পঞ্চম দিন পর্যন্ত অ্যাশেজ সিরিজের রোমাঞ্চ ছড়িয়ে গেছে। এজবাস্টনে প্রথম টেস্টের পঞ্চম দিনের শেষ বিকেলে গিয়ে ম্যাচের ফল নির্ধারিত হয়েছিল। জয়ের কাছাকাছি গিয়েও হারের তিক্ততা নিয়ে সিরিজ শুরু করেছে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। দারুণ শুরুর পর সেই দাপট অস্ট্রেলিয়া লর্ডসের দ্বিতীয় টেস্টেও টেনে নিয়ে যায়। তবে এই ম্যাচও আর একপাক্ষিক নয়, চতুর্থ দিনের শেষ সেশনে ৬৯ রানের জুটি গড়ে লড়াইয়ে ফিরেছে ইংলিশরা। শেষ দিনে তাদের প্রয়োজন ২৫৭ রান, অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার দরকার ৬ উইকেট।
২ উইকেটে ১৩০ রান থাকাবস্থায় অস্ট্রেলিয়া তৃতীয় দিন শেষ করেছিল। ততক্ষণে তাদের লিড দাঁড়ায় ২২১ রান। কিন্তু চতুর্থ দিন ইংল্যান্ড পেসারদের তোপে মাত্র ২৭৯ রানেই অলআউট হয়ে যায় প্যাট কামিন্সের দল। তবে এর মধ্যে অজিরা ৩৭১ রানের চ্যালেঞ্জিং টার্গেট পেয়ে যায়। এরপর জবাবে ব্যাট করতে নামা ইংলিশদের দ্রুত চার উইকেট পতনে ম্যাচের লাগাম অনেকটাই নিজেদের হাতে নিয়ে নেয় সফরকারীরা।
৪৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে কার্যত ধুঁকছিল ইংল্যান্ড। সেখান থেকে আগের ইনিংসে ৯৮ রানে আউট হওয়া বেন ডাকেটকে নিয়ে জুটি গড়েন ইংলিশ অধিনায়ক বেন স্টোকস। তবে এই ইনিংসেও ফিফটি পাওয়া ডাকেটের সঙ্গে ঘটে গেছে চরম নাটকীয়তা! হাফসেঞ্চুরি তুলতেই তিনি তৃতীয়বারের মতো ‘জীবন’ পেয়েছেন। হয়তো আগের ইনিংসে সেঞ্চুরির আক্ষেপ পূরণে তাকে আরেকবার সুযোগ দিয়েছেন ‘ক্রিকেট বিধাতা’!
অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই মিচেল স্টার্কের বলে ডাকেটের ক্যাচ ছাড়েন ক্যামেরন গ্রিন। তৃতীয় ওভারে সেই স্টার্কের বলেই রিভিউ নিয়ে টিকে যান। আর ফিফটি তুলে নেওয়ার পরের ওভারে গ্রিনের বলে ফাইন লেগে স্টার্কের হাতে ধরা পড়েন। আউট ধরে নিয়ে ড্রেসিংরুমের পথে হাঁটাও ধরেছিলেন ডাকেট। তখনই মাঠের আম্পায়াররা তাকে ফিরে আসতে বলেন। স্টার্ক ক্যাচটা নিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু শারীরিক ভারসাম্য ঠিক রাখতে গিয়ে বলসহ হাতটা রেখেছিলেন মাটিতে। তার এই অসতর্কতায় শুধু ডাকেট নন, ইংল্যান্ডও যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে!
কাল চতুর্থ দিনের পড়ন্ত বিকেলে ডাকেট আউট হলে যে আজ শেষ দিনের রোমাঞ্চ বলতে তেমন কিছু থাকত না। অধিনায়ক বেন স্টোকসকে করতে হতো ২০১৯ অ্যাশেজে হেডিংলি টেস্টের পুনরাবৃত্তি। আপাতত স্টোকসকে পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করতে হচ্ছে না ডাকেট শেষপর্যন্ত টিকে আছেন বলেই। তাকে সঙ্গী করেই পঞ্চম দিনে খেলতে নামবেন স্টোকস।
এর আগে নিজেদের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করতে নেমে নতুন বলে স্টার্ক ও প্যাট কামিন্সের তোপে একসময় ৪৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে ইংলিশরা। তবে পঞ্চম উইকেটে ডাকেট–স্টোকসের ৬৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে সিরিজে সমতা ফেরানোর আশা ভালোভাবেই জিইয়ে রেখেছে। স্বাগতিকরা আর কোনো উইকেট না খুইয়ে চতুর্থ দিন শেষ করেছে ১১৪ রানে। জিততে হলে আজ শেষ দিন তাদের দরকার আরও ২৫৭ রান, অস্ট্রেলিয়ার চাই ৬ উইকেট।
চতুর্থ দিনের শুরুতে উসমান খাজার ফিফটিতে অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংসে ২৭৯ রান তোলে। স্টুয়ার্ড ব্রড নেন ৪ উইকেট। তবে ঘটনাবহুল দিনে সবচেয়ে আলোচিত নাম নাথান লায়ন। লর্ডস টেস্ট এমনিতেই লায়নের জন্য মাইলফলকের। ইতিহাসের প্রথম বোলার হিসেবে টানা ১০০ টেস্ট খেলার কীর্তি গড়েছেন ঐতিহাসিক ভেন্যুতেই। তবে বিশেষ ম্যাচটিই তার পথচলায় বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে।
পরশু ফিল্ডিংয়ের সময় বাউন্ডারি লাইনে বেন ডাকেটের একটি শট আটকাতে গিয়ে পায়ের মাংসপেশিতে চোট লাগে। ফিজিওর কাঁধে ভর দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে মাঠ ছাড়ার পর অনেকে ধরেই নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ান স্পিনারের অ্যাশেজ বুঝি শেষ। তবে তিনি নেমেছিলেন ব্যাট হাতেও। স্টার্কের সঙ্গে এরপর গড়েন ১৫ রানের জুটি। আগের টেস্টে কামিন্সের সঙ্গে দৃঢ় জুটিতে ইংলিশদের হারিয়ে দিয়েছিলেন লায়ন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর : লর্ডস টেস্ট (চতুর্থ দিন শেষে)
অস্ট্রেলিয়া : ৪১৬ ও ২৭৯
(খাজা ৭৭, স্মিথ ৩৪; ব্রড ৪/৬৫, রবিনসন ২/৬৮)
ইংল্যান্ড : ৩২৫ ও ৩১ ওভারে ৪/১১৪
(ডাকেট ৫০*, স্টোকস ২৯*; কামিন্স ২/২০, স্টার্ক ২/৪০)