1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৮ অপরাহ্ন

বিদ্যুৎ উৎপাদনের যুগান্তকারী পদ্ধতি আবিষ্কার!চরম সংকটকালে

রিপোর্টার
  • আপডেট : বুধবার, ৭ জুন, ২০২৩

বর্তমান আধুনিক যুগে অন্যতম নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তু হিসেবে বিবেচিত বিদ্যুৎ। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপক প্রভাবের ফলে এই বিদ্যুৎ উৎপাদনের পদ্ধতি নিয়ে ভীষণ চিন্তায় পড়েছেন বিজ্ঞানীরা। কেননা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মানব সভ্যতার অস্তিত্বকেই হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।

ঠিক এমন সময় দূষণহীন জ্বালানি ও বিদ্যুৎ তৈরির অভাবনীয় এক পদ্ধতির আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই আবিষ্কার পরিবেশসম্মতভাবে জ্বালানি উৎপাদনে বিপ্লব আনতে পারে।

পদ্ধতিটিও চমৎকার। ইতঃপূর্বেও জলীয়বাষ্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা হয়েছে। ২০২০ সালের এক গবেষণায় দেখা যায় ব্যাকটেরিয়া থেকে সংগ্রহ করা উপাদান বাতাস থেকে জলীয়বাষ্প শুষে নিতে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণাটি আগের সেই গবেষণার ওপর ভিত্তি করেই এগোয়। গত ৫ মে ‘অ্যাডভান্সড মেটেরিয়ালস’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এর বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ।

এতে বিজ্ঞানীরা জানান, কাঠ বা সিলিকনসহ যেকোনও উপাদান দিয়েও জলীয়বাষ্প শুষে নেওয়া সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, প্রথমে পদার্থটিকে পিষে ছোট ছোট খণ্ডে রূপ দিতে হবে, এরপর আনুবীক্ষণিক ছিদ্র-যুক্ত করে তা পুনরায় তৈরি করতে হবে।

গবেষণা নিবন্ধের জ্যেষ্ঠ লেখক এবং ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক জুন ইয়াও বলেন, “আমরা যা আবিষ্কার করেছি, তাকে সামনে ছোটখাট মানব-নির্মিত মেঘ হিসেবেও কল্পনা করতে পারেন। খুব সহজে এটা সবাই ব্যবহার করতে পারবে। মিলবে সার্বক্ষণিক পরিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ। একবার ভাবুন, এটি নিয়ে যেখানেই যান না কেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবেন অনায়সে।”

হোক সে পাহাড়, অরণ্য, মরুভুমি বা প্রত্যন্ত গ্রাম অথবা চলতি পথ; বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানি পোড়ানো বা নির্দিষ্ট স্থানে অবকাঠামো নির্মাণের দরকার হবে না আর। অনেকটা ভ্রাম্যমাণ জেনারেটরের কাজই করবে এই আবিষ্কার। এজন্য এর নামও দেওয়া হয়েছে ‘এয়ার-জেন’ বা বায়ু জেনারেটর।

এয়ার-জেন- এর বড় সুবিধা হচ্ছে, মোটামুটি সব পরিবেশেই থাকে জলীয়বাষ্প। আর সেই বাষ্প থেকেই উৎপন্ন করে বিদ্যুৎ।

অন্যদিকে, সৌর ও বায়ু বিদ্যুতের মতো পরিচ্ছন্নভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আবহাওয়া অনেক বড় বিষয়। যেমন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে বা রাতের বেলায় সোলার পাওয়ার উৎপাদন হয় না। বাতাসের গতি না থাকলে থমকে যায় বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদন।

সব পরিবেশে কাজ করলেও, কিছু পরিবেশে বেশি সক্ষম হবে এয়ার-জেন। যেমন শুস্ক বাতাবরণে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে সীমিত, আবার উষ্ণ জঙ্গলের আবহাওয়ায় বিপুল বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে।

ইয়াও বলেন, সব মিলিয়ে বলা যায় প্রায় সর্বত্রই নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে এয়ার-জেন’কে। তবে শীতকালে এবং শুস্ক, হিম বায়ুপ্রবাহ আছে এমন অঞ্চলে কম বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। সে তুলনায়, গ্রীষ্মকালে ভালো পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করবে।

সবচেয়ে আশ্চর্য হলো, এয়ার-জেন এর আকার একটি চুলের চেয়েও পাতলা; যার গায়ে আছে খালি চোখে দেখা সম্ভব নয়, এমন অজস্র ছিদ্র। এসব ছিদ্র প্রস্থে ১০০ ন্যানোমিটারের চেয়েও ছোট, যা দিয়ে জলীয়বাষ্প প্রবেশ করতে পারে। আর প্রবেশ করা মাত্রই ডিভাইসটির উপরের অংশের সাথে নিচের অংশের এক ধরনের বৈদ্যুতিক চার্জের ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়। ফলে ধণাত্মক ও ঋণাত্মক দুই মেরু তৈরি হয়ে এটি কার্যত একটি ব্যাটারি হয়ে ওঠে।

ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগের গ্যাজুয়েট ছাত্র এবং গবেষণা নিবন্ধের অপর লেখক জিয়াওমেং লিউ বলেন, “স্রেফ বায়ু থেকে দূষণমুক্ত বিদ্যুৎ আহরণের নতুন দুয়ার খুলেছি আমরা।”

ইয়াও জানান, তাদের তৈরি ক্ষুদ্র এয়ার-জেন বর্তমানে কম্পিউটার স্ক্রিনে একটি বিন্দুর মতোন দেখায়– এত ছোট বাল্বকে জ্বালাতে পারে। কারণ, ডিভাইসের আকার ছোট হওয়ায় উৎপাদন শক্তিও তেমনই কম। তবে এ ধরনের বহু ডিভাইসকে একত্রিত করা সম্ভব। মাঝে শুধু বাতাস চলাচলের মতো ছোট ফাঁক রাখলেই চলবে। এভাবে যে বিপুল বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে– তা সংরক্ষণের জন্য ভিন্ন ব্যবস্থার দরকার হবে।

ইয়াও এর হিসাবমতে, ১০০ কোটি এয়ার-জেনকে একের পর এক রাখলে, তার উচ্চতা হবে একটি রেফ্রিজেরেটর এর সমান। উৎপাদন করতে পারবে এক কিলোওয়াট বিদ্যুৎ, যা সাধারণ অবস্থায় একটি বাড়ির আংশিক বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে পারবে।

বিজ্ঞানীরা এখন চেষ্টা করছেন এয়ার-জেন এর সক্ষমতা বাড়াতে, তারা সফল হলে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনে আরও কম সংখ্যক ডিভাইস দরকার হবে। তাছাড়া, ডিভাইসের আকার বড় করার চিন্তাও করছেন তারা। আদ্রতা শুষে নেওয়ার ক্ষমতা হ্রাস না করেই সেটা করা যাবে এমন আশাবাদ ইয়াওয়ের।

তবে এসব কাজে কতদিন লাগতে পারে, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা দিতে পারেননি তিনি। শুধু বলেন, “আমরা যদি একে আরো উন্নত করতে পারি, তাহলে যেকোনও জায়গায় এটি রাখা যাবে।”  সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি