টানা ১২ বছর, মোট ১৭ বছরের প্রধানমন্ত্রী তিনি। বাংলাদেশ তো বটেই, উপমহাদেশে সবচেয়ে বেশি সময় সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতা তার ঝুলিতে। সততা, ন্যায় নিষ্ঠা, পরিশ্রমে তিনি এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা রাষ্ট্রনায়ক। শেখ হাসিনার একটি অনন্য গুন হলো, অকপটে সত্য কথা বলা। স্পষ্টবাদী হিসেবে তার সুনাম সর্বজনবিদিত। যেটা বিশ্বাস করেন তা রাখঢাক না রেখেই বলেন। আগে বলা হতো এটা রাজনীতিবিদ হিসেবে শেখ হাসিনার বড় সমস্যা। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তিনি প্রমাণ করেছেন, তার এই ভনিতাহীন সত্য প্রকাশের সাহসই তার শক্তি। আর এজন্যই জনগণ তাকে বিশ্বাস করে আপন ভাবে। এদেশের প্রায় সব মানুষ বিশ্বাস করে শেখ হাসিনা যা বলেন তা করেন।
শেখ হাসিনা যা বিশ্বাস করেন, তা অকপটে বলেন। সর্বশেষ করোনার শুরুতেই আমরা দেখলাম, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অকপটে পিপিই, মাস্ক কেলেঙ্কারির কথা বললেন। এটার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, মানুষ সত্য জানতে পারে। সত্য নিয়ে কোন লুকোচুরি হয় না। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই এখন যেন অন্যরকম হয়ে গেছেন। জনগণের মধ্যে বহুল চর্চিত অনেক বিষয়ে তিনি একদম নীরব। সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিলো আল জাজিরার প্রতিবেদন ‘অল দ্যা প্রাইম মিনিস্টারস ম্যান’ শিরোনামে বহুল বিতর্কিত তথ্যচিত্রটি। এই তথ্যচিত্রটি প্রচারের পরদিন শুধু প্রধানমন্ত্রী একনেকের সভায় বলেছেন ‘যখনই বাংলাদেশের মানুষ সুখে থাকে, তখনই এদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়।’ ব্যস এটুকুই। এর বাইরে ঐ প্রতিবেদন নিয়ে কোনো কথাই বলেননি আওয়ামী লীগ সভাপতি।
সাম্প্রতিক সময়ে নোয়াখালী আওয়ামী লীগের জন্য বড় মাথা ব্যাথার কারণ। নোয়াখালীর এতো ঘটনার পরও আওয়ামী লীগ সভাপতি এ নিয়ে কোনো কথা বলেন নি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা না খোলা নিয়ে এখন বিতর্ক চলছে। প্রধানমন্ত্রী এ সম্পর্কে তার মতামত কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার পক্ষে যুক্তিগুলো বলেননি। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) সম্প্রতি জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের সুপারিশ করেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রথম ব্যক্তি যিনি, ৭৫ এর নারকীয় ঘটনায় জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতার কথা উচ্চারণ করেছিলেন। সে সময় আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই আঁতকে উঠেছিলেন। তারা বলেছিলেন ‘জিয়ার সমালোচনা করলে আওয়ামী লীগের ভোট কমবে।’ কিন্তু শেখ হাসিনা তার বিশ্বাস থেকে ঐ সময়ে এ কথা বলেছেন। এখন আওয়ামী লীগের নেতারা সবাই এ নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু জিয়ার বীর উত্তম খেতাব বাতিল নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি এখন পর্যন্ত সরাসরি কোনো মন্তব্য করেন নি। তাই রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন উঠেছে, শেখ হাসিনা কি বদলে গেলেন? স্পষ্টবাদী রাখঢাকহীন শেখ হাসিনার স্বাভাবিক রূপ কেন পরিবর্তন হলো?
সূত্র : বাংলা ইনসাইডার