প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ-জাপান বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ‘ব্যাপক অংশীদারিত্ব’ থেকে সফলভাবে ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বে’ পৌঁছেছে।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কিসিদা এবং আমি আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আদ্যপান্ত আলোচনা করেছি। আমরা খুব খুশী যে, আমরা বাংলাদেশ-জাপান বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পকর্কে ‘ব্যাপক অংশীদারিত্ব’ থেকে ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বে পৌঁছাতে পেরেছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিসিদার কার্যালয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর বিনিময় প্রত্যক্ষ করার পর যৌথ বিবৃতি প্রদানের পর এই মন্তব্য করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আজ, প্রধানমন্ত্রী কিশিদা এবং আমি “কৌশলগত অংশীদারিত্ব” বিষয়ে যৌথ বিবৃতি শেষ করেছি। আমি নিশ্চিত যে আমাদের দুই দেশের জনগণ এবং আমাদের সরকারের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার বোঝাপড়া, বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতা আগামী বছরগুলিতে আরও শক্তিশালী হবে।
“আমাদের দুই পক্ষ চুক্তি এবং স্মারকলিপি স্বাক্ষর করেছে – যা কৃষি, শুল্ক বিষয়ক, প্রতিরক্ষা, আইসিটি এবং সাইবার-নিরাপত্তা, শিল্প আপগ্রেডিং, বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি, জাহাজ পুনর্ব্যবহার এবং মেট্রো রেলের ক্ষেত্রে আমাদের ভবিষ্যত সহযোগিতাকে প্রাতিষ্ঠানিক করে তুলবে।”
দ্বিপাক্ষিক আলোচনায়, দুই পক্ষ রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে এমআইডিআই (মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন উদ্যোগ) এবং বিগ-বি ইনিসিয়েটিভ (দ্য বে অফ বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট) এবং অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব নিয়ে আলোচনা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে তারা আলোচনা করেছেন কারণ রোহিঙ্গাদের অতিরিক্ত উপস্থিতি বাংলাদেশের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে।
তিনি বলেন, আমরা জাপানকে মিয়ানমারের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে এই সঙ্কটের একটি টেকসই সমাধান খুঁজতে সাহায্য করার জন্য অনুরোধ করেছি।
ঢাকা-নারিতা সরাসরি ফ্লাইট চালুর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আনন্দের সাথে ঘোষণা করছি যে ঢাকা-নারিতা সরাসরি ফ্লাইট এ বছরের মধ্যেই চালু হতে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা বঙ্গোপসাগর ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলকে সংযুক্ত করার জন্য দক্ষিণ বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য এমআইডিআই এবং বিগ-বি ইনিসিয়েটিভ নিয়েও আলোচনা করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বৃহত্তম উন্নয়ন অংশীদারদের মধ্যে অন্যতম একটি হওয়ার জন্য আমরা জাপান সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা সামনের দিনগুলিতে একটি অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) সম্পন্ন করার অপেক্ষায় রয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপানে থাকা সবসময়ই আনন্দের বিষয়- আমার হৃদয়ের কাছাকাছি একটি সুন্দর দেশ।
তিনি বলেন, আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী পূর্ণ করার পর টোকিওতে সরকারি সফরে আসতে পেরে আমি বিশেষভাবে আনন্দিত।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী কিশিদা এবং জাপান সরকার তাকে এবং তার প্রতিনিধিদলকে যে আতিথেয়তা দিয়েছে তাতে তিনি গভীরভাবে মুগ্ধ।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে জাপান একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। জাপান সেই কয়েকটি দেশের মধ্যে ছিল যারা ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে প্রাথমিক স্বীকৃতি দেয়।
তিনি বলেন, ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক জাপান সফর তাদের দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের ভিত্তি স্থাপন করে।
এর আগে শেখ হাসিনা জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছালে জাপানি প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা সেখানে তাঁকে স্বাগত জানান এবং তাঁকে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা দেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সেখানে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রবেশপথে গার্ড অব অনারও পরিদর্শন করেন। এসময় দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়। দ্বিপাক্ষিক আলোচনা শেষে দুই সরকারপ্রধান যৌথ বিবৃতি প্রদান করেন।
কৃষিমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুল মান্নান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী জাপানে তাঁর চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরের দ্বিতীয় দিনের সূচনায় বেশ কিছু অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। তিনি ইম্পেরিয়াল প্যালেসে জাপানের সম্রাট নারুহিতোর সঙ্গে সাক্ষাত এবং জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োশিমাসা হায়াশি, বাংলাদেশ-জাপান কমিটি ফর কমার্শিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের চেয়ারম্যান, জাইকা প্রেসিডেন্ট, জেট্রো চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মৈত্রী সংসদীয় লীগের সভাপতির সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিয়েছেন।
এর আগে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী গতকাল (২৫ এপ্রিল) স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে টোকিওর হানেদা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান এবং শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে জাপান লাল গালিচা সংবর্ধনা এবং স্ট্যাটিক গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
শেখ হাসিনা কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর আগে ২০১৯ সালে শেষবার সফর করার তিন বছর পর জাপান সফরে গেলেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইট ২৫ এপ্রিল সকাল ৭টা ৫৬ মিনিটে (বাংলাদেশ সময়) ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ১৫ দিনের সরকারি সফরে ঢাকা ত্যাগ করেছেন।