রাজধানীর শ্যামপুরে এক সন্তানের মাকে বিষপ্রয়োগে হত্যার অভিযোগ। গত ৩১শে জুলাই সোমবার রাতে শ্যামপুর,ছলিমুল্লাহ রোড, বড়ইতলা এলাকায় আব্দুর রহিম মোল্লার টিনসেড বাড়ির ভাড়া বাসায় ফারজানা আক্তার জোতিকে বিষ প্রয়োগে মৃত্যু বরণ করানো হয়।বিষ প্রয়োগের পর ফারজানা আক্তারের স্বামী রবিউল স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগে রেখে পালিয়ে যায়। বিভিন্ন মাধ্যমে ফারজানার বাবা জিয়াউর রহমান খবর পেয়ে হাসপাতালে জরুরী বিভাগের তার মেয়েকে সিঁড়ির নিচে পড়ে থাকতে দেখে তাৎক্ষণিকভাবে জরুরী বিভাগে নিয়ে ভর্তি করেন। বিষ প্রয়োগ অবস্থায় দেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ফারজানাকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
বাবা জিয়াউর রহমান দিক-বেদিক না পেয়ে ফারজানার স্বামীকে খুঁজতে থাকে একপর্যায়ে ফারজানার স্বামী রবিউলকে হাসপাতালের বাইরে দেখতে পেয় ঘটনার বিস্তারিত জিজ্ঞেস করলে, ফারজানার স্বামী রবিউল ইসলাম (বাবু) বলেন,তার দুলাভাই আফজাল, ছেলে দেলোয়ার ও রাজীব এবং রবিউলের বোন আফজালের স্ত্রী শিউলি এ ঘটনায় জড়িত ছিলেন। রবিউল আরো বলেন, আমার বাসায় গিয়ে আমার স্ত্রীকে তারা জোরপূর্বক বিষ প্রয়োগ করায় ।
এ বিষয়ে আফজালের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে সে জানান, আমি,আমার স্ত্রী ও ছেলেরা এই ঘটনার সাথে কোন ভাবে সম্পৃক্ত না। ঘটনার দিন আমি আমার ছোট ছেলেকে বিয়ে করানোর জন্য মেয়ে দেখতে সপরিবারে কুমিল্লায় ছিলাম। আপনার শ্যালক রবিউলের বক্তব্য আপনারা বিষ পানে তার স্ত্রীকে হত্যা করেছেন এবিষয়ে জানতে চাইলে আফজাল বলেন, এটা সে কোন ভাবে বলতে পারে না,যদি বলে থাকে তাঁকে দিয়ে জোর করে বলানো হয়েছে। আমরা যে ঘটনার দিন ঢাকার বাইরে ছিলাম তার সকল তথ্য প্রমাণ আমার কাছে আছে।
এ বিষয়ে ফারজানার বাবা জিয়াউর রহমান জানান,আমার মেয়েকে কিশোরী অবস্থায় অভিযুক্ত বিবাদী রবিউল ও তার বোন, বোন জামাই ও তাদের ছেলেরা তুলে নিয়ে গিয়ে রবিউলের সাথে বিয়ে দেয়।বিয়ের পর থেকে বিবাদী রবিউল ও তার পরিবারের লোকজন আমার মেয়ে ফারজানাকে যৌতুকের দাবিতে ও কারণে-অকারনে শারীরিক- মানসিক ভাবে অত্যাচার করতো। ইতিপূর্বে মেয়ের সুখের জন্য ফারজানা স্বামীর গ্রামের বাড়িতে ১১ কাটা জমি ক্রয় করে দেই। এছাড়াও বিভিন্ন সময় ফারজানাকে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য ফারজানার মা রবিউলকে হাজার হাজার টাকা দিয়েছেন।
জোতির বাবা সংবাদিকদের আরো জানান, মেয়ে ফারজানাকে সুখে রাখার জন্য রবিউলকে ৫ লাখ টাকা দিয়ে একটি দোকান ও একটি অটো রিক্সা কিনে দিয়েছি ।কিন্তু, সে নেশা-পানি করে সবকিছু নষ্ট করে ফেলে এবং এ বিষয়ে ফারজানা কিছু বললে, তাকে তার আত্মীয়-স্বজনদের সাথে নিয়ে নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো। গত দুই বছর পূর্বে ফারজানাকে কাউকে কিছু না বলে পরিবারের পরামর্শে অন্যত্র বাসা নিয়ে চলে যেতে বাধ্য করে । সে আরো জানান, তিন বৎসর পূর্বে বিবাদী আমার মেয়ে ফারজানাকে কীটনাশক দিয়ে মারার চেষ্টা করেছিল, সেই ঘটনায় ফারজানার মামা টুটুল সামনে পড়ে যাওয়ায় ফারজানা বেঁচে যায়। এই ঘটনায় আমার ধারণা রবিউল ও তার আত্মীয়-স্বজনরা মিলে আমার মেয়ে ফারজানাকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করেছে। আমি এর সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দাবি করছি।
এই ঘটনার সরজমিনে তদন্ত গিয়ে জানা যায়, ফারজানার বর্তমান ঠিকানায় সে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতো। সে গত ৩১ /৭/২০২৩ইং তারিখে আবুল খায়ের ভান্ডারীর টিনশেড ভাড়া বাসা থেকে আব্দুর রহিম মোল্লার বাসায় ভাড়া আসেন। ফারজানার পূর্বের ভাড়া বাসার প্রতিবেশী মনির ও তার স্ত্রী জানান, ফারজানা মেয়ে হিসেবে খুবই ভালো ছিল কিন্তু তার স্বামী রবিউল মেয়েটাকে কারণে-অকারণে নানাভাবে নির্যাতন করতো, এমনো ঘটনা ঘটেছে তাকে হাত-পা বেঁধে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতো রবিউল। রবিউলের কোন আত্মীয়-স্বজন এ বাসায় আসতো কিনা এবং তারা ফারজানাকে মারদোর করতো কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মনির দম্পতি জানান, মাঝে মাঝে রবিউলের মা এ বাসায় আসতো কিন্তু ভদ্রমহিলা খুব ভালো ছিল।ফারজানার উপর রবিউলের এই অমানুষিক নির্যাতনের বিষয়ে তিনিও ছেলেকে শাসন করতে চেষ্টা করতেন।
এছাড়া অন্য কোন আত্মীয়-স্বজন রবিউলের বাসায় আসছে কিনা আমরা জানি না। ফারজানা-রবিউলের বর্তমান ভাড়া বাসার পার্শ্ববর্তী ভাড়াটিয়া হানিফ জানান,রবিউল আমার মাধ্যমে আব্দুর রহিম মোল্লা বাড়িতে ৩১/৭/২০২৩ ইং তারিখে ভাড়া আসেন। আমি তাদের মালামাল আনতে সহযোগিতা করি কিন্তু রাতের বেলায় তাদের মধ্যে কি হয়েছে, কেন ফারজানা বিষ খেয়েছে বা খাওয়ানো হয়েছে এ বিষয়ে আমি বা আমার পরিবার কেউ কিছু জানিনা আর আমাদের বাড়ির মালিক আব্দুর রহিম মোল্লা সাহেব এখানে থাকেন না। ঘটনার দিন ফারজানাদের বাসায় অন্য কোন লোক এসেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে হানিফ ও তার স্ত্রী জানান, ফারজানাদের বাসায় অন্য কোন লোক এসেছে কিনা তা আমরা জানিনা। এ বিষয়ে কদমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রলয় কুমার সাহা জানান, গত ১/৮/২০২৩ ইং তারিখে এই ঘটনায় আমার থানায় বাদীর অভিযোগের ভিত্তিতে পেনাল কোড ৩০৬ ধারায় আত্মহত্যায় প্ররোচনা করার অপরাধে একটি মামলা রুজু করা হয়েছে (মামলা নং-০২) । আমরা এ মামলাটি যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। তদন্তে যে বা যারা এই ঘটনার সাথে যুক্ত থাকুক না কেন পত্যেককে আইন আমলে নিয়ে আসা হবে।