শিক্ষার্থীদের ওপর পরিবহণ শ্রমিকদের হামলার জেরে উত্তাল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি)। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বুধবার সকাল ৬টা থেকে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করে বরিশালের সঙ্গে অন্যান্য জেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
তারা বাস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। এ কারণে সড়কের দুদিকে ১০ কিলোমিটারজুড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীদের পাশাপাশি স্থানীয়রা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসে বিকাল সোয়া ৪টার দিকে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার রাতে মেসে মেসে ঢুকে হামলা চালিয়ে ববির ১৩ শিক্ষার্থীকে আহত করেন পরিবহণ শ্রমিকরা। তাদের বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুরে রূপাতলী বাস টার্মিনাল সংলগ্ন এলাকায় ‘বিআরটিসি বাস কাউন্টারের স্টাফরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে ছুরিকাঘাত এবং এক ছাত্রীকে লাঞ্ছিত করেন।
এ ঘটনার জেরে দুপুর থেকে দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ এবং কাউন্টার ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ বিআরটিসি কাউন্টারের স্টাফ রফিককে আটক করে।
ওই সময়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব দেন মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান তমাল। তিনি রূপাতলী হাউজিং এলাকায় একটি মেস বাসায় থাকেন।
ওইদিন ১টার দিকে তমালের মেসে হামলা করেন কতিপয় শ্রমিক। বিষয়টি তাৎক্ষণিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে কয়েকজন সহপাঠী তমালকে উদ্ধারে ছুটে এলে তার ওপর ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করেন শ্রমিকরা।
এ সময় কুপিয়ে এবং পিটিয়ে ১৩ শিক্ষার্থীকে আহত করা হয়। এতে মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নুরুল্লাহ সিদ্দিকী, রসায়ন বিভাগের এসএম সোহানুর রহমান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আহসানুজ্জামান, গণিত বিভাগের ফজলুল হক রাজীব, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের আলীম সালেহী, বোটানির আলী হাসান, বাংলা বিভাগের রাজন হোসেন, মার্কেটিং বিভাগের মাহবুবুর রহমান, মাহাদী হাসান ইমন, মিরাজ হাওলাদার ও সজীব শেখ আহত হন। রাতেই তাদেরকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এর প্রতিবাদে বুধবার সকাল ৬টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সম্মুখে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এর ফলে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এতে সড়কের রূপাতলী থেকে নথুল্লাবাদ এবং অপরপ্রান্ত দপদপিয়া জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটারজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে ‘সকাল ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা অতিক্রমকালে একটি যাত্রীবাহী বাস ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা।
বাসটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে কয়েকটি আলফা মাহেন্দ্রতেও আগুন দেন শিক্ষার্থীরা। খবর পেয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
পরে প্রশাসনের আশ্বাসে বিকাল সোয়া ৪টায় অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা। জানতে চাইলে বরিশাল-পটুয়াখালী মিনি বাস মালিক সমিতির সভাপতি কাউছার হোসেন শিপন বলেন, বিআরটিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রূপাতলী বাস মালিক সমিতির বিরোধ রয়েছে।
অপরদিকে ববি শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও বিআরটিসি স্টাফদের দ্বন্দ্ব রয়েছে। এ ঘটনায় আমাদের কোনো রকম সম্পৃক্ততা নেই। এরপরও শিক্ষার্থীরা আমাদের গাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করছে।
কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিয়েছেন। তাদের ওপর হামলায় জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
দুমকি (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, ছাত্রবিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধে বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটাসহ দক্ষিণাঞ্চলের সব রুটে যানচলাচল বন্ধ থাকায় লেবুখালী ফেরিঘাটে শত শত যাত্রী চরম দুর্ভোগে পড়েন।
ফেরি পারাপার বন্ধ থাকায় যাত্রীবাহী বাস, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সসহ অর্ধশতাধিক যানবাহন আটকে থাকে। আটকে পড়াদের মধ্যে অনেককে ট্রলার, রিকশা, অটোবাইক ও মোটর সাইকেলে নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে দেখা যায়।
ঢাবিতে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের মশাল মিছিল : ঢাবি প্রতিনিধি জানান, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মশাল মিছিল করেছে প্রগতিশীল ছাত্র জোট।
পাশাপাশি একই দাবিতে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র মৈত্রী ও ছাত্র ফ্রন্টসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন।
প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সন্বয়ক আল কাদেরী জয়ের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে শামসুন্নাহার হল, শাহবাগ মোড় প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়।
মিছিল-পরবর্তী সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফয়েজউল্লাহ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরীয়ার।
ছাত্রলীগের প্রতিবাদ : বুধবার ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল শর্মা রনী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মঙ্গলবার বরিশাল নগরীর রূপাতলী হাউজিং এলাকায় গভীর রাতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর শ্রমিক নামক সন্ত্রাসীদের বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ পরিবার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জ্ঞাপন করছে। ছাত্রলীগ সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ওই হামলায় আহত সব শিক্ষার্থীর সুস্থতা কামনা করেছেন।
বিচারের দাবি ছাত্র মৈত্রীর : নিন্দা ও বিচার দাবি করেছেন ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় নেতারা। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী আব্দুল মোতালেব জুয়েল ও সাধারণ সম্পাদক অতুলন দাস আলো এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, সর্বোচ্চ পর্যায়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের ওপর এ ধরনের বর্বরোচিত হামলা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ঘটনা।
ছাত্র ইউনিয়নের নিন্দা : ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল এক যৌথ বিবৃতিতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবি ছাত্র ফ্রন্টের : সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল কাদেরী জয় ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স এক যৌথ বিবৃতিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার নিন্দা জানান এবং হামলাকারী সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতারের আওতায় এনে বিচারের দাবি করেন।