প্রত্যর্পণযোগ্য সম্পত্তি প্রত্যর্পণ না হওয়া পর্যন্ত ওই সম্পত্তি জেলা প্রশাসকের (ডিসি) নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং তিনি প্রচলিত আইন অনুযায়ী তা ইজারা দেবেন—আইনের এমন বিধান বৈধ বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের তিনটি ধারার বৈধতা নিয়ে করা পৃথক রিট খারিজ করে (রুল ডিসচার্জ) রায় দিয়েছেন হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ। রায়ে আদালত বলেছেন, আইনের ৯, ১৩ ও ১৪ ধারা সংবিধান পরিপন্থী নয়।
বিচারপতি নাইমা হায়দারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন, বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান।
আইনের তিনটি ধারা নিয়ে পৃথক দুটি রিটের পরিপ্রক্ষিতে ২০১২ সালে হাইকোর্ট রুল দিয়ে চট্টগ্রাম ও খুলনার সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির অবস্থান ও দখলের ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে আজ রায় দেওয়া হয়।
২০০১ সালের অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের ৯ ধারায় প্রত্যর্পণযোগ্য সম্পত্তির তালিকা প্রকাশ করার বিষয়ে বলা আছে।
আইনের ১৩ ধারায় প্রত্যর্পণযোগ্য সম্পত্তিসংক্রান্ত মামলার অ্যাবেটমেন্ট (বাতিল) কার্যধারা বন্ধ ও ট্রাইব্যুনালে দাবি উত্থাপন বিষয়ে বলা আছে। ধারাটির ভাষ্য, ‘সরকারি গেজেটে প্রকাশের তারিখে যদি কোনো আদালতে এমন দেওয়ানি মামলা অনিষ্পন্ন থাকে, যা ওই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত কোন সম্পত্তিতে স্বত্ব দাবি করে বা তা অর্পিত সম্পত্তি মর্মে দাবি করে কোনো প্রতিকার প্রার্থনা করা হলে মামলায় সম্পত্তির যতটুকু জড়িত, ততটুকু বাবদ মামলাটি আপনা–আপনি অ্যাবেটেড (বাতিল) বলে গণ্য হবে।’
আর ১৪ ধারায় প্রত্যর্পণযোগ্য সম্পত্তি জেলা প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণ ও অস্থায়ী ইজারা প্রদান বিষয়ে বলা আছে।
আইনজীবীদের তথ্যমতে, খুলনার সম্পত্তি তালিকাভুক্তি নিয়ে ২০১২ সালে হাইকোর্টে শ্যামল কুমার সিনহা রায় এবং চট্টগ্রামের এক সম্পত্তি নিয়ে মশিউর রহমান বেগ একই বছর আরেকটি রিট করেন। রিটে আইনের ৮, ১৩ ও ১৪ ধারার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। রিটের প্রাথমিক শুনানি ২০১২ সালে হাইকোর্ট রুল দিয়ে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির অবস্থান ও দখলের ওপর পক্ষগুলোকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দেন। গুরুত্বপূর্ণ আইনগত প্রশ্ন ও ব্যাখ্যা জড়িত থাকায় এ–সংক্রান্ত রুল চূড়ান্ত শুনানির জন্য বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করেন দেন।
রুলের ওপর শুনানি শেষে গত ২৩ মে হাইকোর্ট রায়ের জন্য ৮ জুন দিন ধার্য করেন।
এর ধারাবাহিকতায় আজ রায় দেওয়া হয়। রায়ে হাইকোর্ট সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির ওপর এর আগে দেওয়া স্থিতাবস্থা প্রত্যাহার করেছেন।
আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী ও মো. ওমর ফারুক। ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। খুলনা ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের পক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।