তীব্র দাবদাহে গণসংযোগ করতে করতে ঘেমে একাকার হয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। তারপরও ক্লান্তি নেই তাদের। জয়ের আশায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভোটারদের কাছে ছুটছেন মেয়র প্রার্থীরা। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। সুষ্ঠু ভোট হলে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে জয়ের আশা বরিশাল সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি ৪ প্রধান মেয়র প্রার্থীর।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাত বুধবার সকালে নগরীর বিএম স্কুলের হলরুমে ইমাম সমিতির নেতৃবন্দের সাথে মতবিনিময় করেন। সভায় ধর্ম নিয়ে মিথ্যে প্ররোচনায় কান না দিয়ে উন্নয়নের স্বার্থে যোগ্য ব্যক্তি নির্বাচিত করতে নৌকায় ভোট দিতে ইমাম সমিতির নেতাদের প্রতি আহবান জানান তিনি। এর আগে নগরীর কাশীপুরে ইউনিয়ন কৃষক লীগের এক নেতার জানাজায় অংশ নেন তিনি।
ইমাম সমিতির সাথে মতবিনিময় শেষে আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাত সাংবাদিকদের বলেন, আমি মানুষের দুঃখ-দুর্দশা প্রত্যক্ষ করেছি। বিগত দিনে অসামাজিক কার্যকলাপের কারনে এই শহরে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমি চাই বরিশাল একটি সুন্দর নগরী হিসেবে গড়ে উঠুক। এখানে একটা ভালো সমাজ গড়ে উঠুক। এখানকার মানুষ উন্নত জীবন যাপন করুক। এটা আমার দৃঢ় সংকল্প। এটা জননেত্রীরও সংকল্প। এসব বিবেচনায় নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। নির্বাচিত হতে পাড়লে অবশ্যই সেই দায়িত্ব পালন করবো।
সকালে নগরীর নাজিরের পোল থেকে সদর রোডের কাকলী মোড় পর্যন্ত গণসংযোগ করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। মানুষের নৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নয়নে ১২ জুন হাতপাখায় ভোট প্রার্থনা করেন তিনি।
গণসংযোগ শেষে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম গণমাধ্যমকে বলেন, ইসলামী আন্দোলন ধর্মের মধ্যেই আছে। যারা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে তাদের প্ররোচনায় ভোটারদের পড়া উচিত নয়। তিনি বলেন, বিগত সময়ে বরিশালে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজিি ও সন্ত্রাস হয়েছে। হাতপাখা নির্বাচিত হলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের পুনর্বাসন করে শান্তির শহর বিনির্মাণ করবেন। হাতপাখা বিজয়ী হলে এই শহরে কোন চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস, মাদক, চুরি-ডাকাতি এবং ইভটিজিং থাকবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
এদিকে সকালে নগরীর পোর্ট রোড এলাকায় গণসংযোগ করেন বিএনপির প্রয়াত সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের ছেলে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান রূপন।
গণসংযোগের প্রাক্কালে কামরুল আহসান রূপন সাংবাদিকদের বলেন, প্রচারণায় সমান সুযোগ পাচ্ছেন না তিনি। প্রশাসন সরকার দলীয় প্রার্থীর প্রতি সহানুভূতি দেখায় এবং অন্য প্রার্থীদের অহেতুক হয়রানি করে। এতে প্রতীয়মান হয় এখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। নির্বাচন কমিশন যত চেস্টা করুক নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন ছাড়া নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। সুষ্ঠু ভোটে নির্বাচিত হতে পাড়লে হোল্ডিং ট্যাক্স সামঞ্জস্যপূর্ণ করা, মশক নিধন, জলাবদ্ধতা নিরসনসহ নগরীর অবকাঠামো উন্নয়নে যথাযথ ভূমিকা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
এদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস ইউরোপীয় ইউনিয়ন কূটনীতিকদের সাথে বৈঠক করতে আজ ঢাকায় অবস্থান করেন। তাই বলে থেমে নেই তার পক্ষের প্রচারণা। লাঙ্গলের পক্ষে গতকাল নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন তাপসের সহধর্মীনি ইসমত আরা টুপুর এবং বোন অধ্যক্ষ তাহমিনা আক্তার। এছাড়া জাতীয় পার্টির জেলা ও মহানগর কমিটির নেতারা সকালে লাঙ্গল জেতাতে এক নীতিনির্ধারণী সভা করেন। পরে তারা নগরীর অক্সফোর্ড মিশন রোডে লাঙ্গলের পক্ষে গণসংযোগ করেন।
এ সময় লাঙ্গলের প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী ও মহানগর জাতীয় পার্টির আহবায়ক অধ্যাপক মহসিন-উল ইসলাম হাবুল বলেন, জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস ভোটের মাঠে উচ্চ পর্যায়ে আছেন। অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে লাঙ্গল বিজয় লাভ করবে। তিনি বলেন, লাঙ্গলের প্রার্থী বরিশাল নেই, তাই বলে বসে নেই তার পরিবারসহ দলের নেতাকর্মীরা। দলের অসংখ্য নেতাকর্মীরা লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নগরময় চষে বেড়াচ্ছেন। ১২ জুন ভোট কেন্দ্রে যেতে ভোটারদের উৎসাহিত করছেন তারা।
বরিশাল সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধি অপর ৩ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে জাকের পার্টির মিজানুর রহমান বাচ্চু মঙ্গলবার বিকেলে নগরীর ফরেস্টার বাড়ি এলাকায় গণসংযযোগ করেন। অপর দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী তৎপরতা দৃশ্যমান নয়।
আগামী ১২ জুন বরিশাল নগরীতে ভোট হবে ১২৬টি কেন্দ্রে ইভিএম মেশিনে। এবার বরিশাল সিটিতে ভোটার ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন।