নিউজ ডেস্ক,
গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে একবার নয়, পরপর দুবার দল থেকে বহিষ্কৃত করা হয়েছিল। সর্বশেষ গত মে মাসে তাঁর মা জায়েদা খাতুনকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী করার জন্য তাকে স্থায়ী বা আজীবন এর জন্য হিষ্কৃত হন। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন এ আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে ভোটে হারিয়ে গাজীপুর সিটির মেয়র নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীরের মা। জাহাঙ্গীরের চোখ এখন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির পদের দিকে।
জাহাঙ্গীরের চাওয়া পূর্ণ হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলে আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকে মনে করেন। কারণ, দলের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা থেকে তাঁকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। এরপরই গত মাসে তিনি বিপুল সংখ্যাক লোক নিয়ে এসেছিলেন ঢাকায় আওয়ামী লীগের ‘শান্তি সমাবেশে ।সর্বশেষ ঢাকার প্রবেশমুখে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির দিনও টঙ্গী-আবদুল্লাহপুর এলাকায় জাহাঙ্গীরের অনেক তৎপরতা দেখা গেছে।
গত ১৫ বছরের শাসনামলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নানা কারণে দলের দায়িত্বশীল বেশ কয়েকজন নেতা, সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের দল থেকে বহিষ্কার করেছে আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানানো হয়। এর মধ্যে আলোচিত হলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান, সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী, গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, ক্যাসিনো–কাণ্ডে নাম জড়ানো ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাট। দলীয় কোন্দলে গত বছর বরিশালের সংসদ সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ নাথকে দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর দলের জাতীয় কমিটির সভায় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে সাময়িক বহিষ্কার হওয়া দলীয় নেতাদের সাধারণ ক্ষমা করার সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ। তখন শতাধিক নেতা ক্ষমা পান। এরপরও অনেকে আবেদন করেছেন।
গত মাসে ঢাকায় জাহাঙ্গীর আলম আ.লীগের ‘শান্তি সমাবেশে’ বিপুলসংখ্যক লোক নিয়ে আসেন পদ ফিরে পেতে।
যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগসহ সহযোগী সংগঠনের যেসব নেতা বহিষ্কৃত হন কিংবা দলীয় পদ হারান, তাঁদের বিষয়টি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ক্ষমার আওতায় পড়েনি। সহযোগী সংগঠনগুলোও তাঁদের বহিষ্কার প্রত্যাহার করেনি। তবে বহিষ্কৃত নেতারা দলে অবস্থান ফিরে পাওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পদ-পদবি না থাকলেও দলের ভেতর পদ হারানো বা বহিষ্কৃত নেতাদের প্রভাব রয়েছে। সেটি বিবেচনায় নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
গত ১৫ বছরে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে আওয়ামী লীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কারের পর দলে ফিরে নেওয়া এবং সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার উদাহরণ আছে।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সরকারবিরোধী আন্দোলন বিবেচনায় নিয়ে বহিষ্কৃত ব্যক্তিদের ক্ষমা করা হয়েছে। সেই ভোটের পর পরাজিত আজমত উল্লাকে গত ৪ জুন গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তাঁর নিয়োগের আদেশে বলা হয়েছে, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে কর্মসম্পর্ক পরিত্যাগ করতে হবে। এই শর্তেই তাঁকে তিন বছরের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে। আজমত উল্লা এখনো গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি।
আজমত উল্লার গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হওয়ার ক্ষেত্রে ‘অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে কর্মসম্পর্ক পরিত্যাগের’ যে শর্ত রয়েছে, এই অংশকে নিজের সুযোগ হিসেবে দেখছেন জাহাঙ্গীর আলম। এই সুযোগ নিয়ে তিনি এখন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন।
দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন দলের জাতীয় কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্তে একসঙ্গে শতাধিক বহিষ্কৃত নেতাকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর আরও যেসব আবেদন এসেছে, সেগুলোর কিছু বিবেচনাধীন।