গাইবান্ধায় কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বিপ্লব প্রমানিক কে চাপা দিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যাওয়া ঘাতক ট্রাকটি জব্দ ও ঘাতক অবৈধ চালক জামাল মিয়া (৩৫) ,সহযোগী হেলপার মশিউর রহমান (২৯) ও ট্রাকটির মালিক ও ট্রাকের মুল চালক আনিছুর রহমান কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে গাইবান্ধা জেলা পুলিশ। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানাতে পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে ২৬ আগস্ট শনিবার সকালে জেলা পুলিশের আয়োজনে এক প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয় । এতে সার্বিক বিষয়ে তুলে ধরেন জেলা পুলিশ সুপার মো. কামাল হোসেন । এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো.ইবনে মিজান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) মোঃ ইব্রাহিম হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ-সার্কেল) ধ্রুব জ্যোতির্ময় গোপ বিপিএম, সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মাসুদ রানাসহ জেলা পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার অফিসারগণ ও স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দ।
এ প্রেস ব্রিফিংকালে জেলা পুলিশ সুপার মো. কামাল হোসেন জানান, গত ২৩ আগস্ট তারিখ ঘাতক ট্রাকটির মালিক মোঃ আনিছুর রহমান নিজেই উক্ত ট্রাক চালক হওয়া সত্ত্বেও বদলী হিসেবে একজন অপেশাদার, অদক্ষ্য,লাইসেন্স বিহীন মোঃ জামাল মিয়া নামে ব্যক্তিকে ট্রাকটি চালানোর জন্য প্রদান করিলে উক্ত জামাল মিয়া রংপুর হতে আলু লোড করে ভোর রাত্রীতে অর্থাৎ ২৪ আগস্টে আলু বোঝাই ট্রাকটি বালাসীঘাটে আনলোড করে,এরপর ভোর ৬ টার সময় খালি ট্রাক নিয়ে পূণরায় রংপুরের উদ্দেশ্যে রওনা করে। এরপর পথি মধ্যে সকাল অনুমান ০৬.২৭ ঘটিকার সময় পুরাতন জেলা খানা মোড়ের পুলিশ ক্যাফের সামনে গাইবান্ধা গোলচত্ত্বর রাস্তায় গোল চত্ত্বরে ট্রাফিক নিয়ম না মেনে ভুল পথে বেপরোয়া ও দ্রুত গতিতে ট্রাক চালিয়ে যাওয়ার সময় কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্য কং/৯৯৫ বিপ্লব প্রামানিককে তার ডিউটিতে নিয়োজিত থাকা অবস্থায় চাপা দিলে ট্রাকটির চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তখন ঘাতক ট্রাকটি দ্রুত গতিতে পুরাতন ব্রীজ দিয়ে সুন্দরগঞ্জ অভিমুখে পালিয়ে যায়। এ বিষয়ে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে প্রাথমিক ভাবে ট্রাকটি সনাক্ত করা হয় এবং তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার সাথে জড়িত আসামীদের ও ঘাতক ট্রাকটি সনাক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ইং ২৫/০৮/২০২৩ তারিখে রংপুর মহনগরের বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করে ঘাতক ট্রাকের ড্রাইভার ১। মোঃ জামাল মিয়া (৩৫), সহযোগী হেলপার ২। মোঃ মশিউর রহমান (২৯), ট্রাকের মালিক ৩। মোঃ আনিছুর রহমান (৪৪)কে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞসাবাদে তারা গাইবান্ধা জেলার পুরাতন জেলাখানা মোড়ে কর্তব্যরত একজন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যকে চাপা দিয়ে হত্যা করার কথা স্বীকার করে। গ্রেফতারকৃত আসামীদের দেখানো ও সনাক্ত মতে ঘাতক ট্রাকটি রংপুরের মাহিগঞ্জে মোঃ হারুন (৩০) এর গ্যারেজের ভিতর হইতে উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়। আসামীরা উদ্ধারকৃত ট্রাকটির রং পরিবর্তন করার জন্য উক্ত গ্যারেজে রেখেছিল বলে জানায়। উদ্ধারকৃত ট্রাকটির রেজিঃ নং-ঢাকা মেট্রো-ট-২০-৪০৯৩। আসামীদেরকে আদালতে সোর্পদ করা হয়েছে। এঘটনায় সড়ক পরিবহণ আইন ২০১৮ এর ধারা-৯৮/১০৫ মোতাবেক গাইবান্ধা সদর থানার দায়েরকৃত মামলা নং-৩৯, তারিখ-২৪/০৮/২০২৩, জিআর-২৮৬/২৩ ।
গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলো রপুরের মাহিগঞ্জ থানার সর্দারটারী গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে ১। মোঃ জামাল মিয়া (৩৫), সহযোগী আসামী হেলপার মাহিগঞ্জের ক্ষুদ্র রংপুর গ্রামের মো: আজিজ মিয়ার ছেলে ২। মোঃ মশিউর রহমান (২৯) ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানার উত্তর মরুয়াদহ গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে ট্রাকের মালিক ও মূল চালক ৩। মোঃ আনিছুর রহমান (৪৪)।
উল্লেখ্য, ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল/৯৯৫ মোঃ বিপ্লব প্রামানিক, (বিপি-৭৪৯৫০০৫৩৬৩) সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর থানার তারগাছি গ্রামের মৃত আসমত আলী পুত্র। সে বর্তমানে সদর ট্রাফিক, গাইবান্ধা পৌর শহরে কর্মরত অবস্থায় শহরের বড় মসজিদের নিকট সুন্দরগঞ্জ মোড়ে ভোর ৬ টা হতে ডিউটি করছিল। ভোরে ৬ টার পর বালাসি ঘাটের দিক হতে আসা ঘাতক খালি ট্রাক বেপরোয়া গতিতে এসে সুন্দরগঞ্জের দিকে মোড় নিয়ে যাওয়ার সময় মোড়ে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বিপ্লব কে চাপা দিয়ে দ্রুত গতিতে সুন্দরগঞ্জের দিকে পালিয়ে যায়। এতে ট্রাফিক কনস্টেবল বিপ্লব ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করেন। তার অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে জেলা পুলিশসহ গাইবান্ধার সর্বস্তরের মানুষ । তারা ঘাতক চলেকসহ সহযোগীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানান।