স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামানকে হত্যার হুমকি দিয়ে জামায়াতে ইসলামী তাদের নোংরা ও সন্ত্রাসী চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে।
বুধবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক এস এম মোস্তফা জামান গতকাল (মঙ্গলবার) রাতে আমার কাছে এসেছিলেন। তিনি সমস্ত ঘটনা বলেছেন। তিনি একজন চিকিৎসক হিসেবে সাঈদীর চিকিৎসা করেছেন। তারপরও তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এটা আমার কাছে আশ্চর্য লাগে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি, তারা (জামায়াত) যে নোংরা চিন্তা করে, তারা যে সবসময় সন্ত্রাসী চিন্তা করে, তারা যে সবসময় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চিন্তা করে, এটি তারই একটি প্রতিফলন। এ হুমকির মধ্য দিয়ে জামায়াত তা জানান দিয়েছে।
১৭ আগস্ট সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলার ঘটনা প্রসঙ্গে আসাদুজ্জামান খান বলেন, বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করার জন্য আপনারা জঙ্গিদের উত্থান দেখেছেন। বাংলা ভাই ও শাইখ আব্দুর রহমানের মতো অনেক জঙ্গি দেখেছেন। তৎকালীন সরকার (বিএনপি) তখন বলত এগুলো মিডিয়ার সৃষ্টি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আপনারাই দেখেছেন সত্যিকারের জঙ্গির উত্থান। সেভাবেই ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩টি জেলায় একযোগে বোমা হামলার ঘটনা ঘটায় জঙ্গিরা। এ হামলার মধ্য দিয়ে তারা জানান দিয়েছে যে দেশে জঙ্গি রয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, এখন আমি এটুকু বলতে পারি যে, জঙ্গি আমরা একেবারে নির্মূল করতে পারিনি, কিন্তু জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জঙ্গিগোষ্ঠীর কিছু কিছু ঘুমন্ত সেল এখনো রয়ে গেছে। তারা আত্মপ্রকাশ করার চেষ্টা করছে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা অত্যন্ত দক্ষ। তারা জঙ্গিবাদকে নিষ্ক্রিয় করছেন এবং যথাসময়ে জঙ্গিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর চিকিৎসা দেওয়া চিকিৎসক এস এম মোস্তফা জামানকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) রাতে এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ওই চিকিৎসক রাজধানীর ধানমন্ডি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। ধানমন্ডি মডেল থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোয়াজ্জেম হোসেন সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
জিডিতে ভুক্তভোগী চিকিৎসক জামান উল্লেখ করেন, তিনি বিএসএমএমইউতে হৃদরোগ বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। রোববার (১৩ আগস্ট) রাতে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী অসুস্থ অবস্থায় বিএসএমএমইউতে ভর্তি হন। বিএসএমএমইউয়ের হৃদরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক চৌধুরী মেশকাত আহমেদের তত্ত্বাবধানে ছিলেন সাঈদী।
সোমবার (১৪ আগস্ট) চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাঈদীর মৃত্যু হয়। চিকিৎসক জামান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিমের একজন সদস্য হিসেবে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করি। কিন্তু কতিপয় ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও ইউটিউবে বিভিন্ন আইডি থেকে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে ও হত্যার হুমকি দিচ্ছে।
জিডিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন, আমি বর্তমানে কতিপয় ব্যক্তিদের আচরণে ভীত-শঙ্কিত। কয়েকটি ফেসবুক ও ইউটিউব পেজের ব্যবহারকারী এবং তাদের অনুসারী ব্যক্তিরা যেকোনো সময় আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদের খুন জখমসহ বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে।
এ কারণে নিরাপত্তা চেয়ে থানায় একটি জিডি করেন তিনি। ধানমন্ডি থানায় জিডি দায়ের করার পর ভুক্তভোগী চিকিৎসক এস এম মোস্তফা জামান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা একজন সাধারণ রোগীকে যেভাবে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করি, তাকেও (সাঈদী) সেই চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তার চিকিৎসায় কোনো ধরনের ব্যত্যয় ঘটেনি। আমরা তাকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিয়েছি, কোনো রকম ভুল চিকিৎসা বা অপচিকিৎসার ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে, সাঈদীর চিকিৎসার বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে বুধবার (১৬ আগস্ট) বিকেল ৩টার দিকে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে বিএসএমএমইউ।