বাংলাদেশে বিদ্যুতের আর কোনো সমস্যা থাকবে না জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা ওয়াদা দিয়েছিলাম সব ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেব, আজকে আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি।
আজ বুধবার (২ আগস্ট) বিকেলে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিভাগীয় মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, কয়লা ও গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ নিয়ে কয়েকদিন কষ্ট হয়েছে। এখন আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন আরো বৃদ্ধি করেছি। ভারত থেকে কিনে আনছি। নেপাল থেকেও কিনে নিয়ে আসব। বিদ্যুতের কোনো সমস্যা থাকবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, গাইবান্ধায় বিশাল সোলার তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। ২০০ মেগাওয়ার্ড বিদ্যুৎ সেখান থেকে আসবে। সেই ব্যবস্থা করেছি। আমি খালি হাতে আসিনি। আপনাদের জন্য উপহার নিয়ে এসেছি। কিছুক্ষণ আগে আমি কতগুলো প্রকল্প উদ্বোধন করেছি। যাতে প্রত্যেকটা উন্নয়ন তরান্বিত হয় তার ব্যবস্থা করেছি। একই সঙ্গে এতো প্রকল্প কেউ করে দিয়েছে কী না আমি জানি না।
তিনি বলেন, অনেক সংগ্রামের পথ বেয়ে অনেক আন্দোল করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছি। মানুষ এখন শান্তিতে ভোট দিতে পারে। ভোট দেওয়ার জন্য ভোটার তালিকাও করেছি। আমারা প্রত্যেক এলাকায় উন্নয়নের জন্য কাজ করেছি। নারীদের জন্য কাজের সুবিধা করে দিয়েছি। আমাদের কাজের লক্ষ্য দেশের ভাগ্য পরিবর্তন করা, দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নতি করা।
শেখ হাসিনা বলেন, বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছি। বাংলাদেশের মানুষ। বাংলাদেশের জনগণ। এটাই তো আমার সংসার। এটাই আমার আপনজন। আপনাদের মাঝে খুঁজে পাই বাবা-মায়ের স্নেহ। কাজেই প্রয়োজন হলে এই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বাবার মতো জীবন দিতেও আমি প্রস্তুত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিলে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। আওয়ামী লীগ আমলে কোনও মঙ্গা হয়নি। ২০০১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে দুই হাতে টাকাপয়সা লুট করে। সে ও তার ছেলেরা মিলে এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। ২০০৯ সালে আমরা ক্ষমতায় আসার পর মানুষের আর কোনও কষ্ট হয়নি।
রংপুর তথা উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে রংপুরবাসীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আমি খালি হাতে আসিনি। আমি কতগুলো প্রকল্প উদ্বোধন করেছি। আপনাদের উন্নয়ন যাতে ত্বরান্বিত হয়, সে জন্য এগুলো করেছি। বগুড়া, রংপুর, সৈয়দপুর গ্যাস লাইন করছি। আপনাদের দীর্ঘদিনের গ্যাসের দাবি ছিল। আমরা প্রত্যেক এলাকার উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের প্রতিটি কাজের লক্ষ্য হচ্ছে দেশের মানুষের উন্নতি ও ভাগ্যের পরিবর্তন করা। একটা কথা বলতে পারি, এই অঞ্চলে আর কখনও দুর্ভিক্ষ ও মঙ্গা দেখা দেবে না। আমরা সেভাবেই উন্নয়ন করছি।
লালমনিরহাটে বঙ্গবন্ধু এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রসঙ্গ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, একদিন আমাদের মানুষ চাঁদেও যাবে। প্লেন বানাতে পারবে। সেই শিক্ষা সেখানে হবে।
২৭টি প্রকল্প উদ্বোধনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এগুলো রংপুর বিভাগের জন্য আমার উপহার হিসেবে দিয়ে গেলাম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বাংলায় কোনও মানুষ ঠিকানাবিহীন থাকবে না, সেটাই আমাদের সিদ্ধান্ত। আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাক। এখানে একটা গোষ্ঠী আছে। যারা সব সময় বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলে। জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে সেই খেলা শুরু হয়েছিল। বারবার ক্ষমতা দখল, হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। আমরা অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আন্দোলন করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি। মানুষ শান্তিমতো এখন ভোট দিতে পারে। ভোট দেওয়ার জন্য আমরা ছবিসহ ভোটার তালিকা করেছি। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স করেছি। শান্তিপূর্ণভাবে যাতে ভোট দিতে পারে, সেই ব্যবস্থা নিয়েছি। আমাদের দরকার দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা।
রংপুরবাসীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, এখানকার জমি সোনার জমি। ভালো ফসল হয়। সবার কাছে আমার অনুরোধ, আমাদের মাটি আছে, উর্বর মাটি, সোনার ফসল ফলে। আমাদের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। যে যা পারেন চাষ করবেন। আপনারা গাছ লাগাবেন। অন্তত চারটি করে গাছ লাগাবেন। যার যতটুকু জমি আছে ফসল ফলাবেন। কোনও জমি যেন ফেলে রাখা না হয়।
প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি খাতের মাধ্যমে রংপুর সুগারমিল চালু করার প্রতিশ্রুতি দেন। ভবিষ্যতে রংপুর বিভাগের জন্য একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার প্রতিশ্রুতিও দেন। রংপুর বিভাগসহ প্রতিটি বিভাগের জন্য খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণের উদ্যোগের কথা জানান।
তিনি বলেন, আমি চাই দেশের প্রতিটি অঞ্চলে সবকিছু সমানভাবে উন্নতি হোক। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। উন্নত বিশ্বও হিমশিম খাচ্ছে। সবকিছুর দাম বেড়েছে। এই অবস্থায়ও আমরা বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছি। আওয়ামী লীগ আসে মানুষের উন্নতি করতে। এই এলাকার আরও উন্নয়নের জন্য যেসব প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলাম। তা ছাড়া দেশের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি, করে যাবো।
বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাস্তায় চলন্ত বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। এরা কি মানুষের জাত? এরা মানুষের জাত নয়। ক্ষমতায় থাকতে লুটপাট করেছে। আর ক্ষমতার বাইরে থেকে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। রাস্তাঘাট কেটে দিয়েছে। মানুষ হত্যা করেছে। নতুন রেল কিনেছি পুড়িয়ে দিয়েছে। বাস কিনেছি পুড়িয়ে দিয়েছে। ওই খালেদা জিয়া ও তার কুপুত্র তাদের জিয়া জ্বালাও-পোড়াও ধ্বংস করতে পারে। এরা মানুষের কল্যাণ করতে জানে না। দেশের টাকা পাচার করে বিদেশে নিয়ে এখন সেই টাকা ব্যবহার করে যাচ্ছে। কোত্থেকে আসে এত বিলাসিতা! সেটাই আমার প্রশ্ন। দেশের মানুষের টাকা আত্মসাৎ করেছে।
তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানের মামলায় শাস্তির প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের দুর্নীতির মামলা। এই মামলা তো আমরা করিনি। তাদের প্রিয় ইয়েস উদ্দিন-ফখরুদ্দিন করেছে। সেই মামলায় তারা শাস্তি পেয়েছে। তারা দেশ ধ্বংস করে। আমরা সৃষ্টি করি।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া নিজে ফেল করা বলে ভাবে কেউ পাস করবে না। এ জন্য শিক্ষার হার তারা কমিয়ে ফেলেছে। আমরা আবার উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষার হার বাড়িয়েছি। আমরা বিনামূল্যে বই দিচ্ছি। কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করে দিচ্ছি।
অনেকেই ক্ষমতায় ছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকি কেউ এই রংপুরের উন্নয়নে কাজ করেনি। এই নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আসলে কাজ হয়। নৌকা মার্কা ছাড়া হয় না। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছেন। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আজ দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে। হতদরিদ্র মাত্র ৫ শতাংশ। এটাও থাকবে না। যারা এক বেলা খাবার পেতো না, এখন দুই-তিন বেলা খাবার সুযোগ হয়েছে। দেশের কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষ প্রত্যেকের ভাগ্য পরিবর্তনে আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে। যার সুফল আপনারা পাচ্ছেন। দেশের মানুষ পাচ্ছে।
সমাবেশে আসা মানুষকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, এই মাঠ ছোট বলে অনেকে দূরে বসে আমার কথা শুনছেন। আপনাদের চোখের দেখায় দেখতে পাচ্ছি না। তবে আপনারা আছেন আমার হৃদয়ে। হৃদয় দিয়ে আপনাদের ভালোবাসা উপলব্ধি করি।
রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে মহাসমাবেশে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি, আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান। সমাবেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক একে এম শাহাদাত হোসেন।
এর আগে দুপুর ২টায় তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি রংপুর সেনানিবাস হেলিপ্যাডে পৌঁছায়। এরপর সড়কপথে সার্কিট হাউজে যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সভায় অংশ নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
এর আগে দুপুর সোয়া ১২টায় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে জনসভার কার্যক্রম। রংপুরের ঐতিহাসিক জিলা স্কুল মাঠ নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় ভরে যায়। মাঠ ছাড়িয়ে প্রধান সড়কের দুদিকে অবস্থান নেন বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা। নানা রঙের পোশাক আর বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে গান গেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তারা।