পরিবহনশ্রমিকদের হামলার ঘটনার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন শিক্ষার্থীরা। হামলার ঘটনার প্রতিবাদে আজ বুধবার সকাল সাতটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন তাঁরা। বেলা সাড়ে ১১টায় চলমান সংকট নিরসনে বৈঠকে বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদল। বৈঠকে প্রতি তিন দফা দাবি তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা। এই দাবিগুলো আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা অবরোধ প্রত্যাহার করবেন না বলে জানিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি হচ্ছে গতকালের ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার পদক্ষেপ গ্রহণ, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা করা এবং অনাবাসিক সব শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা বিধানে পদক্ষেপ নেওয়া।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কীর্তনখোলা মিলনায়তনে এই বৈঠকে উপাচার্য মো. ছাদেকুল আরেফিন এসব দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে শিক্ষার্থীদের অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। তবে শিক্ষার্থীরা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রায় এক ঘণ্টা আলোচনার পর বৈঠক শেষ হলে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ অব্যাহত রাখেন। একই সঙ্গে তাঁরা রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান কর্মসূচিস্থলের দিকে অগ্রসর হলে কাঁঠালতলা এলাকায় তাঁদের মিছিলটি আটকে দেয় পুলিশ। সেখানে বিপুলসংখ্যক পুলিশ জলকামানসহ অবস্থান নিয়েছে।
উপাচার্য মো. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, ‘যে ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। আমরা শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো শুনেছি এবং সেগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা চালাচ্ছি। প্রয়োজনে সব পক্ষের সঙ্গে বারবার বৈঠক করে সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ১১ শিক্ষার্থী আহত হন। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে নগরের রূপাতলী হাউজিং এলাকার কয়েকটি সড়কে শিক্ষার্থীদের মেসে এসব হামলা হয়।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের অবরোধে আটকে পড়া একটি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে বাসটি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। তবে যাত্রীদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বেলা ১১টার দিকে কুয়াকাটা এক্সপ্রেস নামে অবরোধে আটকা পড়া বাসটিতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। সড়ক অবরোধের কারণে বরিশাল থেকে বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা ও কুয়াকাটার অভ্যন্তরীণ পথ এবং ঢাকাসহ অন্যান্য দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ আছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে বাসশ্রমিকেরা মারধর ও লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন মহাসড়ক অবরোধ করার জের ধরে পরিবহনশ্রমিকেরা এই হামলা চালান।
প্রত্যক্ষদর্শী অন্তত চারজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল দিবাগত রাত সোয়া একটার দিকে নগরীর রূপাতলীতে শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসানের মেসে হামলা করেন কয়েকজন পরিবহনশ্রমিক। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মাহমুদুলকে উদ্ধারে এগিয়ে যান পাশের বিভিন্ন মেসের শিক্ষার্থীরা। এ সময় ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা দিয়ে আগত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়।
পরে ৬০ থেকে ৭০ জন পরিবহনশ্রমিক ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে রূপাতলী হাউজিংয়ের ১৮, ১৯, ২৩ ও ২৫ নম্বর রোডের মেসগুলোতেও তাণ্ডব চালান। রাত দুইটার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আহত বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অ্যাম্বুলেন্স গিয়ে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
আহত শিক্ষার্থীরা হলেন মৃত্তিকা ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের নুরুল্লাহ সিদ্দিকী, রসায়ন বিভাগের এস এম সোহানুর রহমান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আহসানুজ্জামান, গণিত বিভাগের ফজলুল হক রাজীব, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের আলীম সালেহী, বোটানি ও ক্রপ সায়েন্সের আলী হাসান, বাংলা বিভাগের মো. রাজন হোসেন এবং মার্কেটিং বিভাগের মাহবুবুর রহমান, মাহাদী হাসান ইমন, মিরাজ হাওলাদার ও সজীব শেখ। আহত শিক্ষার্থীরা হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে (পুরুষ) চিকিৎসাধীন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সুব্রত কুমার দাস বেলা পৌনে দুইটায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা দাবি আদায় না হওয়া অবধি অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি এবং এখনো তা অব্যাহত আছে। শিক্ষার্থীদের একটি দল রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান কর্মসূচি পালনের জন্য সেদিকে যাচ্ছে। সেখানে বিপুলসংখ্যক পুলিশ রয়েছে। আমাদের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা সেখানে গিয়েছেন, তাদের বোঝাচ্ছেন।’