাকা মেট্রো ঘ-২১-৯০৮৮। যার বাজার মূল্য প্রায় এক কোটি টাকা। ঐ গাড়িটিতে সওজ-এর একটি স্টিকার লাগানো ছিল। গাড়ির ড্রাইভার জানান, জনাব ডিএকেএম নাহীন রেজা গাড়িটি ২০২২ সালে ব্যক্তিগত হিসেবে ক্রয় করেছেন। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, উল্লেখিত নম্বরের গাড়িটি গোপাল চন্দ্র সরকার নামের জনৈক ব্যক্তির নামে রেজিস্ট্রেশন করা হলেও সেখানে দেওয়ান আবুল কাশেম মোহাম্মদ নাহীন রেজার দাপ্তরিক মোবাইল নম্বর (০১৭৩০৭৮২৬১৩) দেওয়া রয়েছে। গাড়িটি রেজিস্ট্রেশনের তারিখ: ০৪-০৯-২০২২ ইং। জানা গেছে, গোপাল চন্দ্র সরকার সওজের একজন ঠিকাদার। তার প্রতিষ্ঠানের নাম: সাগর ইনফো বিল্ডার্স লিমিটেড, ঠিকানা: ফ্ল্যাট-৯/এ, হাউজ-৫৭, রোড-৪, ব্লক-সি, বনানী মডেল টাউন, বনানী আবাসিক এলাকা, ঢাকা। যেহেতু জনাব ডিএকেএম নাহীন রেজা সওজ-এর স্টিকার সংযুক্ত করে ব্যক্তিগতভাবে গাড়িটি ব্যবহার করছেন কিন্তু রেজিস্ট্রেশন রয়েছে জনাব গোপাল চন্দ্র সরকার নামের একজন ঠিকাদারের নামে। এ ব্যাপারে আরও গভীর অনুসন্ধান করতে জনাব গোপাল চন্দ্র সরকারের সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করি। জনাব গোপাল চন্দ্র সরকার প্রথমে গাড়িটি তার নিজের বলে উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে জনাব নাহীন রেজার দাপ্তরিক মোবাইল নম্বর সম্বলিত রেজিস্ট্রেশনের স্ক্রিনশট দেখালে জনাব গোপাল চন্দ্র সরকার গাড়িটি জনাব নাহীন রেজার নিকট বিক্রি করেছেন বলে দাবি করেন। একসময় জেরার মুখে ঐ ঠিকাদার নার্ভাস হয়ে অসংলগ্ন উত্তর দেন (ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষিত)।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সূত্র মতে, প্রকৌশলী নাহীন রেজার বিরুদ্ধে প্রায় প্রতি অর্থবছরেই অডিট আপত্তি রয়েছে। এ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে অডিট আপত্তির পরিমাণ ৮৫৬ কোটি ৫৬ লাখ ৬৫ হাজার ৬৪৫ টাকা। যার সবগুলোই পেন্ডিং ও অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে। যাতে প্রতীয়মান হয় যে, জনাব নাহীন রেজা নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারি আইন-কানুন অনুসরণ ব্যতিরেকে মনগড়া কর্মসূচি গ্রহণ করায় সরকারের বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, অনিয়ম, ঘুষ-দুর্নীতি ও কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে নিজ আত্মীয়-স্বজনসহ নামে-বেনামে বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক বনে গেছেন তিনি।
তথ্যসূত্রে জানা গেছে, জনাব ডি.এ.কে.এম নাহীন রেজা ঠিকাদার গোপাল চন্দ্র সরকারের মাধ্যমে শত শত কোটি বিদেশে পাচার করেছেন। শুধু তাই নয়, প্রকৌশলী ডি.এ.কে.এম নাহীন রেজার সঙ্গে দেশ ও রাষ্ট্রবিরোধী সংগঠনের সঙ্গে গভীর সম্পৃক্ততা রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিএনপি-জামায়াতসহ জঙ্গি সংগঠনগুলোকে অর্থায়ন করারও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। জনাব দেওয়ান আবুল কাশেম মোহাম্মদ নাহীন রেজার বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ এটাই প্রথম নয়। এর আগেও তার বিরুদ্ধে একাধিকবার বিভাগীয় মামলা হয়েছিল। ১৩/২০১৫ নং বিভাগীয় মামলায় তিনি দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় গত ১১ মে ২০১৫ ইং তারিখের ৩৫.০০.০০০০.০২৮.২৭.০১২.১৫-১৩৮ নং স্মারক মূলে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করা হয় (কপি সংযুক্ত)। পরবর্তীতে ০৪/২০১৬ নং বিভাগীয় মামলায় তিনি দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় গত ১২ এপ্রিল ২০১৭ ইং তারিখের ৩৫.০০.০০০০.০২৮.২৭.০০৮.১৬-১২৪ নং স্মারক মূলে তাকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা, ১৯৮৫ এর বিধি ৪(২)(এ) মোতাবেক লঘু দণ্ড হিসেবে তিরস্কার দণ্ডে দণ্ডিত করা হয় (কপি সংযুক্ত)। পরপর দুইবার অনিয়ম-দুর্নীতির বেড়াজাল ছিড়ে মুক্ত হওয়ায় দুর্নীতিতে মত্ত হয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন প্রকৌশলী দেওয়ান আবুল কাশেম মোহাম্মদ নাহীন রেজা। নিজ পদ-পদবী স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে নিজ পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিয়ে সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের বরাদ্দ থেকে মোটা অংকের কমিশন আদায় করেন ঠিকাদারদের কাছ থেকে। এভাবে তিনি বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক বনে যান। উল্লেখিত অভিযোগের বিষয়ে জনাব ডিএকেএম নাহীন রেজার দাপ্তরিক ও ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে সাংবাদিক পরিচয়ে বক্তব্যের জন্য বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি বক্তব্য না দিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। অভিযোগের বিষয় উল্লেখপূর্বক তার মুঠোফোনে ক্ষুদেবার্তা প্রেরণ করা হলেও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে সংবাদ প্রকাশের পর জনাব নাহীন রেজা সংক্ষুব্ধ হয়ে তার সহকর্মী তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জনাব মো. শামীমুল হকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আমাকে ও আমার সম্পাদককে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের নাম ব্যবহার করে ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং হামলা-মামলার হুমকি প্রদান করতে থাকেন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে মৌখিক এবং লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
জনাব নাহীন রেজার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়ন এবং বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগের ব্যাপারে গভীর অনুসন্ধান চলছে। অভিযুক্ত মানেই দোষী নয়। অনুসন্ধান চলছে। এ বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেলে পরবর্তীতে জানানো হবে।
অতএব, বিনীত আরজ এ ব্যাপারে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণে মহোদয়ের মর্জি হয়।
ধন্যবাদান্তে
(মুস্তাকীম নিবিড়)
বিশেষ প্রতিবেদক
দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি
৮৫/১, নয়াপল্টন (৫ম তলা), ঢাকা-১০০০।
০১৪০১৫২৪০৯৬