অনেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা নিতে দেরি করছেন, এতে এডিস মশাবাহী এই রোগে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ জন্য জ্বরে আক্রান্ত হলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মন্ত্রী।
আজ সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। চীন থেকে আসা ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট হস্তান্তর উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ডেঙ্গুতে বেশি মৃত্যুর কারণ জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, গতকাল একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ৯ হাজার রোগী হাসপাতালে রয়েছে। এ পর্যন্ত ৬৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। অধিকাংশ মৃত্যুর কারণ হলো চিকিৎসা নিতে দেরি হচ্ছে। আমরা রোগীদের আহ্বান করছি, জ্বর হলেই ডেঙ্গু পরীক্ষা করান এবং দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে জানিয়ে জাহিদ মালিক বলেন, আমাদের যতটুকু দায়িত্ব আছে আমরা সেটি পালন করে যাচ্ছি। যেখানে ডাক্তার লাগবে সেখানে ডাক্তার দিচ্ছি, নার্স দিচ্ছি। যেখানে মশা বেশি সেখানেও কাজ করা হচ্ছে। তবে মূল অ্যাকশন সিটি করপোরেশনকেই নিতে হবে। আমরা সেই উদ্যোগ দেখতে চাই। সারা বছর ভালোমানের সঠিক পরিমাণ ওষুধ স্প্রে করা প্রয়োজন বলে মনে করি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মশা একবার উড়ে গেলে তো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। লার্ভা পর্যায়ে মশাকে ধ্বংস করতে পারলে আগামী দিনে ডেঙ্গু কম থাকবে।
তিনি বলেন, শুধু যে মৌসুমে ডেঙ্গু দেখা দিচ্ছে, তখনই কেবল স্প্রে করলাম, সারাবছর স্প্রে করলাম না, তাতে কাজ হবে না। সেজন্য সারাবছর কাজ করতে হবে। যে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে, সেটা সঠিক মান ও পরিমাণের হতে হবে, যাতে ওষুধগুলো কার্যকর হয়ে মশা মারা যাবে।
ডেঙ্গ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, গত বছর একটু কম ছিল, এ বছর অনেক বেশি বেড়ে গেছে। আমরা চিকিৎসা দেওয়ার কোনো ঘাটতি রাখিনি। আমাদের হাসপাতালে বেড তৈরি করা হয়েছে, পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। সেখানে কিটের কোনো অভাব নেই। আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র কিট দিচ্ছে বলে আমরা নিচ্ছি। আমাদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য স্যালাইনের সংকট সরকারি হাসপাতালে নেই।
তিনি বলেন, এরই মধ্যে সিটি করপোরেশনে ডেঙ্গু কিছুটা কমেছে। আমরা দেখেছি অন্য জেলায় অনেক বেড়েছে। আগে যা ছিল তা প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি পৌঁছেছে। সবগুলো জেলায় বাড়তি এবং প্রত্যেক জেলায় পরীক্ষা করে দেখা গেছে ডেঙ্গুর লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। যারা আক্রান্ত হয়েছে বেশিরভাগই ঢাকা থেকে যারা গেছে তারা আক্রান্ত হয়ে অন্য জেলায় গেছে, বাড়ি গেছে। সেখানে আবারও মশার কামড়ে সেটা ছড়িয়েছে।
জাহিদ মালেক বলেন, মশা যে পর্যন্ত না কমবে সে পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী কমবে না এবং মৃত্যুও কমবে না। কমাতে হলে সবাই মিলে আমাদের কাজ করতে হবে। আমরা সেই চেষ্টাই করছি।
তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি ডেঙ্গুটা বেশরিভাগই বড় বড় বিল্ডিংয়ের নিচে, আশপাশের ড্রেন-নালা এবং পরিত্যক্ত বিভিন্ন পাত্রে জমা হয়েছে। বেশির ভাগ দেখা গেছে ফুলের টবে আছে। এসব জায়গা পরিষ্কার হওয়া দরকার এবং পরিত্যক্ত পাত্রগুলো পরিষ্কার করা দরকার। আমাদের নিজেদের বাড়ি যেটা আছে সেটা স্প্রে করতে হবে, পরিষ্কার করতে হবে। বাইরের যেসব ডোবা-নালা আছে সেটা সিটি করপোরেশন পরিষ্কার করছে, আমরা মনে করি আরও পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, যেসব কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে সে কীটনাশকগুলো যাতে ইফেকটিভ হয়, ভালো হয় এবং মশা যাতে মরে, মশার লার্ভা যাতে মরে সেই ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা দরকার এবং নিশ্চিত হওয়া দরকার। ঢাকা সিটি করপোরেশনে ওনারা করছেন, কমছে। তাতে বোঝা যায়, যে মশা কমে আসছে। রোগীর সংখ্যা এখন একটু কমে আসছে। অন্যান্য জেলাতে স্প্রে বেশি করে করতে হবে। পৌরসভা এবং অন্যান্য সিটি করপোরেশনে সজাগ হতে হবে, আরও বেশি একটিভ হতে হবে। তবেই আমাদের কমবে।
জাহিদ মালেক বলেন, শুধু যে মৌসুমে ডেঙ্গু দেখা দিচ্ছে, তখনই কেবল স্প্রে করলাম, সারাবছর স্প্রে করলাম না, তাতে কাজ হবে না। সে জন্য সারাবছর কাজ করতে হবে। যে ওষুধটা দেওয়া হচ্ছে, সেটা সঠিক মান ও পরিমাণের হতে হবে, যাতে ওষুধগুলো কার্যকর হয়ে মশাটা মারা যাবে। আর ঢাকায়ই পূর্ণ মনোযোগ দিলে হবে না, ডেঙ্গু পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। কাজেই সব পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে সেখানেও অনেক কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ঢাকার মতো অন্য জেলা ও সিটি করপোরেশনে পদক্ষেপ নিতে হবে। বাড়িগুলো পরিষ্কার করতে হবে।
তিনি বলেন, পাকা বাড়িগুলোতে ডেঙ্গু বেশি হচ্ছে। যেখানে পাত্রে পানি জমে থাকে। আমরা সে কারণে এ বার্তা দিতে চাই, নিজেরাই নিজেদের রক্ষা করতে হবে, সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে দাবি করেছেন আপনি। এটি কীসের ভিত্তিতে করেছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এসেছে কথাটি বলেছি, কারণ ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় রোগীর সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক কমে এসেছে। এখন ৮০০ রোগী, এর আগে দেড় হাজার পর্যন্ত আমরা পেয়েছি। কিন্তু ঢাকার বাইরের অন্য জেলাগুলোতে বেড়েছে, সেখানে কমেনি। আমি আগেও এ কথা বলেছি।
করোনা মহামারিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যেভাবে ঢালাওভাবে কাজ করেছে, সেইভাবে ডেঙ্গুর বেলায় করা যায় কিনা। আবার সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু বাড়লে জরুরি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে জাহিদ মালেক বলেন, আমাদের যতটুকু দায়িত্ব আছে, সেটা পালনের চেষ্টা করছি। আমাদের প্রথম দায়িত্ব হলো, চিকিৎসা দেওয়া। সেই ব্যবস্থা আমরা করেছি। আমরা চিকিৎসক, সেবিকাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। প্রয়োজনীয় ওষুধের ঘাটতি নেই, শয্যা আমরা বাড়িয়েছি। পাশাপাশি, সচেতনতামূলক কাজও করে যাচ্ছি। অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। তারপরে অ্যাকশন তো সিটি করপোরেশনকে নিতে হবে। সেই অ্যাকশনটুকু সময়মতো দেখতে চাই। মশা একবার উড়ে গেলে তো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। লার্ভা পর্যায়ে মশাকে ধ্বংস করতে পারলে আগামীতে ডেঙ্গু কম থাকবে। সারা বছর এ কার্যক্রম চলমান থাকা প্রয়োজন। সিটি করপোরেশনকে সারাবছর করা প্রয়োজন- বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, যেসব কীটনাশক ব্যবহার করা যাচ্ছে, সেগুলো যাতে ভালো হয়, মশা যাতে মরে, লার্ভা যাতে মরে, সেই ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা দরকার এবং নিশ্চিত করা দরকার। সিটি করপোরেশন যেভাবে কাজ করছেন, তাতে বোঝা যায়, মশা কমে আসছে। যেহেতু ঢাকায় এখন রোগীর সংখ্যা কমে আসছে। কিন্তু অন্য জেলাতে স্প্রে করতে হবে বেশি করে। পৌরসভাসহ অন্য সিটি করপোরেশনগুলোকে আরও সজাগ ও সক্রিয় হতে হবে। তবেই মশা কমবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে সিটি করপোরেশনে ডেঙ্গু কিছুটা কমেছে। আমরা দেখেছি অন্য জেলায় অনেক বেড়েছে। আগে যা ছিল তা প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি পৌঁছেছে। সবগুলো জেলায় বাড়তি এবং প্রত্যেক জেলায় পরীক্ষা করে দেখা গেছে ডেঙ্গুর লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। যারা আক্রান্ত হয়েছে বেশিরভাগই ঢাকা থেকে যারা গেছে তারা আক্রান্ত হয়ে অন্য জেলায় গেছে, বাড়ি গেছে। সেখানে আবারও মশার কামড়ে সেটা ছড়িয়েছে।
চীনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা চীন সরকার, তাদের প্রতিনিধি এবং সিনোভ্যাকের প্রতি কৃতজ্ঞ। তারা আমাদের ২০ হাজার কিট দিয়েছে। আপনারা জানেন যে চায়না সরকার আমাদের সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। করোনার সময় চীন থেকে সিনোভ্যাকের বেশ কিছু ভ্যাকসিন আমরা পেয়েছিলাম। এছাড়া ফেস মাস্কসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র পেয়েছি। তাদের দেশে যখন প্রথম দিকে করোনা আক্রান্ত হয়, তখন আমরাও তাদের অনেক জিনিসপত্র পাঠিয়েছিলাম।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, চীন সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। প্রতি বছরই আমাদের দেশে ডেঙ্গু দেখা দেয়। গত বছর ডেঙ্গু কিছুটা কম থাকলেও এ বছর রোগীর সংখ্যা অনেক। চীন আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র, তারা কিট দিচ্ছে বলেই নিচ্ছি। তবে আমাদের কিটের সংকট নেই।