প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশকে আরও উন্নত ও সমৃদ্ধ করাই আমাদের লক্ষ্য। জাতির পিতা নৌবাহিনীকে নিজের হাতে গড়ে তুলেছিলেন। আজকে আমরা আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে যুদ্ধ জাহাজ নিজেরাই প্রস্তুত করার সক্ষমতা অর্জন করেছি। নৌবাহিনীর ঘাঁটি এমন একজন ব্যক্তির নামে করেছি যার বাংলাদেশের মানুষের জন্য অবদান রয়েছে।
আজ বুধবার (১২ জুলাই) দুপুরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নৌবাহিনীর নবীন নাবিকদের প্রশিক্ষণ ও এভিয়েশন সুবিধাসংবলিত ঘাঁটি বনৌজা শের-ই-বাংলা, চারটি জাহাজ ও চারটি ল্যান্ডিং ক্রাফটের উদ্বোধনের সময় এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন। অনুষ্ঠানে বানৌজা শের-ই-বাংলার কমিশনিং করা ছাড়াও খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মিত চারটি পেট্রোল ক্রাফট ও চারটি ল্যান্ডিং ক্রাফট ইউটিলিটিরও (এলসিইউ) কমিশনিং করেন তিনি।
তিনি বলেন, শের-ই-বাংলা একে ফজলুল হক। তিনি এই ভূখণ্ড থেকে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত করে দিয়েছিলেন। এ দেশের কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের জন্য তিনি কাজ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌবাহিনীকে আরও সক্ষম করে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি। গত ১৪ বছরে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী যাতে আরও সক্ষমতা অর্জন করতে পারে, আন্তর্জাতিক মানসম্মান হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে, জাতির পিতা যে আমাদের প্রতিরক্ষা নীতিমালা করে গিয়েছিলেন, তারই ভিত্তিতে ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের সমুদ্র সম্পদ অর্থনৈতিক কাজে লাগানোর জন্য ব্লু ইকোনমি আমরা গ্রহণ করেছি। তার মাধ্যমে আমাদের আর্থসমাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। আমরা চাই আমাদের দেশ আরও এগিয়ে যাক। আমাদের নৌবাহিনী অনেক সক্ষমতা অর্জন করেছে। তারা আন্তর্জাতিকভাবে সুনাম অর্জন করছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে বিশ্বমানের নৌবাহিনী গড়ে তুলতে আমাদের পদক্ষেপ আরও একবার এগিয়ে যাবে।
এর আগে বাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল ঘাঁটির অধিনায়ক কমডোর এম মহব্বত আলীর হাতে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন। এরপর বাহিনীর রীতি অনুযায়ী নামফলক উন্মোচন করা হয়।
নৌবাহিনী আধুনিকায়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষিত রাখতে সরকার নৌবাহিনীকে আধুনিক ও সুসজ্জিত করেছে।
নৌবাহিনীর নতুন ঘাঁটি বনৌজা শের-ই-বাংলার কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, সমুদ্রে নিরাপত্তা ও দুর্যোগ মোকাবিলায় এই ঘাঁটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
নৌবাহিনীর মিডিয়া উইং জানায়, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের পায়রাবন্দরসহ উপকূলীয় এলাকার সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় এই ঘাঁটি নৌবাহিনীর সক্ষমতা বাড়াবে। পাশাপাশি নৌ সদস্যদের যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সামুদ্রিক সম্পদ রক্ষায়, বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকার দেশি ও বিদেশি ব্যবসা-বাণিজ্য নিরাপত্তায় একটি বিশেষায়িত ও স্থায়ী ঘাঁটির গুরুত্ব বিবেচনায় ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ বাস্তবায়নে এই ঘাঁটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর ‘বানৌজা শের-ই-বাংলা’ ঘাঁটির নামফলক উন্মোচিত হয়। আধুনিক সব সুবিধায় ‘বানৌজা শের-ই-বাংলা’ ঘাঁটিতে গড়ে তোলা হয়েছে নবীন নাবিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এর পাশাপাশি অপারেশনাল কার্যক্রমের সুবিধার্থে প্রশাসনিক ভবন, এভিয়েশন সাপোর্ট ও হ্যাঙ্গার সুবিধা মাল্টিপারপাস শেড, বিভিন্ন রিপেয়ার ও মেইন্টেন্যাস ওয়ার্কশপ রয়েছে। এছাড়া ঘাঁটিতে এভিয়েশন সুবিধা, ডাইভিং স্যালভেজের কমান্ডো পরিচালনা সম্বলিত ইউনিট, নৌবাহিনী স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল রয়েছে।
সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেডে নির্মিত চারটি পেট্রোল ক্রাফট নৌবহরে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলে সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকার সুরক্ষা আরও সুদৃঢ় হবে। এছাড়া নবনির্মিত এলসিইউগুলো আশ্রয়ণ-৩ প্রকল্পের আওতায় বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে চট্টগ্রাম থেকে ভাসানচরে স্থানান্তর ও তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছে। পাশাপাশি এলসিইউগুলো জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সব ধরনের সহায়তা কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে। নবনির্মিত এসব জাহাজ ও ঘাঁটি কমিশনিংয়ের মাধ্যমে এ অঞ্চলে অবৈধ মৎস্য আহরণ রোধ, চোরাচালান দমন, মানবপাচার রোধ, জলদস্যুতা ও মাদকপাচারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।