মানুষের আয়ের একটি অংশ প্রতিদিন চলে যায় মেডিসিন খরচে।আমাদের দেশে সব পণ্যের ভেজালের সাথে এখন মানুষের জীবনরক্ষাকারী ওষুধেও ভেজাল ও নকল করা হচ্ছে।স্বাস্থ্য রক্ষা করতে ঔষধ সেবনে হচ্ছে এখন হিতে বিপরীত। রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভেজাল ঔষধ সেবনের কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে সাধারণ মানুষ। দিন দিন সমস্যা আরো প্রকট হয়ে উঠছে। বয়স্ক এবং শিশু মৃত্যুর হারও বেড়ে কয়েকগুণ।ভেজাল ওষুধ তৈরির কারবারি ও বিক্রেতাদের যথাযথ শাস্তি না হওয়াই এর কারণ বলে মনে করছে সাধারণ মানুষ।প্রয়োজনীয় মনিটরিং ও কার্যকর শাস্তির ব্যবস্থা না থাকায় ভেজালকারীরা বেপরোয়া।যে সকল কোম্পানি ভেজাল ঔষধ বানান তাদের কাছে এখন মানুষের জীবনের থেকে টাকার দাম বেশি।যেসব কোম্পানি নকল ও ভেজাল ওষুধ তৈরির দায়ে অভিযুক্ত সেগুলোই ঘুরেফিরে এ তৎপরতায় লিপ্ত। ভেজাল ও নকল ওষুধের কারণে অনেক সময় রোগী সুস্থ হওয়ার বদলে হয়ে পড়ছে আরো অসুস্থ।বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আসল হোতারা থেকে যায় ধরা ছোঁয়ার বাহিরে।
এছাড়াও রয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ বিক্রির হরহামেশা ঘটনা বিভিন্ন ফার্মেসি গুলোতে।ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের মাধ্যমে বেশ কিছু ফার্মেসিকে মোটা অংকের জরিমানা করা হলেও কিছুদিন পর থেকে তারা করছে সেই একি কাজ।অভিযান চালালেও বন্ধ করা যাচ্ছে না ভেজাল ওষুধের দৌরাত্ম্য।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বে ১৫ শতাংশ ওষুধই ভেজাল।
তৎপরতা বেড়েছে আয়ুর্বেদিক ঔষধে ভেজালের।নকল,ভেজাল,মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ, ভুল ঔষধের জন্য প্রাণহানি সহ অনেক ঘটনাই এখন চোখে পড়ে পত্র -পত্রিকা খুল্লে।মানুষ বাধ্য হয়ে এখন ঔষধ সেবন করে ঠিকই কিন্তু সংশয় কাঁটাতে পারছেনা কোন ভাবেই।শুধু একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, এই ঔষধ সেবনে সুস্থ হবে নাকি অসুস্থতা বাড়বে।
ঢাকার মিটফোর্ড এলাকার ওষুধ বাজার নকল, ভেজাল, মানহীন ওষুধের কেন্দ্র হয়ে ওঠার খবর প্রায় সময় বিভিন্নজন গণমাধ্যমে আসে।কিন্তু দোকানীর উল্টো অভিযোগ করে, যে সকল কোম্পানি ভেজাল ঔষধ তৈরী করে তাদের কোম্পানি কেন বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে না?
ভেজাল ঔষধ মানবদেহে স্লো পয়জন এর মতো কাজ করে।কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানুষ জানেও না তারা যেটাকে জীবন রক্ষা করার জন্য সেবন করছে সেটাই তাদের জীবনহানির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
রাজধানীর মগবাজারে আদ-দ্বীন হাসপাতালে একজন রোগী ডাক্তার দেখালে তাকে আদ-দ্বীন ফার্মাসিউটিক্যালসের ক্যালসিয়াম এ & ডি এই ঔষধ খাওয়ার পরামর্শ দেন।পরবর্তীতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই রোগী হাসপাতালের সামনে ফার্মেসি থেকে ক্যালসিয়াম এ & ডি ঔষধের কোটা এবং যাবতীয় বাকী ঔষধ ক্রয় করেন।উল্লেখিত,ওই রোগী কুমিল্লা থেকে ডাক্তার দেখাতে আসেন এবং ঔষধ নিয়ে আবার কুমিল্লা চলে যান।যখন ঔষধ খাবেন দেখেন যে,ক্যালসিয়াম এ & ডি এর ঔষধের কোটা খোলা এবং ৩০ টি ঔষধের জায়গায় ২৪ টি ঔষধ আছে।যদিও তিনি জানান, ঔষধের মেয়াদ ছিল বিধায় তিনি আর কৌটার মুখ খুলে চেক করেননি।এখন প্রশ্ন হচ্ছে,বাকি ৬ টি ঔষধ কে খেলো?হাসপাতালে রোগীরা খেয়ে আর লাগবে দেখে কি ফার্মেসিতে ঔষধটা ফেরত দিয়েছে,আর অর্ধেক দামে পাওয়ায় দোকানদারও অনায়াসে রেখে দিয়েছে?নাকি কোম্পানি থেকেই এমন দিয়েছে?প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়।এগুলো খতিয়ে দেখার বিষয়।
ভেজাল ঔষধ উৎপাদন বন্ধে ভেজাল বিরোধী অভিযান গুলোর তৎপরতা বাড়াতে হবে।সেই সাথে বাড়াতে হবে জনসচেতনতা, ঔষধ ক্রয়ের আগে মেয়াদোত্তীর্ণ কিনা দেখে নিতে হবে,কৌটা ঔষধ খোলা কিনা এগুলো যাচাই করতে হবে।ভেজাল ঔষধের কারণে আর একটি প্রাণও না ঝড়ুক।