পদ্মানদীর কোলঘেঁষে দাঁড়িয়ে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ১৩ নং চর ঘোষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গত ২০ বছর ধরে অব্যাহতভাবে ভেঙে চলেছে বিদ্যালয় এলাকার নদীপাড়। এরইমধ্যে বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
বর্তমানে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে আবারও শুরু হয়েছে ভাঙন। এতে খেলারমাঠসহ বর্তমান ভবনটিও হুমকিতে পড়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে নদীপাড়ে পাকা বাঁধ নির্মাণ বা বিদ্যালয়টি অন্যত্র স্থানান্তরের দাবি জানান শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীরা।
তারা অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নদীপাড় ভেঙে চলেছে। তবুও ভাঙনরোধে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই। এতে হুমকিতে পড়েছে বিদ্যালয়টিসহ কৃষিজমি, ঘরবাড়ি ও স্থানীয় বাসিন্দারা। বিদ্যালয়ে দিনে দিনে কমছে শিক্ষার্থী ভর্তি ও উপস্থিতি।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মমতাজ পারভীন জানান, তিনি বিদ্যালয়টি তদারকি করে থাকেন। নদী ভাঙতে ভাঙতে বিদ্যালয়ের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি ভাঙনরোধে এবং বিদ্যালয়টি নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করার জন্য নিয়মিত উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়ে আসছেন।
জানা গেছে, পদ্মানদীর কুলঘেঁষে ১৯৬৬ সালে প্রায় তিনবিঘা জমির ওপর ১৩নং চর ঘোষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। এটিই চর সাদিপুর ইউনিয়নের প্রথম বিদ্যালয়।
প্রায় ২০ বছর ধরে নদীপাড়ের প্রায় তিন কিলোমিটার অংশ ভেঙে গেছে। এতে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বিদ্যালয়ের প্রথম পাকা ভবন, খেলারমাঠ, মসজিদসহ কয়েক শত বিঘা কৃষিজমি ও বসতভিটা। ২০০০ সালে বিদ্যালয়ের ভবন পুনর্নির্মাণ করা হয়।
আরও জানা গেছে, ভাঙতে ভাঙতে বর্তমানে বিদ্যালয়টি নদীর কিনারায় দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও বর্ষা মৌসুমে বিদ্যালয়ের চারিদিকে থৈথৈ পানি থাকে। যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
এই আতঙ্কে গত দশ বছর ধরে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির হার কমেছে। আবার ভর্তি হলেও উপস্থিতি কম হয়। একসময় বিদ্যালয়ে ৩৫০ থেকে ৪০০ জন শিক্ষার্থী থাকলেও বর্তমানে রয়েছে মাত্র ১১৬ জন।
দদ চর ঘোষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয় ভবনটির সামনে প্রায় দশ ফিট দূরে পদ্মানদীর কোল। ভবনের পশ্চিম ও পূর্বে প্রায় ২০০ ফিট দূরে পদ্মানদীর কোলে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। ভবনের পেছনে উত্তরদিকে প্রায় ৫০০ ফিট দুরে নদীর আরও একটি মরা কোল। যা বর্ষায় প্লাবিত থাকে। বিদ্যালয়ের সংকীর্ণ মাঠে খেলা করছে শিক্ষার্থীরা। অসুস্থতাজনিত কারণে আসেন নি প্রধান শিক্ষক।
এসময় পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী হুমাইরা মিম বলে, খেলার মাঠ খুবই ছোট। অনেক সময় খেলার সামগ্রী ও শিক্ষার্থীরা নদীতে পড়ে যায়। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। আরেক ছাত্র নাইম হোসেন বলেন, পানিতে ডুবে যাওয়া ও ভেঙে পড়ার আতঙ্কে অনেকেই বিদ্যালয়ে আসে না। ভর্তিও হতে চায়না। সে ভাঙনরোধে বাঁধ নির্মাণের দাবি জানায়।
সহকারি শিক্ষক মনিরুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনটি নদীগর্ভে চলে গেছে। বর্তমান ভবনটিও নদীর কাছাকাছি। খেলার মাঠ নেই। এসব কারণে দিনদিন বিদ্যালয় ধ্বংসের পথে। কমেছে শিক্ষার্থীর ভর্তি ও উপস্থিতি। সেদিন উপস্থিতি মাত্র ৮৫ জন। তার ভাষ্য, অতীতে ৩৫০ থেকে ৪০০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হত।
স্থানীয় বাসিন্দা চাঁদ আলী আক্ষেপ করে বলেন, ২০ ধরে নদীরপাড় ভেঙেই চলেছে। মসজিদ ও বিদ্যালয়ের একটি ভবন পানিতে চলে গেছে। আবার ভাঙন শুরু হয়েছে। কিন্তু কর্তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
চর সাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মেছের আলী খাঁ বলেন, নদীর কারণে তার ইউনিয়নের মানুষ দুঃখ – দুর্দাশার শেষ নেই। ঘোষপুর বাজার এলাকায় জায়গা আছে। তিনি বিষয়টি নিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন।
এ বিষয়ে ইউএনও বিতান কুমার মন্ডল বলেন, নদীর কারণে চরসাদিপুর একটি রিমোর্ট এলাকায় পরিণত হয়েছে। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান ।