1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৩ অপরাহ্ন

‘আমার সব ভার নেমে গেছে ভাই’

রিপোর্টার
  • আপডেট : শনিবার, ৮ জুলাই, ২০২৩
ভয়ংকর চাপ থেকে মুক্তির উচ্ছ্বাস টেলিফোনের ওপ্রান্তে, ‘আমার জীবনের সব ভার নেমে গেছে ভাই!’ ওপ্রান্তে তামিম ইকবালের কণ্ঠে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর জীবনের যে গল্প বলেছেন, নিজের অনুভূতির কথা বলেছেন, যেভাবে আমাকে বুঝিয়েছেন…এরপর আর কিছু বলার থাকে না। আমি খুশি মনে আবার মাঠে ফিরব ইনশাআল্লাহ।’

সেই ফেরা দেড় মাসের ছুটি কাটিয়ে। প্রথমে সপরিবারে দুবাই যাবেন।

এরপর ইংল্যান্ডে যাওয়ার কথা কোমরের নিচের অংশের যে চোট নিয়ে এত ‘কাণ্ড’, তা সারিয়ে তুলতে। গতকাল দুপুরে প্রায় তিন ঘণ্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সবিস্তার আলোচনার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত বদলে ২০২৩ বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্নজাল বুনছেন তামিম ইকবাল খান। তার আগে এশিয়া কাপেও তাঁকে দেখা যাবে। তো, ওয়ানডে অধিনায়কও কি থাকছেন তামিম ইকবাল? প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন, ‘এটি সবার জন্য স্বস্তির।
আরে, আমাদের অধিনায়ক যদি না থাকে, তাহলে খেলব কী করে!’ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ও বিসিবি সভাপতির সামনে তামিম ইকবালের আলোচনার নির্ঘণ্টও বলছে, ২০২৩ বিশ্বকাপে অধিনায়কত্বের পূর্বপরিকল্পনায় কোনো বদল হবে না। তামিমই টস করবেন বিশ্বকাপে। বৃহস্পতিবার দুপুরে তামিমের অশ্রুসজল বিদায়ি সংবাদ সম্মেলনের পর রাত থেকে বদলাতে থাকে দৃশ্যপট। তামিম নিজে থেকেই সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন জেনে বারবার ফোনে অধিনায়ককে পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন নাজমুল হাসান।

কিন্তু ফোন ধরেননি তামিম। স্থির সিদ্ধান্তে যে পৌঁছে গেছেন তিনি! সেদিন রাতে জরুরি বোর্ড সভা শেষে নাজমুল হাসান এ নিয়ে উষ্মাও প্রকাশ করেন। তবে বোর্ডের দরজা তামিমের জন্য খুলে রেখেই রাতে ঘুমাতে যান তিনি। সকাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মাঠে নামেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘বড় ভাই’ মাশরাফি বিন মর্তুজা, যাঁর কথা তামিম যে ফেলতে পারবেন না, এটা ক্রিকেটাঙ্গনের ঘাস-লতাপাতাও জানে। তো, বৃহস্পতিবার রাতেই টেক্সট আদান-প্রদান হয়েছিল দুজনের।

সকালে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা ফেরা তামিমকে ফোনে পেয়েই মাশরাফির অধিনায়কসুলভ নির্দেশ, ‘তুমি এখনই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির উদ্দেশে রওনা হও। আমিও স্টার্ট করছি।’

প্রধানমন্ত্রী সময় দিয়েছিলেন ১০ মিনিট। কিন্তু মাশরাফির ঠিক মনে নেই কতক্ষণ গণভবনে ছিলেন, ‘অনেকক্ষণ। একটা সময় আমি উঠে যাই। আমার মনে হয়েছিল তামিমের যদি আরো কিছু বলার থাকে, তবে সেটা সে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে মন খুলেই বলুক। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা কথা হয়েছে তামিমের।’

তামিমের নিজের ঘড়ি বলছে আরো বেশি, ‘আমি ভাবিনি প্রধানমন্ত্রী এত সময় দেবেন। উনি আমার আর আমার স্ত্রীর সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো কথা বলেছেন। উনার পরিবারের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড় সামলে কিভাবে এত দূর এসেছেন, সেই আবেগঘন বর্ণনা শুনে আমি বিস্মিত হয়েছি। উনি আমাকে যে সাহস জুগিয়েছেন, তা বলে বোঝাতে পারব না। বলতে পারেন, আমার ছোট্ট এই জীবনে আজকের দিনটি ভীষণ স্পেশাল।’

১০ মিনিটের বৈঠকের কথা জেনে গণভবনে ঢোকা তামিম ইকবালকে ঘিরে ধরেছিলেন উপস্থিত কর্মকর্তারা। সবার এক কথা—অবসর থেকে ফিরতে হবে। মাশরাফিসহ ভেতরে ঢোকার পর তামিমকে দেখে প্রধানমন্ত্রী বলে ওঠেন, ‘কী পাগলামি শুরু করেছ? খেলা ছাড়বে কেন? আমি কোনো কথা শুনব না। তুমি যত দিন খুশি ছুটি নাও, চিকিৎসা করাও। কিন্তু বিশ্বকাপে তোমাকে দেখতে চাই। এটাই আমার শেষ কথা।’

এই নির্দেশে আন্তরিকতার ছোঁয়া আঁচ করা মাশরাফি তখনই বুঝে গিয়েছিলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে অধিকারবোধ থেকে কথাগুলো বলেছিলেন, তখনই আমি বুঝে গেছি তামিমের না করার উপায় নেই। আর সত্যি বলতে কি, ওর বয়স কত যে অবসর নেবে? ও যদি ভাবত যে ফুরিয়ে গেছে, তাহলে ভিন্ন কথা। কিন্তু সে রকম তো কিছু না। আমি যা সন্দেহ করেছিলাম, ঠিক তা-ই। ভিন্ন চাপ ওকে সিদ্ধান্তটা (অবসরের) নিতে বাধ্য করেছিল। সেই সমস্যা আর হবে না, আশা করি। বোর্ড সভাপতিও সে আলোচনায় ছিলেন। সবাই সম্মত হয়েছেন। আর কোনো সমস্যা আছে বলে মনে হয়নি। তামিমকে আমি চিনি। ওকে জোর করে কনভিন্স করা যায় না। তবে পুরো আলোচনার যতটুকু সময় ছিলাম এবং শেষ হওয়ার পর ওকে দেখেই বুঝে গেছি, খুশি মনেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে তামিম।’

কিন্তু এমন ঘটা করে অবসরের ঘোষণা দেওয়ার পরদিন সিদ্ধান্ত বদল ১৬ বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের তামিম ইকবাল এবং বাংলাদেশ দলের অভ্যন্তরীণ পরিবেশের জন্য কতটা ভালো হলো? উত্তরে মাশরাফির ‘কাটার’, ‘সমস্যা হবে কেন? প্রথমত ক্রিকেটার তামিম ফুরিয়ে যায়নি। দলের কেউও ওকে বের করে দেয়নি। ও যে সিদ্ধান্তটা নিয়েছে, তার কারণ কোনো ক্রিকেটার নয়। এটা দলের সবাই জানে। দ্বিতীয়ত, যে সমস্যা তামিমকে সিদ্ধান্তটা নিতে বাধ্য হয়েছিল, তা আর হবে না। সেটা তো আগেই বলেছি। আমি কোনো সমস্যা দেখি না। বরং এটা খুব ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ সেই ‘সমস্যা’ হেড কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের পর এই সমস্যা আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে না হয়তো।

প্রধানমন্ত্রী জাতীয় আবেগের কথাও তামিমকে স্মরণ করিয়েছেন, ‘তুমি অবসর নিয়েছ শুনে লোকজন রাস্তায় কান্নাকাটি করছে। এটা দেখেও কি তুমি বুঝতে পারো না? চলার পথে অনেক সমস্যা আসবে। তবে সেসব জয় করে এই মানুষগুলোর জন্য তোমাকে কাজ করতে হবে, এটা মনে রাখবে।’

এমন আরো অনেক কথা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যা তামিম ইকবালের ওপর গত মাস ছয়েকে ভর করা প্রবল চাপ সরিয়ে নিয়েছে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি