রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগীর ভিড়ে কোনো কোনো হাসপাতালে দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট। সেবা দিতে হিমশিম অবস্থা চিকিৎসকদের। মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দাবি, পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণেই আছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, গত জানুয়ারি থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৭ হাজার ৫৪৭ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৫৫ জনের।
এমন পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলছেন বিশেষজ্ঞরা। শঙ্কা জানিয়েছেন মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ডেঙ্গুর এমন আগ্রাসী পরিস্থিতির জন্য দায়ী স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য বিভাগের অদূরদর্শিতা এবং অব্যবস্থাপনা। তারা বলছেন, ডেঙ্গু রোগীর প্রাথমিক সেবা নিশ্চিত করতে নগরে সিটি করপোরেশনের চিকিৎসাকেন্দ্র না থাকা, মশা নিধনে দীর্ঘমেয়াদি কর্ম পরিকল্পনার অভাব, এডিস মশার বিস্তার ও রোগী ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতার কারণে শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য এ রোগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে ১ হাজার ৭৫৫ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত মারা যাওয়া ৯ জনের মধ্যে ঢাকার ৮ জন এবং ঢাকার বাইরের একজন। এখন পর্যন্ত এ বছর ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যু হয়েছে ১৫৫ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় যত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, এর বেশিরভাগই ঢাকার বাইরের। এ সংখ্যা ৯১০ জন। আর ঢাকার ৮৪৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, বর্তমানে ৫ হাজার ৯৩৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ঢাকাতেই ৩ হাজার ৫২২ জন, আর বাকি ২ হাজার ৪১৫ জন ঢাকার বাইরে। গত ১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ২৭ হাজার ৫৪৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, এর মধ্যে ছাড়া পেয়েছেন ২১ হাজার ৪৫৫ জন। জুলাইয়ের শুরু থেকে ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নেয়। এ মাসের ২০ দিনে ১৯ হাজার ৫৬৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১০৮ জন মারা গেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গত ১০ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, জুলাই মাস পর্যন্ত এত রোগী আর কখনও হাসপাতালে ভর্তি হয়নি। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর পরিমাণও এত ছিল না।
এ বছর দেশের ৬৪টি জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়েছে। এর আগে কেবল ২০১৯ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া গিয়েছিল।