‘বঙ্গবন্ধু ধান ১০০’ চাষ করে কৃষকরা বিগত সময়ে উদ্ভাবিত অনেক ধানের চেয়ে দেড় থেকে দুই গুণ বেশি ফলন পাচ্ছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটটি।
এ ছাড়াও ব্রি ধান-৮৯ ও ব্রি ধান ৯২-এর ফলনও প্রায় একই রকম পাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে এসব জাতের ধান চাষে ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে বলেও জানিয়েছে ব্রি। নতুন এসব ধান চাষ করে ৩৩ শতকে ৩৩ মণ অর্থাৎ প্রতি শতকে এক মণ ফলন পেয়েছেন কৃষকরা ।
সোমবার বিকালে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নে রাইস ফার্মিং সিস্টেম বিভাগের উদ্যোগে ব্রি উদ্ভাবিত নতুন জাতের ধান- ব্রি ধান ৮৯, ৯২ এবং বঙ্গবন্ধু ধান১০০ এর ফসল কর্তন ও মাঠ দিবসে ব্রি’র বিজ্ঞানী ও কৃষকরা ওই সব তথ্য জানান।
মাঠ দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো. শাহজাহান কবীর। বিশেষ অতিথি ছিলেন ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রশাসন মো. আব্দুল লতিফ।
রাইস ফার্মিং সিস্টেম বিভাগের প্রধান মো. ইব্রাহীমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কৃষক সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন ব্রি বিজ্ঞানী সমিতির সভাপতি ড. আমিনা খাতুন ও কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা তাসলিম, ব্রির রাইস ফার্মিং সিস্টেম বিভাগের সিনিয়র বিজ্ঞানী ড. খায়রুল কায়েস, এবিএম জামিউল ইসলাম ও মো. জাহাঙ্গীর সিরাজী।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ব্রি’র পরিচালক (প্রশাসন) মো. আব্দুল লতিফ বলেন, “ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত নতুন জাতগুলো ফলন আগের জনপ্রিয় জাত ব্রি ধান-২৮ ও ২৯ এর তুলনায় অনেক বেশি। এগুলো যদি ভালো পরিচর্যা করা যায় তাহলে অন্তত অনেক ধানের চেয়ে প্রায় দেড়/দুই গুণ বেশি ফলন পাওয়া সম্ভব। ”
ব্রি’র মহাপরিচালক মো. শাহজাহান কবীর বলেন, “নতুন জাতের এসব ধানের ফলন বেশি, কম সময়ে পাকে ও রোগ বালাইও কম হওয়ায় চাষিরা এ ধান চাষে আকৃষ্ট ও খুব লাভবান হচ্ছেন। এসব ধান প্রতি বিঘায় ৩০/৩২ মণ উৎপন্ন হয়। অন্য জাতের ধানের ফলন যেখানে ২০ মণের মতো হয়।”
দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে এসব জাতের ধান চাষের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রতি বছর আমাদের জনসংখ্যার সঙ্গে ২০-২২ লক্ষ লোক যোগ হচ্ছে। ১৭ কোটি জনসংখ্যার এই দেশে খাবারের নিশ্চয়তা দিতে হলে অবশ্যই ব্রি উদ্ভাবিত নতুন জাতের ধানগুলো চাষ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।”
তিনি আরও বলেন, “যেহেতু এ ধানের জাতগুলো ইন ব্রিড প্রকৃতির, তাই এগুলো চাষ করে পাওয়া ধানই বীজ হিসেবে সংগ্রহ করা যাবে। এই জাতগুলো বিএডিসির মাধ্যমে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া হবে। তবে কেউ চাইলে ব্রি থেকেও বীজ সংগ্রহ করতে পারবেন। “
‘বঙ্গবন্ধু ধান ১০০’ চাষে ফলন দেড়-দুই গুণ বেশি: ব্রি
স্থানীয় কৃষক আলতাফ হোসেন জানান, “আগে বিদেশে ছিলাম, কৃষি কাজ করতাম না। কৃষি কাজ অলাভজনক ভাবতাম। কিন্তু ব্রি ধান৮৯ ও ব্রি ধান৯২ এবং বঙ্গবন্ধু ধান১০০ আমার ধারণা বদলে দিয়েছে।
“আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর বিদেশ নয়, আমি দেশেই কৃষি কাজ করবো। নতুন জাতের ধান চাষ করবো। কেননা কৃষি এখন আগের তুলনায় বেশি লাভজনক।”
স্থানীয় মুক্তারপুর ইউনিয়নের ধনপুর এলাকার কৃষক মো. আলম জানান, “আমার ৬০ বছর বয়সে এ জাতের ধানের মত ফলন পাইনি। বাম্পার ফলন পাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু ধান ১০০ এবং ব্রিধান- ৯২ জাতের চাল চিকন।
“এ তিন জাতের ধান চাষে পানি কম লাগে, কীটনাশক লাগে না বললেই চলে। ফলনও অনেক বেশি হয়। এতে কৃষকদের মধ্যে এ ধান চাষে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।”