বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ঢাকা সফররত ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষ হয়েছে।
সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর), দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কে বৈচিত্র্য নিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে আজ সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উভয়ের মধ্যকার বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শুরুর আগে উভয়ে ব্যক্তিগত কিছু কথাবার্তা বলেন।
এর আগে, সকাল ১০টা ২০ মিনিটে ফরাসি প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছান। তাঁকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আগে শেখ হাসিনা ও ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর একটি ফটো সেশনেও অংশ নেন।
দুই নেতার উপস্থিতিতে কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়। পরে তারা যৌথ প্রেস ব্রিফিং করেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ছাড়ার আগে ম্যাক্রোঁর সেখানে রক্ষিত দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
এর আগে সকালে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং পরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন।
১৯৯০ সালের ২০-২৪ ফেব্রুয়ারি সাবেক ফরাসী প্রেসিডেন্ট ফাঁসোয়া মিতেরা বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। এর পর দ্বিতীয়বারের মতো কোন ফরাসী প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরে এলেন। যদিও বাংলাদেশে এটি প্রথম সফর।
দু’দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক ১৯৯০ সালের শুরু থেকে এই পর্যন্ত অনেক দূর এগিয়েছে।
বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে মোট বাণিজ্য ২১০ মিলিয়ন ইউরো থেকে আজ ৪.৯ বিলিয়ন ইউরোতে উন্নীত হয়েছে এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে ফ্রান্স পঞ্চমতম দেশ।
ফরাসি কোম্পানিগুলো এখন ইঞ্জিনিয়ারিং, জ্যালানি, এরোস্পেস এবং ওয়াটার সেক্টরসহ বিভিন্ন খাতে জড়িত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁখোর আমন্ত্রণে ২০২১ সালের নভেম্বরে ফ্রান্স সফর করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এর আগে বলেন, বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তন এবং নিয়ন্ত্রিত অভিবাসনের মতো বিষয়গুলো ছাড়াও বাংলাদেশ ও ফ্রান্স দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা হবে।
বৈঠকে আরো দু’টি প্রধান বিষয় জলবায়ু পরিবর্তন এবং রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়েও আলোচনা হয়।
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান শেষে ম্যাঁখো দুই দিনের সরকারি সফরে রোববার সন্ধ্যায় ঢাকায় আসেন।
বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী রোববার রাত ৮টা ১০ মিনিটে ফুলের তোড়া দিয়ে ম্যাঁখোকে স্বাগত জানান। ম্যাঁখোকে লাল গালিচা সংবর্ধ্বনা দেয়া হয়। এ সময়ে উভয় দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়।
সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান এবং ২১ বার তোপধ্বনি দেয়া হয়।
ম্যাঁখো এ সময়ে গার্ড পরিদর্শন করেন।
বিমানবন্দর থেকে তিনি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে যান। সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক তার সম্মানে আয়োজিত একটি আনুষ্ঠানিক নৈশভোজে তিনি অংশ নেন।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট পরে স্থানীয় ব্যান্ড জলের গানের মিউজিক্যাল শো উপভোগ করতে ধানমন্ডি লেকে যান।
এ সময় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।আজ বিকেলে ফরাসি প্রেসিডেন্টের ঢাকা ত্যাগের কথা রয়েছে। বাংলাদেশ ও ফ্রান্স আশা করছে, ফরাসি প্রেসিডেন্টের সফর দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।