ভোটের দিন অনিয়ম, গন্ডগোল, জবরদস্তি বা পেশিশক্তির প্রভাব খাটালে সুনির্দিষ্ট কেন্দ্রগুলোর ভোট বন্ধ করার নতুন বিধান যুক্ত করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী বিল সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ক্ষমতা ‘সীমিত’ হওয়ার এ বিল উত্থাপনে আপত্তি জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম। তবে তা কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
সোমবার (৫ জুন) বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে জাতীয় নির্বাচন সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনী বিল সংসদে উত্থাপন করেন আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। পরে বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। কমিটিকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সংসদে বিলের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে আইনের সংশোধনীর মাধ্যমে ‘ইসির ক্ষমতা খর্ব করা হচ্ছে’ দাবি করে বিলটি উত্থাপনে আপত্তি জানান ফখরুল ইমাম। তিনি বলেন, ভোটের দিন অনিয়মের কারণে সুনির্দিষ্ট কেন্দ্রগুলোর ভোট বন্ধ করার ক্ষমতা থাকলেও পুরো নির্বাচনী এলাকার সব ভোটকেন্দ্র বন্ধ করায় নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সংবিধানে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনতা দেওয়া হচ্ছে। আমরা ৫২ বছর পর হলেও নির্বাচন কমিশন (গঠন) আইন করেছি। নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনে স্বাধীন থাকবে। আমরা আইন করতে যাচ্ছি। আইন করে যদি স্বাধীনতাকে বাতিল করে দেই তাহলে কমিশন কীভাবে স্বাধীন থাকবে?
বিল সংশোধনী সংবিধানের চেতনা ও গণতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে জাপার এ এমপি বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ভূমিকার দেখতে চাই। কমিশন যা পাঠাবে তা সংসদে পাস করা উচিত।
ফখরুল ইমামের বক্তব্যের জবাবে আইনমন্ত্রী দাবি করেন, জোর-জবরদস্তি, গোলযোগ, সহিংসতায় তদন্ত সাপেক্ষে পুরো নির্বাচনী এলাকার ভোট বন্ধ করার ক্ষমতা (আরপিও ৯১ ক অনুচ্ছেদ) নির্বাচন কমিশনের রয়েছে। তবে নতুন করে একটি সংশোধনী আনা হয়েছে, যেখানে যেসব কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে সেগুলো বন্ধ করতে পারবে ইসি। এতে ইসির ক্ষমতা খর্ব করা হয়নি, বরং ইসিকে শক্তিশালী করা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, এ সংশোধনী সংবিধান বা গণতন্ত্রের পরিপন্থি নয়। আইনের ৯১ (এ) ধারায় বলা আছে, নির্বাচন কমিশন যদি দেখে কোনো নির্বাচনী এলাকায় সমস্যা হয়, প্রশ্ন থাকে, গন্ডগোল, ভোট দিতে বাধা দেওয়া হয়- তবে পুরো নির্বাচন বন্ধ করে দিতে পারে কমিশন।
আইনমন্ত্রী বলেন, দু-তিনটা কেন্দ্রে গন্ডগোল বা সহিংসতার কারণে সব কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করার ক্ষমতা কমিশনকে দেওয়া হচ্ছে না। এর মানে হচ্ছে, এটা গণতন্ত্রের পরিপন্থি নয়। কারণ যে কয়টায় সঠিকভাবে নির্বাচন হয়েছে, যেখানে গণতান্ত্রিকভাবে জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে, সেটা নির্বাচন কমিশন বন্ধ করতে পারবে না। যদি বন্ধ করতে পারত তবে তা অগণতান্ত্রিক হতো।
আরপিও বিলের বিধান অনুযায়ী, শুধু কয়েকটি কেন্দ্রের গোলযোগ-জবরদস্তির জন্য পুরো আসনের ভোট বন্ধ করার পথ রোধ হচ্ছে। সব কেন্দ্রে অনিয়ম না হলে পুরো আসনের ভোট বন্ধ করা যাবে না, শুধু গোলযোগপূর্ণ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করতে পারবে। এতে জাতীয় সংসদের কোনো আসনের নির্বাচনে সব কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ ছাড়া পুরো আসনের ভোটের ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে না ইসি। যেসব ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হবে, শুধু সেসব (এক বা একাধিক) কেন্দ্রের ভোট বা ভোটের ফলাফল বাতিল করার ক্ষমতা পাবে ইসি।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে মনোনয়নপত্র জমার সাতদিন আগে বিল পরিশোধের পরিবর্তে মনোনয়ন জমার আগের দিন পর্যন্ত পরিশোধের বিধান করা, নির্বাচনকালে পেশিশক্তির প্রভাব প্রতিরোধ করা, মনোনয়নপত্রের সাথে আয়কর সনদ জমা, গণমাধ্যমকর্মী ও পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আরপিও সংশোধন প্রয়োজন।