রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তান ও নিউ জিল্যান্ডের পঞ্চম টি-টোয়েন্টিকে দুটি পর্বে ভাগ করা যায়। মার্ক চ্যাপম্যান আসার আগে আর আসার পরে। মোহাম্মদ রিজওয়ানের ৯৮ রানের ইনিংসে পাকিস্তান ১৯৩ রান করে। বোলিংয়েও তারা দারুণ শুরু করে চার ওভারের মধ্যে তিন উইকেট নিয়ে। এরপর চ্যাপম্যানের আগমন, বদলে যায় দৃশ্যপট। তাকে দারুণ সঙ্গ দেন জিমি নিশাম। দুজনের রেকর্ড পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৬ উইকেটে পাকিস্তানকে হারায় নিউ জিল্যান্ড, যা টি-টোয়েন্টিতে তাদের শততম জয়।
প্রথম দুই ম্যাচ হারা নিউজিল্যান্ড শেষ ম্যাচ জিতে সিরিজ ২-২ এ ভাগাভাগি করলো। চতুর্থ ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেস্তে যায়।
আগে ব্যাট করা পাকিস্তান মোহাম্মদ রিজওয়ানের দুর্দান্ত এক ইনিংসে ভর করে তুলেছিল ৫ উইকেটে ১৯৩ রান। যে রান তাড়া করতে নেমে চ্যাপম্যানের ৫৭ বলে অপরাজিত ১০৪ রানের অবিশ্বাস্য এক ইনিংসে ৪ বল হাতে রেখেই ম্যাচ জিতে যায় নিউজিল্যান্ড। এ জয়ে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজেও ২-২ সমতা ফেরাল কিউইরা। এউইন মরগান ও আসগর আফগানকে (৪২) ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জেতা অধিনায়ক হওয়ার অপেক্ষাও বাড়ল বাবর আজমের। বৃষ্টিতে পন্ড হয়ে গিয়েছিল সিরিজের চতুর্থ টি-টোয়েন্টি।
তাড়া করতে নেমে নিউজিল্যান্ড ২৬ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর ক্রিযে আসেন চ্যাপম্যান। ইনিংসের মাত্র চতুর্থ ওভারের খেলা চলছে তখন। সেখান থেকে ড্যারিল মিচেলের সঙ্গে ৩৭ বলে ৪৭ রানের জুটি। মিচেল আউট হন ১৮ বলে ১৫ রান করে। দশম ওভারের খেলা চলছে তখন, নিউজিল্যান্ডের রান ৭৩।
বাকি গল্পটা চ্যাপম্যান-জিমি নিশাম জুটির। কিংবা বলা যায় শুধু চ্যাপম্যানেরই। নিশাম দারুণভাবে সঙ্গ দিয়ে গেলেন। ৩০ বলে ফিফটি করেন চ্যাপম্যান, তখনো মনে হয়নি ম্যাচটা পাকিস্তানের হাতছাড়া হয়ে যেতে পারেন। কিন্তু চ্যাপম্যান সেটাই করে দেখালেন। ৫৭ বলে অপরাজিত ১০৪ রানের ইনিংসে ছক্কা ৪টা, ১১টা চার। ওপাশে নিশামও কম যাননি। ২৫ বলে ৪৫ রানের ইনিংসে ২টি ছক্কার সঙ্গে ৪টি চার। তাতেই ম্যাচ বেরিয়ে গেল পাকিস্তানের হাত থেকে।
চ্যাপম্যান সেঞ্চুরিও পেয়েছেন, তাঁর দলও জিতেছে। ওদিকে একেবারে বিপরীত ভাগ্যবরণ করতে হয়েছে মোহাম্মদ রিজওয়ানের। জিমি নিশাম যখন পাকিস্তানের ইনিংসের ২০তম ওভারে বোলিং করতে আসেন, রিজওয়ানের রান তখন ৯৭। স্ট্রাইকেও তিনি। তাঁর সেঞ্চুরিটা তাই সময়ের ব্যাপারে মনে হচ্ছিল। বরং পাকিস্তানের রান ২০০ হয় কি না, সেটাই দেখার অপেক্ষা ছিল।
কিন্তু প্রথম বলেই ১ রান নিয়ে রিজওয়ান স্ট্রাইক দিলেন ইমাদ ওয়াসিমকে। ওই ওভারে দুটি চার মেরে ইমাদ আউট হলেন ইনিংসের চতুর্থ বলে। রিজওয়ান যখন আবার স্ট্রাইক ফিরে পেলেন ইনিংসের শেষ বলটাই শুধু বাকি। সেই বলটা ব্যাটে লাগাতে পারলেন না রিজওয়ান। বাই ১ রান হলো বটে। কিন্তু সেঞ্চুরি আর হলো না তাঁর, আটকে রইলেন ৯৮ রানেই।
তবে সেঞ্চুরি না পেলেও ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছেন পাকিস্তানি এই ওপেনারও। ৪ ছক্কা ও ৭ চারে তাঁর ৬২ বলে ৯৮ রানের ইনিংসে ভর করেই আগে ব্যাট করা পাকিস্তান তোলে ৫ উইকেটে ১৯৩ রান।
রিজওয়ানকে ইনিংসের শেষ দিকে দারুন সঙ্গ দিয়েছেন ইফতিখার আহমেদ ও ইমাদ ওয়াসিম।বিশেষ করে ইমাদের ১৪ বলে ৩১ রানের ক্যামিও ইনিংসেই পাকিস্তানের রান ১৯০ পেরিয়ে যায়।
এমনিতে পাকিস্তানের পুরো ইনিংসটা বেশ চড়াই-উৎরাই পেরোনো। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ২টি উইকেট হারালেও ৫১ রান তুলে ফেলে পাকিস্তান। ১০ ওভার শেষে রান হয় ৩ উইকেটে ৮০। ১০০ আসে ১২.২ ওভারে। পরের ৫০ রান তুল লে পাকিস্তান খেলে মাত্র ২৩ বল। রিজওয়ান ৪৬ বলে ৭১ রানের জুটি গড়েন ইফতিখারের সঙ্গে, ইমাদকে নিয়ে ৬৮ রান তোলেন মাত্র ৩৩ বলে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবই বৃথা গেল চ্যাপম্যানের তাণ্ডবে।