বর্তমান সরকারের বিভিন্ন কার্যকর উদ্যোগের ফলে বিগত বছরগুলোতে দেশের শিক্ষাখাতে সংখ্যাগত দিক দিয়ে প্রসার ঘটেছে। দেশের বিশাল সংখ্যক তরুণ সমাজকে শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে সংখ্যাগত প্রসারের এ উদ্যোগ ছিল অপরিহার্য। তবে শিক্ষার মানোন্নয়নকেই এখন সরকার সবচেয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এজন্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রয়োজনীয় শিক্ষা অবকাঠামো গড়ে তোলাসহ একাডেমিক ও অবকাঠামোগত মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হচ্ছে। পাশাপাশি শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান, উদ্ভাবন ও গবেষণার পরিবেশ তৈরি, ইন্ডাস্ট্রি ও একাডেমিয়া কোলাবেরশন বৃদ্ধিসহ বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ মে) বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সুবর্ণজয়ন্তীর আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এসব কথা বলেন।
ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ এতে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রামের উপাচার্য ড. অনুপম সেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে উদ্ভাবন ও গবেষণা কার্যক্রম উৎসাহিত করতে গবেষণাখাতে বাজেট বরাদ্দ দ্বিগুণ করা হয়েছে। শিক্ষাখাতের সার্বিক বাজেটও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হয়েছে। শিক্ষার বাজেট বৃদ্ধির চেয়ে বরাদ্দ করা অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করাও জরুরি বলে অভিমত প্রকাশ করেন মন্ত্রী। ভবিষ্যতে শিক্ষার উন্নয়নে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
উচ্চশিক্ষার মানোন্ননে সক্ষমতার অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি না করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী। এছাড়া বিশ্বায়ন ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিজ্ঞান, তথ্য ও প্রযুক্তিভিত্তিক উচ্চশিক্ষা বিস্তারের ওপর জোর দেন। অন্যথায়, দ্রুত পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক শ্রমবাজারের উপযোগী মানবসম্পদ গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। তিনি পরিবর্তনের সঙ্গে সমন্বয় করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পুরোনো কোর্স কারিকুলাম বদলে আউটকাম বেইজড এডুকেশন কারিকুলাম অনুসরণের আহ্বান জানান।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী তার বক্তব্যে ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়নের সময় অবকাঠামোগত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে একাডেমিক লক্ষ্য সুস্পস্ট করার আহ্বান জানান।
ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৪৪ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। যা পৃথিবীর অনেক দেশের মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। এ বিশাল সংখ্যক কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে আধুনিক শ্রমবাজার উপযোগী দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে পাবলিক ও প্রাইভেট ব্যবস্থাপনায় ১৬৮টি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে। এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৪৪ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক বিষয়ে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কমিশনের মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত ও অনিয়ম/ ত্রুটি-বিচ্যুতি চিহ্নিত করতে অভিন্ন আর্থিক নীতিমালা এবং ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানুয়াল প্রণয়ন করা হয়েছে। যা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।
ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ইউজিসি সদস্য ও সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মো. আবু তাহের। ইউজিসির বর্তমান ও সাবেক সদস্য, পাবলিক ও প্রাইভেট বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী অনুষ্ঠানে অংশ নেন।